আগামী বছরের শুরুতে গাড়ি চলবে বঙ্গবন্ধু টানেলে

32

এম এ হোসাইন

গাড়ি চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠছে কর্ণফুলী (বঙ্গবন্ধু) টানেল। টিউবের ভিতর রাস্তা নির্মাণ, সংযোগ সড়কের কাজ ও অভ্যন্তরীণ সংযোগসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হলেই টানেল গাড়ি চলাচল উপযুক্ত হবে। এ পর্যন্ত টানেল নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রকল্পের নির্ধারিত সময় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু বিভাগ। কোন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে প্রকল্পটির। আগামী বছরের শুরুতেই টানেল গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে।
স্বপ্নের টানেলের দ্বিতীয় টিউবের খনন কাজ শেষ করে গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে সংযোগ সড়ক ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সংযোগ সড়কের কাজও শেষ পর্যায়ে। চলছে টিউবের অভ্যন্তরে সড়কের কাজ। তাছাড়া বৈদ্যুতিক নানা কাজও চলমান আছে। আনুষঙ্গিক এসব কাজের মাধ্যমে বহুপ্রতীক্ষিত এই টানেলের নির্মাণযজ্ঞ শেষের লেপন চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের এসব কাজ শেষ করে গাড়ি চলাচলের উপযুক্ততা পাবে টানেল। এরপর ২০২৩ সালের শুরুতে টানেলে গাড়ি চলাচল উদ্বোধন হতে পারে।
প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী ডিসেম্বরের আগে শেষ করতে পারবো বলে আশা করি। এখন টিউবের ভিতর গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করার কাজ চলছে। অভ্যন্তরীণ এসব কাজ শেষ হলে গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত হবে টানেল।
টানেলের দুই প্রান্তের মোট ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক স্থাপন করা হবে। এরমধ্যে পতেঙ্গা অংশে ৫০০ মিটার এবং আনোয়ারা অংশে সাড়ে ৪ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এসব কাজের মাধ্যমে টানেলের মূল সৌন্দর্য্য ফুটে উঠতে শুরু করেছে। টানেলের অভ্যন্তরীণ কাজও দিনে দিনে এগিয়ে চলছে। গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করতে দিনে রাতে চলছে কাজ।
টানেল প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এপ্রোচ সড়কের কাজ শেষের দিকে। টানেলের ভিতরে ইন্টারটিউবের কাজ ও বিদ্যুৎ সংযোগসহ চলাচলের উপযুক্ততার কাজ চলমান আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এসব কাজ হবে বলে আশা করছি।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে নেভি কলেজের কাছে হবে টানেলের প্রবেশ পথ। বহির্গমন পথ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানা সংলগ্ন ঘাট। মোট ৯ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭১ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এ প্রকল্পের মধ্যে টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৫ মিটার (উভয় পাশের ৪৭৭ মিটার ওপেন কাট ছাড়া)। টানেলে থাকবে ৯২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি ফ্লাইওভার। এর মধ্যে শহর প্রান্তের ‘অ্যাট গ্রেডেড সেকশন’ হবে ৪৬০ মিটারের আর দক্ষিণ প্রান্তের ‘অ্যাট গ্রেড সেকশন’ হবে ৪ হাজার ৪০৩ দশমিক ৯৭১ মিটারের। দেশের প্রথম এই টানেল হচ্ছে ‘ডুয়েল টু লেন’ টাইপের। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযুক্ত সড়ক থাকবে। আর রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ওভারব্রিজ। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে টানেল নির্মাণের জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর। তারও আগে ২০১৪ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও চীনের সরকারি পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। আর চীন সরকার এই টানেল নির্মাণের জন্য সে দেশের প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেডকে নিয়োগ করে। টানেলটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম টানেলের নামকরণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে।
সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কর্ণফুলী নদীতে তিনটি সেতু নির্মিত হয়েছে, যা বিরাজমান প্রচুর যানবাহনের জন্য যথেষ্ট নয়। নদীর তলদেশে পলি জমা একটি বড় সমস্যা ও বন্দরের কার্যকারীতার জন্য হুমকি। এই পলি জমা সমস্যার মোকাবেলার জন্য কর্ণফুলী নদীর উপর আর কোন সেতু নির্মাণ না করে তলদেশে টানেল নির্মাণ করা প্রয়োজন। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ কমবে এবং পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুত করা মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পূর্বপ্রান্তে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।