আওয়ামী লীগ মানেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূলধারা

14

জামাল উদ্দিন

‘বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগ-বাংলাদেশ’- বাঙালির অভিধানে এ তিনটি শব্দই সমার্থক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতিনির্দেশনায় উজ্জীবিত হয়ে বাকি দুইয়ের চালিকাশক্তি হলেন মুজিবকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু বলতেন- ‘আমরা রাজনীতি করি না, নীতির রাজনীতিতে বিশ্বাসী হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।’ সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি হল আওয়ামী লীগ। সবচেয়ে বড় কথা- অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও মানবকল্যাণকামী এ রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাকালীন মূলমন্ত্র হল ‘জনগণের মুক্তি’। মানুষকে শোষণের হাত থেকে মুক্ত করে দেশকে স্বাধীন করাই যে একটা দলের উদ্দেশ্য হতে পারে, আওয়ামী লীগ সেটা করে দেখিয়েছে। ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে চলা সেই আওয়ামী লীগ সাত দশক পার করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তির লক্ষ্য সামনে রেখে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে চলেছে। যার চূড়ান্ত প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বর্তমানে শেখ হাসিনার হাত ধরে হচ্ছে। গৌরব, সাফল্য ও সংগ্রামের সাত দশক ছোঁয়া আওয়ামী লীগের সফলতা ঠিক এখানেই। কেমন গেল আওয়ামী লীগের ৭৩ বছর ? দেশ ও জাতির জন্য এসময়ে তাদের অবদানই বা কী? কিংবা দলনেতা-সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সঙ্গে কতটা জড়িয়েছেন- এসব নিয়ে একটু পেছনে ফিরতে হবে।
দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার; ২৩ জুন, ১৯৪৯ সাল। পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে গুটিকয়েক নেতার উদ্যোগে এদিন প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল মুক্তিকামী দল আওয়ামী লীগ। ২০০ বছর পেছনে তাকালে দেখা যাবে, ভাগীরথী নদীর তীরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যও অস্তমিত হয়েছিল এই ২৩ জুনে, ১৭৫৭ সালে। অর্থাৎ ১৯২ বছর পর ঠিক একই দিনে মানুষের মুক্তি আর অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দল। ব্যাপারটা কাকতালীয় ছিল কিনা জানিনা; তবে ‘পতন দিনে উত্থান’ সূত্রে শূন্য থেকে যে শুরু ভাসানী-বঙ্গবন্ধুরা করেছিলেন, ৫ থেকে ৭ কোটি সবশেষ আজ ১৮ কোটি মানুষ সেই শূন্যের ফলই ভোগ করছেন।
যাই হোক, ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গেয়ে লাভ নেই। মূল কথায় ফিরে আসি। রোজ গার্ডেনে কয়েকজন নেতার সমন্বয়ে গড়া সেদিনের রাজনৈতিক প্লাটফর্মটির নাম দেয়া হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’; যার সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক হন। অন্যদিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৫৫ সালে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়; নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। আওয়ামী লীগের শুরুটা সুখকর ছিল না। গ্রেফতার এড়াতে ভাসানীকে বোরকা (কেউ বলেন কম্বল) পর্যন্ত পরানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল।… সবাই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেয়া হল- ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
মূলত প্রতিষ্ঠার পরপরই রাজনৈতিক সংগ্রাম, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে পঞ্চাশের দশকেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। তারপরও এ সময়টাকে একাত্তরের প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ ছিল আওয়ামী লীগের রঙিন ইতিহাসের প্রথম এক দশক। ১৯৬৬ সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। লক্ষ্যই যার ‘সংগ্রাম করে মুক্তি’ আদায়; তাকে কি বসে থাকলে চলে? বঙ্গবন্ধু সময় নষ্ট করেননি, নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেই স্বাধীনতাপ্রাপ্তির সব অনুষঙ্গ নিয়ে পরিকল্পনার ছক কষতে থাকেন। যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল ৬৬’র ছয় দফা। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘…পূর্ব পাকিস্তানবাসীর বাঁচার দাবিরূপে ছয় দফা কর্মসূচি… আমার প্রস্তাবিত ছয় দফা দাবিতে যে পূর্ব পাকিস্তানের সাড় পাঁচ কোটি শোষিত-বঞ্চিত আদম সন্তানের কথাই প্রতিধ্বনিত হইয়াছে, তাতে আমার কোনো সন্দেহ নাই।’ এক বইতে পড়েছিলাম, আওয়ামী লীগের কোনো এক নেতা ৬ দফার ব্যাখ্যা বুঝতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে।
