আওয়ামী লীগে বিরোধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা

89

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর উপজেলাতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে তৎপর আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে এবার ১৪টিতেই কয়েক ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নিশ্চুপ থাকলেও প্রতি উপজেলায় আওয়ামী লীগের চার থেকে আটজন প্রার্থী তৎপর আছেন। এতে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল তাতে ভাঙন ধরার শঙ্কা জেগেছে।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, দলে সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ার কারণে মনোনয়ন দিতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের পছন্দের প্রার্থীরাই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বেশি। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। চট্টগ্রামের প্রত্যেক উপজেলা থেকে জেলার কাছে তিনজন করে প্রার্থীর তালিকা চাওয়া হবে। পরে সে তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ নিজস্ব জরিপে এগিয়ে থাকা প্রার্থীকেই মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে দলীয় হাইকমান্ড। তবে এখনো প্রার্থী বাছাই নিয়ে কেন্দ্র থেকে কোনোধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা থাকবে। এখনো কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড আছে। তারা যে সিদ্ধান্ত দিবে মাঠপর্যায়ে তা আমরা অনুসরণ করবো। উপজেলা- জেলার পাঠানো তালিকা থেকেই যোগ্যদের মনোনয়ন দিবে আওয়ামী লীগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৪ উপজেলায় আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ৭০ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন। এরমধ্যে স›দ্বীপে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার, মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ও উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল হাসান সুমন। মিরসরাইয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জসীম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন ও জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার।
রাঙ্গুনিয়ায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আলী শাহ্, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সাাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন খান স্বপন।
রাউজানে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুসলিম উদ্দীন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জমির উদ্দিন পারভেজ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক বশির উদ্দিন খান। তবে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুলের মনোনয়ন পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
ফটিকছড়িতে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আবু তৈয়ব, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সৈয়দ মো. বাকের ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীর ছেলে হাসিবুল সোহাগ চৌধুরী সাকিব। সীতাকুÐে উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, সৈয়দপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মঞ্জু ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. ইদ্রিছ। হাটহাজারীতে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইউনুচ গনি চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক জসীম উদ্দিন শাহ্, পরিবহন নেতা মনজুরুল আলম চৌধুরী ও উত্তর জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল আলম।
পটিয়ায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আকম শামসুজ্জামান ও সাবেক সভাপতি রাশেদ মনোয়ার।
সাতকানিয়ায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আমম মিনহাজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার ও সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. সাইফুদ্দিন সিদ্দিকি। লোহাগাড়ায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়–য়া, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন হিরু ও জেলা পরিষদ সদস্য আনোয়ার কামাল।
আনোয়ারায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর।
চন্দনাইশে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক আবু আহমদ জুনু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাশেম।
বোয়ালখালীতে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন এমরান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম ও সাবেক প্রচার সম্পাদক রেজাউল করিম বাবুল।
বাঁশখালীতে জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম, সাবেক কারা পরিদর্শক সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ডা. ফররুখ আহমদ, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী নুর হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মোজাম্মেল হক সিকদার, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মো. গালিব, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াজুদ্দিন আহমেদ সুমন, উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মকছুদ ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা এড. রাহাত হায়দার চৌধুরী রনি।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেসব উপজেলায় দল মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছিল সেখানে এবার নতুন প্রার্থী আসার সম্ভাবনা আছে। বাকি উপজেলাগুলোতে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানরা পুনরায় মনোনয়ন পেতে পারেন। এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন সংসদ সদস্যসহ জেলা নেতাদের পছন্দের প্রার্থীরা। তবে জাতীয় নির্বাচনে কার কিরূপ ভূমিকা তা বিবেচনায় রেখেই প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।