আকাশে চাঁদ দেখে

68

নাসিমন তারামন দু’জন বোন।
বড়ো নাসিমন। তারামন ছোট হলে কি? গুণি। বুদ্ধিতে ভরা। সব সময় অজানা বিষয় নিয়ে ভাবে, কথা বলে।
আজকাল ইন্টারনেটের যুগ। টাচফোনে পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়। যা’ জানতে চাইবে গুগোলে যাও, পেয়ে যাবে।
দু’জন অনেক বড়ো হয়েছে। ইশকুলে পড়ছে। লেখাপড়ায় ভালো। নাসিমন ভালো রেজাল্ট করে। তারমন পুরো বিপরীত। মা- বাবা রাগ করে তারামনের উপর। তারামন লজ্জায় চোখের জল ফেলে।
নাসিমন বলে, -দুই এত ভালো ছাত্র, পড়িস না কেন? শুধু সারাদিন অজানা, অবিশ্বাস্য বিজ্ঞান বিষয় কথা নিয়ে ভাবিস। বাবা রাগবে না?
-নাসিমন, আমার যে ওসব ভীষণ ভালো লাগে। কি করবো বল,এটাতো আমার চরিত্র।
ওরা বড়ছোট হলে কি, তুই সম্বোধনে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
সেদিন পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে আকাশে। ভ্যাপসা গরম। গুমোট ভাব। তারামন বলে,
– দেখ্ নাসিমন, এই বুঝি আকাশে মেঘ জমেছে। এই আবার নেই। কি আশ্চর্য এই পৃথিবী! সবাই বলে, পৃথিবীটা ভীষণ সুন্দর। তবে অনেকেই আর সুন্দর বলে না। পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ নেই। প্রকৃতি দূষিতে ভরপুর। চারিদিকে উন্নতি মারমুখো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। চাঁদে যাবে,আধুনিক যুদ্ধবিমান, রকেট, আকাশ উঁচু বাড়ি, বিরাট কারখানা, দামি গাড়ি বানাবে,আরো কত কি? আজকাল আকাশে সুনীল নির্মল হাওয়া নেই। বিমানের কালো ধোঁয়া উড়ছে। সত্যিই, পৃথিবীটা একেবারে অসহায় যেন।
– তা’তে তোর সমস্যা কোথায়? পৃথিবী তার নিয়মে চলবে।
– তুই দারুন একজন স্বার্থপর মানুষ। সারাদিন নিজেকে নিয়েই ভাবিস। এটা ঠিক নয়। মানুষ মানুষের কথা ভাববে, তা’তো নয়, চোখের সামনে যা’ দেখছি, বা দেখছি না তাদের পরস্পর ছোঁয়ায়তো আমরা বেঁচে আছি।
– যেমন, কি বলছিস তুই?
– সূর্য,আলো, হাওয়া,গাছ,নদী, সাগর, এই সব কিছুর আদর ভালোবাসায় আমরা বেঁচে আছি।
নাসিমন তারামনের কথা শুনে হারিয়ে যায় অন্য পৃথিবীতে। কিছু বলতে পারে না।
তারামন বলতে থাকে,
নাসিমন,ঐ পূর্ণিমার চাঁদ দেখ, কি সুন্দর! যতবার পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে, কোন পরিবর্তন দেখি না। আচ্ছা, কি করে সম্ভব এটা?
নাসিমন এটার উত্তর জানে না। চুপ থাকে।
তারামন এবার বলে অন্য কথা।
– আচ্ছা জানিস পৃথিবীতে ক’টা নক্ষত্র আছে? ২৮টি। অভিজিৎ অন্যতম নক্ষত্র।
– আরে বাবা,ঐ নক্ষত্র আমার কি হবে? আমি বাংলা,ইতিহাস পড়ি। অংক করি। এগুলোতো আমার পড়া।
– কি হবে, জানবি। জ্ঞাণ বাড়বে। আচ্ছা পৃথিবীতে গ্রহ কয়টা বলতে পারবি? পড়িস না, জানার আগ্রহ নেই। জানবি কি ভাবে। আর কখনও জানবিনে। কিছুদিন পরতো চলেই যাবি। শোন, গ্রহ হচ্ছে পাঁচটি। শুক্র,বৃহস্পতি,শনি, বুধ ও মঙ্গল। চন্দ্র কিন্তু গ্রহ নয়, উপগ্রহ। ঐ চাঁদ বলছে কি জানিস?
– চাঁদ কথা বলে?
– জ্ঞান, পড়া, থাকলেই তো জানবি। শুধু চাঁদ নয়,পৃথিবীর সবকিছুই কথা বলে।
চাঁদ কি বলছে জানিস? চাঁদ বলছে, আমি কি সুন্দর, আমার কি বা আছে? পৃথিবীর অনেক কিছু আছে। যা আমার নেই। পৃথিবীর সুন্দর প্রকৃতি আছে, সাগর,নদী, গাছগাছালি, বনবনানী, ফুলপাখি,কীট পতঙ্গ, নানান পশু ছাড়া আরো কত কি আছে। কি সুন্দর! কিন্তু এই সুন্দর পৃথিবী আগে ছিলো নানান বিষে ভরা। আকাশে বিমানের ধোঁয়া,সাগরনদীতে ষ্টিমার, ট্রলারের ধোঁয়া,রাস্তায় ধুল উড়ত। কি বিশ্রী সব! বেশ কিছুদিন ধরে ওসবের কিছুই নেই।
-কেন নেই?
– ঐ যে করোনা এসেছে।
– করোনা? ওটা আবার কি?
– কি বোকারে! সবাই জানে, তুই জানিসনা করোনা কি? কি লজ্জা!
করোনা একটা অসুখ। খুব খারাপ রোগ। ছোঁয়াছো। করোনায় সব বন্ধ। করোনা ছোঁয়ায় মানুষ মরছে। আরও কি জানিস, চাঁদে করোনা আসেনি। তাই এখনও আকাশে চাঁদ ওঠে। আকাশের চাঁদ দেখে সবাই করোনার কথা ভুলে যায়। আমিও।
– ওমা, তাই! তুইও ভুলিস সব? নাসিমন বলে।
তারামন বলে, হ্যাঁরে, সব ভুলি। করোনা নাকি খুব ভয়ংকর। একটি মহামারী। অসাধারণ ছোঁয়াছো রোগ এটা। এর কোন ওষুধ এই পর্যন্ত বেরোয়নি। যতদিন ওষুধ বেরুবে না ততদিন সব বন্ধ থাকবে। মানুষ মরবে। দেখ না, কতো মানুষ মরছে পৃথিবীতে।
নাসিমন তারামনের স্বপ্নীল কথা শোনে অবাক মনে বলে, সত্যিই,তারামন কে? এতসব কেমন করে ভাবে, জানে!