আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম: তবুও ঈদ সম্প্রীতির, ঈদ মিলনের

20

 

মুসলমানদের জন্যে ঈদের প্রবর্তন ঘটেছে আজ থেকে প্রায় চৌদ্দশ বছর আগে। সেই থেকে শুরু। পিছু হটেনি মুসলমান স¤প্রদায়। রমজানের চাঁদ দেখা গেলেই মুসলমানরা আল্লাহর উদ্দেশে সবাই আত্মসমর্পণ করে। শুরু হয়ে যায় তিরিশ দিনের সিয়াম সাধনার মাস। সঠিকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রোজা রাখা, কোরান তেলাওয়াত করার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার আদেশ নিষেধ পালনে শিশুকিশোর ছেলে মেয়ে, বড়ো ছোট সবাই উদগ্রীব হয়ে ওঠে। শান্তির ধর্ম হিসেবে রাতে খতম তারাবীতে ধনী গরীব এক কাতারে শরীক হয়। মাঝরাতে সেহরী খেয়ে সুবেহ সাদেক থেকে মাগরীব পর্যন্ত আল্লাহর রাহে সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে আল্লাহর মুসলমানরা নিজেদের আনুগত্য প্রকাশ করে। একমাস সকল সাধনার পরে ঈদের মূল সুর বেজে ওঠে যখনই শাওয়াল এর চাঁদ ওঠে আকাশে। পাক ভারত উপমহাদেশে আমাদের বাঙালি জাতির অন্যতম প্রধান কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে /এলো খুশীর ঈদ।/আপনাকে তুই বিলিয়ে দে / শোন আসমানী তাগিদ।’/ গানটি ধ্বনিত হয় আকাশে বাতাসে। মিডিয়াগুলো ওই একটি ইতিহাস খ্যাত গানের সুরধ্বনিতে ঈদের আগাম বার্তা প্রকাশ করে। ছেলে বুড়ো সবার মধ্যে শুরু হয়ে যায় ঈদের ধুম। শিশুরা মাতোয়ারা হয়ে এখানে সেখানে হৈ চৈ হট্টগোলে মাতিয়ে রাখে প্রকৃতিকে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর থেকেই মুসলমানদের জীবনে ঈদের সওগাত নেমে আসে। আমাদের প্রিয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৬২৪ খৃষ্টাব্দের ১শাওয়াল ছাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করেন। ্এরপর থেকে সারা মুসলিম জাহানের ঈদুল ফিতরের সূচণা হয়। ঈদুল ফিতর প্রাচীন বাংলার উৎসবগুলোর মধ্যে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে। যদিও এদেশে ঈদ প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে এর গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। তবুও বলা যায়, আজ আমরা অধীর আগ্রহে যে ঈদ উৎসবের আমেজের জন্য অপেক্ষা করে থাকি এদেশে সে ইতিহাসের সূচনা হয় প্রায় আশি থেকে একশ বছর আগে। ফরায়জী আন্দোলনের পর মুসলমানরা ইসলাম সম্পর্কে জানতে পায়। ওই সময়ের ইংরেজ আমলে ক্রীসমাসই ছিলো প্রধান উৎসব। মুসলমানরা যখন রাজনীতি ও বিদ্যাবুদ্ধির দিক সচেতন থেকে হয়ে ওঠে তখন থেকেই ঈদ উৎসব গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে পাক ভারত বিভক্তির পর বাংলাদেশে দু’টি ঈদই রাষ্ট্রের পৃষ্টপোষকতায় জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়। সেই থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের শুভেচ্ছা বিনিময়, বিবৃতির মাধ্যমে সকল নাগরিকের মধ্যে ঈদ উৎসব হয়ে ওঠে আলাদা মর্যাদায় মহিমান্বিত। মূলত ফিতর শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ভাঙ্গা। এই দিন সারা মুসলিম জাহান একত্রিত হয়ে রোজা ভঙ্গের দিনকে উৎসবে পরিণত করার মাধ্যমে আনন্দময় ভুবন রচনা করে। সকল মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরুক করে গলায় গলা মিলিয়ে একই উঠোনে দাঁড় করিয়ে দেয়ার মধ্যেই মুসলমানরা অপার আনন্দ লাভ করে।