জবাবে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আরে বাবা, ছয় দফা-টফা কিছু না, চাই তো মূলত স্বাধীনতা।’ বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন, স্বাধীনতা পেলে সব হবে; যে স্বাধীনতার প্রাপ্তির সিঁড়ি হবে ঘোষিত ৬ দফা। ছয় দফার কারণে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করেছিল সরকার। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ১৯৬৬ সালের ৭ জুন প্রদেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে। সেদিন পুলিশের গুলিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ১১ জন নিহত হয়। পুলিশ প্রায় ৮০০ লোককে গ্রেফতার করে এবং অগণিত লোকের বিরুদ্ধে মামলা করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্বিতীয় দশকের আওয়ামী লীগ হয়ে উঠে আরও প্রাসঙ্গিক, আরও শক্তিশালী। আওয়ামী লীগের সফলতা ’৪৯ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল, তবে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক তথা রাষ্ট্রীয় সুফলপ্রাপ্তির ব্যাপারটা এসেছিল তৃতীয় দশকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষিমন্ত্রী হয়েছিলেন শেখ মুজিব। কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন ১৯৫৬ সালে। তবে রাষ্ট্রীয় নেতা হিসেবে দেশকে সব এনে দেয়ার গৌরবোজ্জ্বল যে ইতিহাস দলের রয়েছে, পিতা মুজিব সেটা এ দশকেই এনে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুব খান সরকারের পতন হয় এ সময়। ৭ কোটি বাঙালি খুঁজে পায় নিজেদের প্রকৃত আত্মপরিচয়, পূর্ব পাকিস্তানকে ঘোষণা করা হয় ‘বাংলাদেশ’। যদিও দেশ তখনও স্বাধীন হয়নি। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে।… একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোনো কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই।… জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ’। ’৭০-এর নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আইনসভায় (জাতীয় পরিষদ) পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন দখল করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু রক্তে-মাংসে যাদের পেশিশক্তির লড়াই, সেই কুচক্রী পাকিরা কি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে? সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বাঙালির অধিকার নস্যাৎ করার পথ বেছে নেয় সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধু তখনই বুঝে যান, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই। শুরু হয় তার ‘ক্যারিশম্যাটিক লিডারশিপ’। অধিকার আদায় ও ফিরে পেতে সোচ্চার হয় আওয়ামী লীগ, দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরপর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনকের‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন…’ ঘোষণা, রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সবারই জানা।
আওয়ামী লীগ তথা বাংলাদেশের সব প্রাপ্তির এ দশকেই (তৃতীয়) বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। পঞ্চাশের দশক থেকে মানুষের অধিকার আদায়ে দাপিয়ে বেড়ানো বঙ্গবন্ধুর জীবননাশ হয় এ সময়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর সামরিক শাসনের নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি। বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেও বিভেদ দেখা দেয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফের শূন্য অবস্থানে ফিরে যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তবে দলের জন্য গণমানুষের যে ভালোবাসা নেতা বঙ্গবন্ধু এনে দিয়েছিলেন, সেটা নিয়েই শেখের বেটি মাত্র ৫ বছর ৯ মাস ২ দিন পর দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। হাল ধরেন দলের, পাশে দাঁড়ান নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগের পা তখন তিন দশক পেরিয়ে চার-এ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার ওই দেশে ফেরা কেবল সাধারণ নাগরিক হিসেবে জীবনযাপন করার উদ্দেশ্যে ছিল না, ছিল জাতীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হতে; জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারী সেনাশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ জিয়া ও এরশাদবিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ১৯৯১ সাল। দলের বয়স তখন পঞ্চম দশকে। ১৬ বছর আগে পিতা মুজিব যে আওয়ামী লীগকে সাধারণ মানুষের দলে পরিণত করে শাহাদতবরণ করেছিলেন, সেই আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনা তার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে দেন এ সময়ে। দল আত্মপ্রকাশ করে বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে।
১৯৯৬ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ফের মাহেন্দ্রক্ষণ। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালের জুনে ক্ষমতা গ্রহণের পর বিএনপি সরকারের রেখে যাওয়া নানা বিষয় নিয়ে বেশ দুরূহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। তারপরও তিনি দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্র্র্নিমাণ এবং সেটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করেন। দেশবাসীর সামনে থাকা পাহাড়সম অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করতে সক্ষম হন। আরেকটু স্পষ্ট করলে বলতে হয়- শেখ হাসিনার ওই মেয়াদে পাঁচ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ, এখন বেড়ে হয়েছে ৮.৫ শতাংশ যা নিঃসন্দেহে একটি বড় সাফল্য। ১৯৯৬-৯৮ মেয়াদকালে যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় ১০ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। পরবর্তী তিন বছরেও এ ইতিবাচক প্রবণতা ধরে রাখা হয়। সরকারের সঙ্গে সঙ্গে দল আওয়ামী লীগও হয়ে উঠে গণমানুষের ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক। পিতার মতো কন্যাও মানুষকে অকৃত্রিম বিশ্বাস করতেন, করেন; যার খেসারত তাকে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের হাতে দিতে হয়। নিজে যাদের ডেকে এনে আশপাশে ঠাঁই দিয়েছিলেন, সেই তারাই ১ অক্টোবরের নির্বাচনে অপজোটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে।
ওই নির্বাচনের পর সংগঠিত হতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি আওয়ামী লীগকে। পরবর্তী অর্থাৎ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই ফের আওয়ামী লীগে আস্থা খুঁজে পায় বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনে পিষ্ট দেশের কোটি কোটি মানুষ। সবশেষ সাত দশকে পদার্পণ করা আওয়ামী লীগ নামের বাতিঘরের উজ্জ্বল আলো এখন আরও উদ্ভাসিত। দেশপ্রেমের মহান ব্রত নিয়ে সব বাধা-বিপত্তি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নাশকতা মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সকল ষড়যন্ত্রের জাল চিহ্ন করে বিশ্বের অন্যতম প্রধান খরস্রোতা পদ্মানদীর উপর গড়ে তুললেন দেশের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘ সেতু। বিশ্বব্যাংকের অনৈতিক ও নির্লজ্জ দাবির বিপরিতে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সন্মান ও আত্মমর্যাদা রক্ষায় দেশের নিজস্ব তহবিল ও সাধারণ মানুষের অর্থে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছেন। যা ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে। আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক শক্তিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছে, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও সফল প্রধানমন্ত্রী জনননেত্রী শেখ হাসিনা দিলেন গৌরব ও অহংকারের পদ্মাসেতু। ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি- অতীতের বাংলাদেশে যা হয়েছে, বর্তমানে যা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যা হবে; তার সবকিছুতেই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের অবদান ছিল, আছে, থাকবে। বাংলাদেশ আজ যেখানে দাঁড়িয়ে এবং আগামী দিন যেখানে যাবে- পুরো পরিকল্পনার রূপকার থাকবেন বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। দেশ, দশ ও বাঙালির প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে যারা জড়িয়েছেন; এত অর্জন, এত প্রাপ্তি, এত কিছুর দাবিদার যে দল, সত্যিই সেই আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ শব্দ দুটির মাঝে পার্থক্য খুঁজে পাই না।
লেখক: গবেষক, লেখক ও প্রকাশক