আগুন ট্র্যাজেডি শোকাহত আত্মার বিলাপ

85

ঢাকার চকবাজারে হয়ে গেল স্মরণ কালের ভয়াবহ অগ্নি ট্র্যাজেডি। এতে কমপক্ষে ৮০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু পুরো দেশকে শোকে মুহ্যমান করে রেখেছে। ঢাকার বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ। শোক ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের অন্তরে অন্তরে। চোখের পলকেই যেন সাক্ষাৎ নরক! অগ্নিকান্ডের আগ মুহূর্তেও কেউ ভাবেনি পুড়ে অঙ্গার হতে চলছে তারা। যে যার মতো নৈমিত্তিক ব্যস্ততা কিংবা আড্ডার কোলাহলে এসে হাজির আগুনরূপী মৃত্যুদূত। অসংখ্য অস্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্যে জীবন্ত শরীর আগুনে ঝলসে ছাই হয়ে যাওয়া মৃত্যু কল্পনা করতেও কেঁপে উঠে অন্তরাত্মা।
হতভাগারা নিয়তির ছকে হেঁটে বিদায় নিয়েছে নশ্বর পৃথিবী হতে। আগুন তাদের জীবন প্রদীপ চিরতরে নিভিয়ে দিলেও স্বজনদের হৃদয়ের শোক ও বাকরুদ্ধতার আগুন কখনো কি নিভবে? পোড়া হৃদয়ে এই শোক তুষের আগুন হয়ে জ্বলে উঠবে থেমে থেমে।
মৃত্যুপুরী চকবাজারের আগুনের লেলিহান নিশ্চিহ্ন করেছে লাশের পরিচয়। বেশির ভাগ লাশের পরিণতি পোড়া কয়লা-মাংসপিন্ডের কুন্ডলী আর ছাই। দৃশ্যমান মাথার খুলিতেও পরিচয় মিলছেনা স্বজনের লাশ। তাই বেঁঁচে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের শরীর হতে আলামত সংগ্রহ করে চলছে লাশ শনাক্তের ডিএনএ টেস্ট। হৃদয়বিদারক এই মৃত্যুর মিছিলে জীবনের শেষ নিঃশ্বাসেও কেউ কেউ নতুন করে জানিয়ে গেছে ‘জীবন’ ‘মানবিকতা’ ও ‘ভালোবাসা’র সজ্ঞা! দুই ভাইয়ের ঠিক মাঝে তিনবছরের এক শিশুকে আগলে রেখেছিল তারা, যেন আগুন হতে শিশুটি রক্ষা পায়। আগুন বাঁচতে দেয়নি তাদের কাউকেই। তবে তারা জানিয়ে গেল ‘মানবতা’ বেঁচে আছে! কয়েকটি লাশ শনাক্ত করা গেছে একজন আরেকজনকে আগলে ধরা, তাদের আলাদা করাও যায়নি। মৃত্যু তাদেরকে আলাদা করতে পারেনি।
এক বাবা তার সন্তানের বায়না রাখতে বিরিয়ানী আনতে নিচে নামছিল; আগুন সে বাবাকে গ্রাস করলেও, হাতে লেপ্টে আছে পোড়া বিরিয়ানির দানাগুলো! সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ছবিতে দেখা গেল ‘মায়ের কোলে পুড়ে অঙ্গার শিশু ও তার মা’ অথচ তারা দুজনের মুখেই লেগে আছে হাসির মিষ্টি আভা! এমন অসংখ্য বুকফাঁটা দৃশ্যে ভারি হয়ে আছে আমাদের বুক। জাতি হিসেবে আমরা অনেকগুলো হৃদয়বিদারক ঘটনার স্বাক্ষী হতে হতে সহ্য ক্ষমতা বেড়ে গেছে। সহ্য ক্ষমতা বেড়ে গেছে রাষ্ট্রযন্ত্রেও! রাষ্ট্রের প্রেস নোট ধারণ করতে পারেনি মানুষের অন্তরের শোকবিলাপ! তাই ঘোষিত হতে দেখা যায়নি আধাবেলা রাষ্ট্রীয় শোকও! তবে এত বড় শোক সইবার মতো প্রস্তুতি আমাদের কারোই ছিলোনা। যেমনটি প্রস্তুতি নেই দুর্ঘটনারোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের!
প্রাণপাখিগুলো উড়ে গেলে, বুকের ধন হারিয়ে গেলে তদন্ত, ক্ষতিপূরণ ও আশ্বাসের তামাশায় মেতে উঠে সংশ্লিষ্ট পক্ষ! এ তামাশা ও নাটক দেখতে দেখতে জাতি প্রস্তুতি নেয় আসন্ন শোক-ট্রাজেডির! নিয়তির ছকে তখনও মানুষগুলো সংখ্যা হয়ে যাবে লাশের প্রচ্ছদে…