বাংলার মরমী কবি লালন শাহ বলেছেন, শরিয়তের কাজ,রোজা আর নামাজ, ঠিব শরীয়ত বলছো কারে । ইসলাম ধর্মে শরীয়তের বিধান নামাজ পড়া, রোজা রাখা। প্রকৃত শরীয়ত পালনের জন্য রোজা যেমন মুসলমানদের জন্য আল্লাহতায়ালা ফরজ করেছেন ঠিক সেভাবে সিয়াম সাধনার মাস হিসেবে আখ্যা দিয়ে আল্লাহ পবিত্র রমজান মাসে এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে পরিশুদ্ধ আতœ সংযমের কথা বলেছেন। একটি মাস নামাজ পড়ার পাশাপাশি সুবহে সাদেক থেকে সন্ধ্যে অবধি শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই নয় সকল প্রকার কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সত্যিকার সিয়াম সাধনা করতে হবে। তারপরই ঈদের সার্থকতা আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠবে।
পাক ভারত উপমহাদেশে এই যে ঈদের আয়োজন, একে জাতীয় উৎসবে পরিণত করার পেছনে আমাদের জাতীয় নেতা শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরল ইসলাম, সংগীত শিল্পী কে মল্লিক, আব্বাস উদ্দিন, কবি জসীম উদ্দিন,সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর অসামান্য অবদান রয়েছে। অবিভক্ত পাক ভারতের পূর্ববঙ্গের পর স্বাধীন বাংলাদেশে এসে ঈদ উৎসব আমাদের জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। কবি নজরুল ঈদকে কেন্দ্র করে অসাম্প্রদায়িত চেতনা ও সাম্যের বাণী নিয়ে প্রচুর গান রচনা করেছেন। যেগুলো আজো আমাদের জন্য অমর সৃষ্টিরূপে প্রতিভাত হয়েছে। ইসলামি শরীয়ত অনুসারে সীমার মধ্যে থেকে আনন্দ প্রকাশ করাকে সুন্নত হিসেবে অভিহীত করা হয়েছে। বিশিষ্ট গবেষক শামসুজ্জামান খান উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলাদেশের ঈদোৎসব এখন আর নিছক একটি ধর্মীয় উৎসব নয় বা পবিত্রতার আবরণে মোড়া রিচ্যুয়াল নয়। এ উৎসব এখন একটি বড়ো রকমের সাংবাৎসারিক বহুমাত্রিক ধর্মীয় এবং আর্থসামাজিক- সাংস্কৃতিক কর্মকাÐও’ এ উৎসবকে ঘিরে সকল সম্প্রদায়ের নিরবিচ্ছিন্ন অংশগ্রহণ ও বেড়েছে। বিশাল জনগোষ্ঠীর ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে এর সঙ্গে সামাজিক সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক সংযোগ ঘটেছে অবিস্মরণীয়ভাবে। সেখানে ধর্মীয় চেতনার পাশাপাশি ভ্রাতৃত্ববোধের সম্মিলন ঘটেছে অনেক বেশি। ঈদের কোন ভেদাভেদ নেই, কী ধনী কী গরিবে। ঠিক তেমনি নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার ছোঁয়া আজাকাল গ্রামীণ সংস্কৃতিতেও ভর করেছে। বলা চলে সেকালে গ্রামের ঈদ আর শহুরে ঈদের মধ্যে কিছু পার্থক্য তো ছিলোই । মূলত বাংলাদেশ হলো বার মাসে তের পার্বণের দেশ। সা¤প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছিন্ন করে এদেশে হিন্দু মুসলমান সহ অন্যান্য স¤প্রদায়ের লোকজন ঈদে, পূজা, খৃষ্টানদের বড়দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, চৈত্র সংক্রান্তি, নববর্ষ সহ নানা উৎসব একসাথে সহাবস্থান করে সম্পন্ন করেছে। এখনো এর ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতিবছর উৎসবের আমেজ প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় আনন্দের সুবাতাস। স্বাধীনতার পর থেকেই সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় উৎসবগুলো প্রতিপালিত হয়ে এসেছে। দেখা গেছে, মুসলমানদের ঈদ উৎসবে যোগ দিয়ে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা