আগুনঝরা মার্চ

10

১৯৭১ সালের মার্চের নবম দিন, উত্তাল-অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর একটি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে পাক হানাদাররা। পুরো বাংলাদেশ চলছে বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে, নির্দেশে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিচ্ছেন, সেই অনুযায়ী চলছে বাংলাদেশ। শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই পাকিস্তানের সামরিক জান্তার। একাত্তরের এই দিনে মিছিলে মিছিলে উত্তাল ছিল সারাদেশ। চরমে পৌঁছে দেশব্যাপী চলা লাগাতার অসহযোগ আন্দোলন।
একাত্তরের এই দিনে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মধ্যে টেলিফোনে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। টেলিফোনে দুই নেতা আলোচনার পর আওয়ামী লীগ ও ন্যাপ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন।
বিকেলে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে অশীতিপর বৃদ্ধ ন্যাপ নেতা ভাসানী ঘোষণা করেন, ইয়াহিয়া সাহেব অনেক হয়েছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়িয়ে আর লাভ নেই। ‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার’- এ নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নাও।
এদিকে ইসলামাবাদে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে আসবেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ রাত ৯টা থেকে রাজশাহী শহরে ৮ ঘণ্টার কার্ফু জারি করে। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল (সাবেক ইকবাল হল) ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় গত ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র জনসভায় গৃহীত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণা’র প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।