আগের সীমানায় হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

46

রাহুল দাশ নয়ন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। আপাতত এই লক্ষ্যে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অধিক গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন নিয়ে আগেভাগেই মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনিক কাজ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রশাসনিক এলাকার সৃজন, বিয়োজন ও সংকোচন সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত ৭ জুন জেলা প্রশাসক ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে তথ্যাদি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে ২০ জুনের মধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্যাদি দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। চট্টগ্রামের কোনো সংসদীয় এলাকায় সীমানা জটিলতা কিংবা নতুন এলাকার সৃজন, বিয়োজন ও সংকোচন নেই বলে উপজেলা পর্যায় থেকে তথ্য পাঠানো হয়েছে ইসিতে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন পূর্বদেশকে বলেন, ‘সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি সরাসরি নির্বাচন কমিশন দেখভাল করছে। সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রশাসনিক এলাকার সৃজন, বিয়োজন ও সংকোচন সংক্রান্ত চিঠি আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। আমরা তথ্য পাঠিয়েছি। তবে সীমানা জটিলতা কিংবা সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখভাল করে। তারাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইসিকে জানাবেন।’
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের গেজেটের পর কোনো সীমানা পরিবর্তন হয়েছে কিনা তথ্য চাওয়া হয়। এ নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা পর্যায় থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও ১৫টি উপজেলার ১৬টি সংসদীয় আসনের তথ্য ইতোমধ্যে ইসির কাছে পৌঁছেছে। ধারণা করা হচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা ধরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও তা নির্ভর করছে জেলা প্রশাসনের সীমানা নির্ধারণী সভার সিদ্ধান্তের উপর।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী চট্টগ্রামে ১৬টি আসন নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই, চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম-৩ স›দ্বীপ, চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুন্ড উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উত্তর পাহাড়তলী ও উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড, চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ পাহাড়তলী ও জালালাবাদ ওয়ার্ড, চট্টগ্রাম-৬ রাউজান উপজেলা, চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা এবং বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম-৮ শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়ন ব্যতীত বোয়ালখালী উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩ নং পাঁচলাইশ, ৪ নং চান্দগাঁও, ৫ নং মোহরা, ৬ নং পূর্ব ষোলশহর ও ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড, চট্টগ্রাম-৯ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং বাগমনিরাম, ১৬ নং চকবাজার, ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া, ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া, ১৯ নং দক্ষিণ বাকলিয়া, ২০ নং দেওয়ান বাজার, ২১ নং জামালখান, ২২ নং এনায়েত বাজার, ২৩ নং উত্তর পাঠানটুলী, ৩১ নং আলকরণ, ৩২ নং আন্দরকিল্লা, ৩৩ নং ফিরিঙ্গিবাজার, ৩৪ নং পাথরঘাটা ও ৩৫ নং বক্সিরহাট ওয়ার্ড, চট্টগ্রাম-১০ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৮ নং শুলকবহর, ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী, ১২ নং সরাইপাড়া, ১৩ নং পাহাড়তলী, ১৪ নং লালখানবাজার, ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ, ২৫ নং রামপুর, ২৬ নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড, চট্টগ্রাম-১১ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮ নং পাঠানটুলী, ২৯ নং পশ্চিম মাদারবাড়ি, ৩০ নং পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩৬ নং গোসাইলডাঙ্গা, ৩৭ নং মুনিরনগর, ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্য হালিশহর, ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর, ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা, ৪১ নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড, চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া উপজেলা, চট্টগ্রাম-১৩ আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা, চট্টগ্রাম-১৪ চন্দনাইশ উপজেলা এবং সাতকানিয়ার উপজেলার কেওচিয়া, কালিয়াইশ, বাজালিয়া, ধর্মপুর, পুরানগড় ও খাগরিয়া ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম-১৫ লোহাগাড়া উপজেলা এবং চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাথে যুক্ত থাকা ছয় ইউনিয়ন ব্যতীত বাকিসব ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী উপজেলা নিয়ে ১৬টি সংসদীয় আসন গঠিত হয়েছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসনের সাথে বোয়ালখালীর একটি ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম-১৪ আসন চন্দনাইশের সাথে সাতকানিয়ার ছয়টি ইউনিয়ন যুক্ত থাকায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জটিলতা দেখা দেয়। একইভাবে সীতাকুন্ড ও হাটহাজারী আসনের সাথে চসিক এলাকার চারটি ওয়ার্ড নিয়ে নির্বাচনী হিসাবে বিভ্রান্তি দেখা যায়। এই চারটি আসনে নতুন করে সীমানা জটিলতা না হলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো একই সীমানায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইয়েদ মো. আনোয়ার খালেদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদেরকে নির্বাচন কমিশন থেকে একটি চিঠি দিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। হাটহাজারীতে নতুন করে কোনো ইউনিয়ন সৃজিত হয়নি। চসিক এলাকার যে দুটি ওয়ার্ড হাটহাজারীর সাথে যুক্ত আছে সেখানেও হয়নি বলে জেনেছি। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে চাওয়া তথ্য ইসিতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে জাতীয় নির্বাচনে সীমানা নির্ধারণ কেমন হবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্ত দিবেন।’