আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের শক্ত অবস্থান এবং আইভী’র হ্যাটট্রিক বিজয়

19

রতন কুমার তুরী

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের আইভীর পক্ষে শক্ত অবস্থান, নারায়নগঞ্জ আওয়ামী লীগে নেতাকর্মীদের সমন্বিত প্রচারণা সর্বোপরি নারায়নগঞ্জের সাংসদ শামিম ওসমানের ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে মাঠে নামা সবমিলিয়ে একটা দারুণ অর্থবহ নির্বাচনের মাধ্যমে অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নারায়নগঞ্জের মেয়র নির্বাচিত হলেন ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। এ নিয়ে তিনি তিনতিন বার উক্ত এলাকার মেয়র নির্বাচিত হয়ে তার এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থার বড় একটা স্বাক্ষর রাখলেন। প্রকৃতপক্ষে বেশ জমে ওঠেছিল নারায়নগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বিএনপি তৈমুর আলম খন্দকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেও মুলতঃ যে যাই বলুক দৃশ্যতঃ ভোটের লড়াই হয়েছে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে। ১৯৮৪ সালের নারায়নগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকার ছিলেন চুনকার কট্টর অনুসারি সেসময় শামিম ওসমানের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন ওই নির্বাচনে জিতে ছিল। মাঝে বেশ কয়েকবার নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন নির্বাচনে তৈমুরের দাঁড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও শামিম ওসমানের কারণে তা পরেননি। অবশেষে ২০১১ সালে নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হলেও দলীয় নির্দেশে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। একদশক পর ২০২২ সালে আবারও তৈমুরকে নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রার্থী হিসেবে সমগ্র নারায়নগঞ্জ চষে বেড়াতে দেখা গেলেও তিনি বিগতদিনের ইতিহাসের মতো টিকই আওয়ামী লীগের কাছে হেরে গেলেন। মূলতঃ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে, যে কোনো নির্বাচনের সুফল যে আওয়ামী লীগের ঘরেই বেশি ওঠার সম্ভাবনা থাকে তা নাসিক নির্বাচন দেখেই আন্দাজ করা যায়। প্রকৃতপক্ষে ইদানিং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল এবং ভেতরে ভেতরে নির্বাচনে দলের বিরোধিতা করা একটা মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যা বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন গুলোতে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, নাসিক নির্বাচনে দলটি কিছুটা হলেও এ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে।
মুলতঃ নারায়নগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এবং উক্ত এলাকার সাংসদ শামিম ওসমানের দ্ব›দ্ব দীর্ঘদিনের। বিষয়টি বলতে গেলে পুরো বাংলাদেশে ওপেন সিক্রেট। তবে এইবারই প্রথমবারের মত শামিম ওসমানকে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হয়েছে। এই বিষয়ে যে দলের ব্যাপক চাপ ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। নাসিক নির্বাচনে সেলিনা হায়াত আইভীকে ব্যাপক ভোটের ব্যাবধানে জিততে দেখা গেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তৈমুর আলম খন্দকারকে ভোটের মাঠে বেশ ভালো সংখ্যক ভোট পেয়ে লড়াই করতে দেখা গেছে বিষয়টি গনতন্ত্রের জন্য বেশ ভালো একটা ইঙ্গিত।
ভোটের মাঠে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বি থাকলে নির্বাচন আলাদা একটা রূপ পরিগ্রহ করে এবং জনগন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারে। নারায়ণগঞ্জে এর ব্যতয় ঘটেনি। জনগণকে এই নির্বাচনে ভালোভাবে লাইন ধরে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের রাজধানীর পাশেই এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ায় সমগ্র মিডিয়া এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখ ছিল এ নির্বাচনের দিকেই। ভোট চলাকালীন মিডিয়াগুলো ভোটের সববিষয়ে অনেককিছুই লাইভ টেলিকাস্ট করেছে ফলে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের মানুষ নির্বাচনটি প্রত্যক্ষ করতে পেরেছে। নাসিক নির্বাচন সবদিক দিয়ে ভালো একটা নির্বাচন হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতিমধ্যে মন্তব্য করেছেন। এমন পরিচ্ছন্ন নির্বাচন দেখে অন্যান্য দলগুলোও ভবিষ্যতের নির্বাচনে এগিয়ে আসবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। এখন দেখার বিষয় ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর হ্যাট্টিক বিজয়কে নারায়নগঞ্জে সাংসদ শামিম ওসমান কী চোখে দেখছেন এবং ভবিষ্যতে তিনি মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী সাথে এক হয়ে সকল কাজ করছেন কীনা। তবে মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর হ্যাট্টিক বিজয়ে আওয়ামী লীগ যে একটা বড় বিজয় অর্জন করলো তা বলাই যায়, যে বিজয় আগামি নির্বাচনে বেশ প্রভাব ফেলবে সাথেসাথে এই বিজয় নারী নেতৃত্ব বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে তা আরেকবার ভালোভাবেই তুলে ধরলো।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক