আগামী নির্বাচন হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ, ইসি সম্পূর্ণ স্বাধীন

15

ঢাকা প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীন হওয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ। গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি নয়াদিল্লির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এই বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে তাঁর দল দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আমি কখনোই ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না। আমি সবসময় জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছি।
তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো সংসদে ইসির পুনর্গঠন আইন পাস হয় এবং তারপর সেই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। ইসি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন এবং এর প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা রয়েছে।

আলোচনায় রুশ-ইউক্রেইন যুদ্ধ ও রোহিঙ্গা ইস্যুও স্থান পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের উচিৎ এই যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয়া। কারণ এর ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যুদ্ধ কখনোই মানব জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এবং মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক নাগরিক আসার কারণে স্থানীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মাদক পাচার, মানব পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসহিংসতার মতো নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত নাগরিকরা পাঁচ বছর ধরে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের কারণে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয়দের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে আর তাই এখন তাদের সেখানে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।এ সময় শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও অনুকূল পরিবেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান।
মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় ডেরেক শোলেট প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের জন্য তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মিয়ানমারে আবার কোনো গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে সা¤প্রতিক কিছু উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তার সফর দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতিফলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। তিনি দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ব্যাপারে আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শোলেট ২৪ ঘন্টার সফরে মঙ্গলবার বাংলাদেশে পৌঁছেন।

শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ভারতের
এদিকে বাংলাদেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বলেন, আপনার প্রতি এবং আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন রয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এই বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
দুজনের সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় প্রতিবেশী হিসেবে সব সময় পাশে থাকবে ভারত। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
নজরুল ইসলাম জানান, দিল্লিতে আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। প্রধানমন্ত্রী এ আমন্ত্রণগ্রহণ করেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবেশি দুই দেশ একযোগে নানাভাবে কাজ করতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিনয় কোয়াত্রা বলেন, নয়াদিল্লি এলসির শর্ত আরও সহজ করার বিষয়ে কাজ করছে, যাতে বাংলাদেশিরা সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। দুই দেশের উভয়ের মুদ্রায় পারস্পারিক বাণিজ্য করা যেতে পারে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত ছিলেন।