ও আনন্দ ভাগ করে নেয়। এখানে ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রখ্যাত গবেষক ও সাহিত্যিক লেখক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বলেছেন,‘ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ”ঈদ মূলত আরবি শব্দ। তবে আমাদের জন্য পুরোটাই বাংলা হয়ে গেছে। মনে করি যে, সবারই তো জানা- ঈদ শব্দটি দিয়ে বোঝায় উৎসব। ধর্ম উদযাপনের আবরণে রয়েছে, থাকে বটে। তবে আগাগোড়াই উৎসবের আনন্দ-উল্লাস। আনন্দ কিসের; মানুষে মানুষে মিলনের। আমরা তাবৎ দ্ব›দ্ব, মনোমালিন্য ঈর্ষা এইসব বিস্মৃত হয়ে যাই, সব ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে পারস্পরিক মিলনের যত সব কিছু। তাই অবশ্য বছরে ঈদ মানুষ আমাদের কাছে বড় হয়ে ওঠে। যেখানে ছোটতে বড়তে কোন ভেদাভেদ নেই। বয়সের, বংশের, রক্তের, বর্ণের এমনকী ক্ষেত্র বিশেষে উত্তরাধিকারেও কোন ভেদাভেদ থাকে না।’ ঈদ মুসলমানের হলেও আমরা এখানে স্পষ্টভাবে মানুষের মধ্যে মহামিলনের সার্বজনীন উৎসব হিসেবে দেখে আসছি। উগ্র সাম্পদ্রায়িক পরিস্থিতি মাঝে মধ্যে আমাদের এই চেতনার মধ্যে চিড় ধরাবার চেষ্টায় খুব একটা রা করতে পারেনি আজো। যেটা বাঙালি মুসলমানদের চিরন্তন ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতায় অটুট আছো এখনো। ফলে ঈদ কেবল পার্থিব উৎসবের বিষয় নয়, বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ার সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ঈদোৎসব ধর্মীয় উৎসবের আঙ্গিক ছাড়িয়ে প্রত্যেক ধর্ম বর্ণ ও গোত্রের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে ঈদোৎসবকে ঘিরে সৃজনশীলতায় আচ্ছন্ন মানুষের পোশাক আশাক রুচি ও মানসিকতায় দারুণ পরিবর্তন সূচিত হতে থাকে। একসময়ের স্বনামধন্য ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ মেতে ওঠে ছেলেমেয়েদের ডিজাইন নিয়ে। সেই থেকে ফ্যাশনের সাথে গা লাগায় তারুণ্য। বিচিত্রার পর সাপ্তাহিক রোববার এরপর সেই ট্রেন্ড দেখল প্রজন্মের তরুণরা। আজকাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নানা ফ্যাশন হাউস, বুটিক হাউস কতো শত ডিজাইনার। কাপড় চোপড়ই নয়, গয়না-গাটি কোনকিছুতেই বাঙালি আজ পিছিয়ে নেই। সময়ের বিচারে পোশাক শিল্পে দাঁড়িয়ে গেছে অসংখ্য ব্রান্ড কোম্পানী। কেউ পিছয়ে নেই। দেশি দশের ব্যানারে বড়ো ফ্যাশন হাউসগুলো তো আছেই । সেইসাথে প্রথিতযশা ডিজাইনাররা মাতিয়ে রাখে ঈদ শপিংকে শত বর্ণে রঙে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রতিদিন আকর্ষণীয় নামে জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। ১৭ কোটি মানুষের দেশে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে সম্পৃক্ত হয়েছে। ঈদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক, বৈষয়িক গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। পোশাক আশাকের পাশাপাশি লোকজন এখন ঘর দোর সাজানোর জন্য নতুন নতুন আসবাবপত্র ফ্রিজ এলইডি টিভি, দামি দামি ক্রোকারিজ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা বেচার মধ্য দিয়ে সামাজিকতা অর্থনৈতিক লেনদেনে নিজেদের সম্পৃক্ত করে রেখেছে। যদিও বিগত দুবছর করোনাকালীন সবক্ষেত্রেই ঈদের আবহ ¤্রয়িমাণ হয়ে পড়েছিলো। জীবিকা বা অর্থনেতিক নিশ্চয়তার চেয়ে জীবন বাঁচিয়ে রাখাটাও সে সময় দায় হয়ে পড়েছিলো। এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বাভাবিক সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সহাবস্থানে ঈদের জৌলুস আবারো ব্যাপকতা পেয়েছে।
