আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে

27

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এখন পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার নোট ছাপানো হয়েছে। সব ব্যাংক খালি। রিজার্ভ খালি। টাকা নেই, রিজার্ভ নেই। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। পাচার করে বিভিন্ন দেশে দেশে ঘরবাড়ি করেছে। রিজার্ভ খালি, তাই দেশের মানুষের জন্য পণ্য আমদানি করতে পারছে না, ডলার নেই বলে। যার জন্য দ্রব্যমূল্যর দাম আজ আকাশচুম্বী।
গতকাল বুধবার বিকালে কাজীর নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচি যৌথভাবে পালন করে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি মামলা দায়ের হওয়ায় নেতাকর্মীরা যখন জামিনে আসায় ব্যস্ত সময় পার করছিলো, তখন এ বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সমাবেশে নাসিমন ভবন থেকে কাজীর দেউড়ি মোড় এলাকায় বিএনপি কর্মীদের উপস্থিতিতে পূর্ণতা পায়। মিছিলে মিছিলে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশে প্রচুর পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও নিরব দর্শকের ভ‚মিকা পালন করতে দেখা যায় তাদের।
আমির খসরু বলেন, যারা জনগণের অর্থ চুরি, ব্যাংক লুট, মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের কোনো সমস্যা নেই। তাদের পকেট ভর্তি টাকা। পণ্যের বাজারমূল্য যতই বাড়ুক, তাদের সমস্যা হবে না। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তারা। তারা বেহেশতে আছে। তাদের আগামীর বেহেশতের দরকার নেই। আগামীর বেহেশতে যাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। যারা নির্যাতিত হচ্ছে, কারাবরণ করছে, অত্যাচারে মারা গিয়েছে, তারাই বেহেশতে যাবে।
আওয়ামী লীগ আজ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী বসবাস করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আরও একা হয়ে যাবেন। তখন আর জনগণের কাছে যেতে পারবেন না। আপনাদের আশ্রয়স্থল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কিছু কর্মকর্তা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা। তারা কি আপনাদের বাঁচাতে পারবে? তারা কি রক্ষা করতে পারবে?
তিনি বলেন, যে দলের নেতাকর্মীরা ভোট চুরি, ব্যাংক লুট, টেন্ডার, জায়গা দখলে ব্যস্ত তাদের সাথে জনগণের সম্পর্ক নেই। তারা ভিন্ন প্রক্রিয়ার নতুন রাজনীতি সৃষ্টি করেছে। এ রাজনীতি আওয়ামী মডেলের লুটপাটের রাজনীতি। রাজনৈতিকভাবে তারা আজ সম্পূর্ণভাবে পরাজিত। তাদের সমর্থনকারী কোনো মানুষ নেই আজ।
খসরু বলেন, বাকশাল হচ্ছে আরেকটি ভোট চুরির মেশিন। ১৯৭৫ সালের এ দিনে বাকশালের মাধ্যমে নির্বাচনে যাতে তাদের যেতে না হয় সেজন্য সব দল বন্ধ করে তারা একদল করেছিল। অর্থাৎ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জনগণের কাছে যেতে তাদের কোন ইচ্ছা ছিল না। সাথে সাথে তারা আইনের শাসনকে নিজের হাতে নিয়ে ফেলেছিল। আইনের শাসনের অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছিল। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তারা কেড়ে নিয়েছিল। আজকেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাই। সেদিনও গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরেছিল। সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। চারটি সরকারি পত্রিকা রাখা হয়েছিল। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সেদিন তারা লুটপাটে নেমেছিল বাকশালের নাম দিয়ে। ব্যাংক ডাকাতি করেছিল। তখন ছিলো গণডাকাতি। আর এখন চলছে ডিজিটাল ডাকাতি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাকশাল হাজার হাজার মানুষকে, মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল রক্ষীবাহিনী দিয়ে। রক্ষীবাহিনী রাষ্ট্রের সব সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছে। সমস্ত ক্ষমতা রাষ্ট্র প্রধানের হাতে তুলে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ সংবিধানকে সুরক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে জনগণকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। তারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। আপনারা যদি জনগণের বিশ্বাস, আস্থা, সম্মান রক্ষা করতে না পারেন, দেশে আইনের শাসন প্রবর্তন করতে পারবেন না। গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, ভয়-ভীতি দিয়ে সংবিধান রক্ষা করতে পারবেন না। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থা নিবেন না। আপনারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন না। আপনারা আজ ব্যর্থ। সবাইকে মামলা দেয়ার উদ্দেশ্যে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের একটি কর্মসূচিকে নিয়ে ৪টি মামলা হয়েছে। মাহবুবে রহমান শামীম, ডা. শাহাদাত, বক্কর, দিপ্তীসহ শত শত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ সরকারকে পতন ঘটাতে হবে। বিএনপি সে রাস্তায় চলছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বাঁধা উপেক্ষা করে আমাদের যে বিভাগীয় সভা সফল হয়েছে। হামলা, মামলাকে উপেক্ষা করে গণতান্ত্রিকভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করেছে।
মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য মনজুর আলম চৌধুরী মঞ্জু ও মো. কামরুল ইসলামের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক এম এ হালিম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এড আবদুস সাত্তার, শফিকুর রহমান স্বপন, ইসকান্দর মির্জা, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ সালাউদ্দিন, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুরুল আমিন, নূর মোহাম্মদ, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, সরওয়ার আলমগীর, কাজী সালাউদ্দিন প্রমুখ।