আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ‘তীব্র দৌড়ঝাঁপ’

90

দেশজুড়ে পৌরসভা নির্বাচনের দামামা বাজতে শুরু করেছে। ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যেই দৌঁড়ঝাপ বেশি বলে জানান দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। মনোনয়ন যুদ্ধে অংশ নিতে আগেভাগেই লবিং-তদবির শুরু করেছেন দলটির প্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কদরও বেড়েছে কয়েকগুন। দলীয় প্রতীক বাগাতে নেতাদের ‘মন জয়’ করতে মরিয়া প্রতিযোগিতায় নেমেছেন নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার স্বাদ পেতে আপাতত কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ২০ (২-খ) ধারা অনুযায়ী, পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা আছে। প্রথম সভার তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচিত পৌরসভার মেয়াদ। সে হিসেবে আগামি মাসেই মনোনয়ন যুদ্ধের মুখোমুখি হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের দশটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে দশটি পৌরসভাতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পাদক মন্ডলীর এক নেতা বলেন, ‘ডিসেম্বর নির্বাচন হলে অক্টোবর থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। এক্ষেত্রে ইসি পৌর নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করলেই আওয়ামী লীগও দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ কাজ শুরু করবে। এক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইয়ে দলের ত্যাগী নেতারাই প্রাধান্য পাবেন।
জানা যায়, চট্টগ্রামে বর্তমানে পৌরসভার সংখ্যা ১৫টি। এরমধ্যে ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌরসভার মেয়াদ এখনো আছে। বাকি ১২টি পৌরসভায় নির্বাচনের হাটহাজারীতে সীমান নির্ধারণী মামলা চলমান আছে। যে কারণে সেখানে নির্বাচন হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি মাস নাগাদ চট্টগ্রামের মিরসরাই, বারৈয়ারহাট, স›দ্বীপ, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুন্ড, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে নেতারা তীব্র দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মনোনয়ন পেতে নেতারা স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক ছাড়াও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের পেছনে সময় ব্যয় করছেন। অনেকেই মনোনয়ন পেতে দলীয় সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। সমাজসেবায় ব্যয় করছেন উপার্জিত টাকা। নির্বাচনে অংশ নিতে তৎপর এমন প্রার্থীদের মধ্যে দলের ত্যাগী নেতা যেমন আছেন তেমনি হাইব্রীড-অনুপ্রবেশকারীরাও দলীয় মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে মাঠে নেমেছেন। পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়ে কেউ কেউ নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জাহির করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতকানিয়া পৌরসভায় মেয়র পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহŸায়ক মোহাম্মদ জোবাইর, সাবেক পৌরমেয়র হাজী মাহমুদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা থাকায় সেখানে এবারো মোহাম্মদ জোবাইরের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান অনেকে।
বাঁশখালীতে বর্তমান পৌর মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী নুর হোসেন, সাবেক পৌরমেয়র শেখ ফখরুদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শ্যামল কান্তি দাশ, আকতার হোসেন, অ্যাড. তোফাইল বিন হোছাইন, পৌরসভা যুবলীগের আহবায়ক হামিদ উল্লাহ, সাবেক ছাত্রনেতা মাহমুদুল ইসলাম নির্বাচনে অংশ নিতে তৎপর। এরমধ্যে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে এ পৌরসভায় ভালোই লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি মনোনয়ন না পেলেও কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। তবে হাইব্রীড ও অনুপ্রবেশকারী যাতে মনোনয়ন না পায় সেটাই প্রার্থনা করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
চন্দনাইশে পৌরসভার বর্তমান মেয়র মাহবুবুল আলম খোকা, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ টিপু চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম রহমানী, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম. কায়সার উদ্দিন চৌধুরী, ব্যবসায়ী রফিকুল আলম, মোজাম্মেল হক মনোনয়ন চাইবেন। এ পৌরসভায় সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুল আলম খোকা ও শেখ টিপু চৌধুরীর মধ্যে মনোনয়ন যুদ্ধ হবে। তবে দুইজন প্রবাসী এবারো মনোনয়ন পেতে সক্রিয় আছেন।
পটিয়ায় বর্তমান পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ন ম টিপু সুলতান, আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব বাবুল, পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সরোয়ার হায়দার, আলমগীর আলম মনোনয়ন চাইতে পারেন। এরমধ্যে সরোয়ার হায়দায় স্থানীয় একটি শিল্পগোষ্ঠীর ¯েœহধন্য হওয়ায় মনোনয়ন যুদ্ধে এগিয়ে থাকবেন বলে ধারণা স্থানীয়দের। এছাড়াও হারুনুর রশিদ ও আ ন ম টিপু সুলতান নিজস্ব বলয় নিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তাদের যে কেউ মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে পারেন।
রাঙ্গুনিয়ায় বর্তমান পৌরমেয়র শাহজাহান সিকদার, জেলা বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন খান, যুবলীগের সভাপতি আরজু সিকদার এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন।
রাউজান পৌরসভায় জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান পৌরমেয়র দেবাশীষ পালিত, ভারপ্রাপ্ত মেয়র বশির উদ্দিন খান, প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত শফিকুল ইসলাম বেবীর ছেলে সাইফুল ইসলাম রানা মনোনয়ন চাইবেন। এ পৌরসভায় সংসদ সদস্যের বিপরীত মেরুতে থাকায় দেবাশীষ পালিতকে মনোনয়ন পেতে বেগ পেতে হবে। তবে তার পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের অবস্থান থাকতে পারে। অন্যদিকে সংসদ সদস্যের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত যে কেউ মনোনয়ন পেয়ে চমক লাগাতে পারেন।
সীতাকুÐে বর্তমান মেয়র বদিউল আলম, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সামাদ, ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলম, জুলফিকার আলী মাসুদ শামীম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানী, কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহেদ চৌধুরী ফারুক, সাংবাদিক ইউসুফ মনোনয়ন চাইবেন। এখানে বদিউল আলম এবারো মনোনয়ন পেতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
মিরসরাই পৌরসভার বর্তমান মেয়র গিয়াস উদ্দিন, সাবেক মেয়র এম শাহজাহান, মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার এনামুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা মিয়া মোহাম্মদ হুমায়ুন, আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ উদ দৌলা, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল মনোনয়ন চাইবেন।
বারইয়ারহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন প্রকাশ ভিপি নিজাম, আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহসান, বারৈয়ারহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর আল মাসুক, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম খোকন মনোনয়ন চাইবেন। মিরসরাই ও বারৈয়ারহাটে বর্তমান দুই পৌরমেয়র এবারো মনোনয়ন পেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। তবে সেখানে মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সমর্থনের উপর।
স›দ্বীপ পৌরসভায় বর্তমান মেয়র জাফরউল্লাহ টিটু, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোক্তাদির মাওলা সেলিম, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল মাওলা, আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম শাহ আজমীর মনোনয়ন চাইবেন। সেখানে জাফর উল্লাহ টিটু এবারো শক্তিশালী প্রার্থী। তার প্রতিদ্ব›দ্বী হতে পারেন পৌর আওয়ামী লীগের দুই নেতা।
বোয়ালখালীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম বাবুল, মনছুরুল হক পাপ্পী, পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহবায়ক জহুরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিউল আলম মনোনয়ন লাভে দৌড়ঝাঁপ বাড়িয়েছেন। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের নির্বাচী এলাকা হওয়ায় তার সমর্থনের উপর প্রার্থী হওয়া অনেকটা নির্ভর করছে।
হাটহাজারীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন নোমান, আওয়ামী লীগ নেতা শাহনেওয়াজ চৌধুরী মানিক, আজম উদ্দিন, শাহজাদা স ম এনাম মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ পৌরসভায় প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে সীমানা নির্ধারণী আইনী জটিলতায় এ পৌরসভায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নাও হতে পারে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন বাছাইয়ে কেন্দ্র যেভাবে নির্দেশনা দিবে সেভাবেই কাজ করবো। এখানে তৃণমূল যাকে চাইবে সেই মনোনয়ন পাবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘অনেকেই প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে আছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলেই আমরা দলীয় প্রার্থী যাচাই-বাছাই কাজ শুরু করবো। অবশ্যই জনপ্রিয় প্রার্থীরা যাতে মনোনয়ন পায় সেদিকে নজর রাখবো’।