ঈদের প্রাক্কালেই দশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে ঈদের দিন থেকে পুরো নগর ফাঁকা হয়ে যায়। গ্রামবাংলায় ছুটে যাওয়ার যে জৌলসু তা থেকে বাঙালি মুসলমান সহ নানা ধর্মের মানুষকে বিচ্যূত করা যায়নি। শহুরে ঈদ মানে ফাঁকা নগর যানজট কোলাহল মুক্ত সুনসান পরিবেশ। শহর এবং গ্রামের দু‘জায়গাতে দু‘রকম ভাবে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় ঈদ উদযাপিত হয় বটে। তবে সব শিশুর কিশোর এবং বয়স্কদের মধ্যেএখনো কাজ করে মায়া মমতার বন্ধনে মিলে মিশে উদযাপনের প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দল বেঁধে ও ঘর থেকে ঘরে ছুটে যাওয়ার সেই সব চেনা জানা সরল দিনগুলো এখন অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে বলা চলে। গ্রাম গঞ্জের ঈদ আজো এতো বিলাসবহুল হয়ে ওঠেনি। সচরাচর গ্রামের লোকজন অধিকাংশই কৃষিজীবী। ফলে ঈদ পালন করতে হলে তাদের ফসল উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে হতো। কৃষকের ছেলেমেয়েরা ঘরে ফসল উঠলেই পরে ঈদের নতুন জামা কিনতে পারে। নইলে বছর ভেদে চাঁন রাতে ছেলেমেয়েরা পৃরনো জামাকাপড় নতুন করে কেঁচে অথবা ঘষে মেজে পরিষ্কার করে ঈদের উৎসবে মেতে ওঠার পর্ব সেরেছে। তবে গ্রামের ঈদে এখনে দেখা যায়, দল বেঁধে শিশু কিশোরদের দল ছুটে চলে এ পাড়া ও পাড়া, এ বাড়ী থেকে ও বাড়ীতে কিম্বা দূর গ্রামের কোন আতœীয় স্বজনের বাড়ীতে। ঈদ সেলামীর পাশাপাশি সেমাই, রান্না করা ভালো খাবার দাবার তো থাকছেই। এছাড়া, মজার ব্যাপার হলো গ্রামে ঈদের আয়োজনে থাকে নানা পণ্য ও খেলাধুলা সমাদৃত গ্রাম্য মেলা। এ মেলা বসে নদীতীরে, গ্রাম্যহাটে বটতলায়,স্কুল মাঠে মেলার মধ্যে থাকে লোকজ হাতের তৈরী নানা সামগ্রী নকশী করা পাখা, পুতুল, রঙিন হাঁড়ি, মিঠাই, বাঁশের বাঁশি, ষাঁড় ও মহিষের লড়াই ইত্যাদি। হা-ডু-ডু, ফুটবল, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবাঁধা, ক্রিকেট ইত্যাদি ম্যাচ আয়োজনে ঈদকে করে বড়োই প্রাণবন্ত। আরো আছে নাগরদোলা, ঘোড়ার দৌড়, নৌকা বাইচ, মারফতি ও মুর্শিদি গানের জমজমাট আসর। তবে, নগর সভ্যাতার ছোঁয়া পেয়ে আজকাল গ্রামের সেইসব ঐতিহ্যবাহী দৃশ্যাবলী অনেকটা ¤øান হতে বসেছে। আমরা আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধরে রাখতে চাই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক অর্থনৈতিক সংস্কৃতির অনস্বীকার্য যে মেলবন্ধন তা থেকে আমাদের পিছু হটার পথ নেই। একসময় গ্রামাবংলার শাশ্বত সেই রূপের সাহচর্যে থেকে সাধক গায়ক শাহ আবদুল করিম গেয়েছেন, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম…। আমরা সেই উৎসবমুখর সংস্কৃতিতে ফিরে যেতে চাই। মুসলমানদের এ ঈদ উৎসব যেন পরিণত হয়ে ওঠে মহামিললনের ব্যতিক্রমধর্মী উৎসবে। চেতনায়, বিকাশে ও সম্প্রীতির মূল শিকড়ে প্রোথিত হয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ঈদের সত্যিকার অহিংস উৎসবে মাতাতে চাই। সে প্রত্যয়ে ঈদ সবার জন্য সুন্দর মংগলময় হোক প্রত্যাশা এই।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, শিক্ষা ও উন্নয়ন গবেষক