আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে মহাজোটে দৌড়ঝাঁপ

99

চট্টগ্রাম-৮ আসনের বড় অংশটিই বোয়ালখালী উপজেলা ঘিরে গঠিত। আবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৩, ৪, ৫, ৫ ও ৭- এই পাঁচটি ওয়ার্ড এ আসনে সংযুক্ত। পুরো উপজেলার চেয়ে চসিকভুক্ত পাঁচ ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নটি সংযুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে। ত্রিমুখী কাটাছেঁড়ায় এভাবেই বোয়ালখালী-চান্দগাঁও নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিন্যাস হয়েছে। জয়-পরাজয়ে নগরীর ভোটাররা ফ্যাক্টর হওয়ায় প্রার্থী বাছাইয়েও এ আসনে জটিলতা বাড়ে। নানান হিসেব-নিকেশে প্রার্থী চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলগুলো।
গেল তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনটি জোটকে ছেড়ে দেয়ায় কিছুটা নির্ভার ছিল। মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতারাও জাতীয় স্বার্থে বিষয়টি মেনে নেয়। এবার প্রয়াত সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে শূণ্য ঘোষিত উপ-নির্বাচনে মহাজোটকে আসনটি ছাড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ। বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। অন্যদিকে প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে সক্রিয় হয়েছেন মহাজোটভুক্ত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও।
জানা যায়, প্রয়াত সাংসদ বাদল ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। যে কারণে গত তিনটি নির্বাচনে বাঘা বাঘা আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবর্তে বাদলকে এ আসনের মনোনয়ন দেয়া হয়। গত নির্বাচনে অসুস্থ থাকা সত্তে¡ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মইন উদ্দীন খান বাদল। বাদলের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী সেলিনা খানের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি জোরেশোরেই আলোচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সেলিনার সম্পর্কও ভালো। সম্প্রতি সেলিনা জাসদের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলে রাজনৈতিক হিসেব ওলটপালট হয়ে যায়।
প্রয়াত সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবো। আশা করি নেত্রী আমাকে বঞ্চিত করবেন না’।
মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। বোয়ালখালীর কধুরখীলের বাসিন্দা এই নেতা মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ সক্রিয় আছেন। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অন্তপ্রাণ এই নেতা দলীয়ভাবে শীর্ষপদে থাকলেও নিজ এলাকায় কখনো মনোনয়ন পাননি। দুইবার অন্য আসন থেকে মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেননি। এবার মনোনয়ন পেলে রাজনৈতিক জীবনে মোছলেম উদ্দিনের ষোলকলা পূর্ণ হবে -এমনটাই ধারণা করছেন তাঁর অনুসারীরা।
আবেগাপ্লুত হয়ে মোছলেম উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম শূন্য হাতেই আমাকে বিদায় নিতে হবে। এখন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি নেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না’।
মোছলেম উদ্দিন ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপর আছেন সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এ আসনে দুইবার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করলেও বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। পরে ২০০৮ সালে কোতোয়ালী-বাকলিয়া আসন থেকে সাংসদ হন নুরুল ইসলাম। এবারো নুরুল ইসলাম বিএসসি মনোনয়ন চাইবেন। নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামও এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করা এই নেতা সাংসদ হয়ে বাজিমাত করতে চান। ইতোমধ্যে নিজ এলাকা মোহরায় বড়ধরনের শোডাউন দিয়ে প্রার্থী হওয়ার জানান দিয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীও মনোনয়ন প্রত্যাশী। গতকাল রবিবার তিনিও বড়ধরনের শোডাউন দিয়েছেন এলাকায়।
মাঠে-ময়দানে সক্রিয় থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা যখন মনোনয়ন যুদ্ধে মেতেছেন তখন নীরবে প্রার্থীতা ভাগিয়ে নিতে চান ব্যবসায়ী এসএম আবু তৈয়ব ও সৈয়দ নুরুল ইসলাম। এসএম আবু তৈয়ব এ আসনে ২০০১ সালে নির্বাচন করা এসএম আবুল কালামের ছোট ভাই। সৈয়দ নুরুল ইসলাম এ আসনের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী আবদুচ ছালামের ছোট ভাই।
আওয়ামী লীগের এমন তোড়জোড়ে পিছিয়ে নেই মহাজোটভুক্ত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও। এই আসনে জোটের প্রার্থী হতে চান জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহাসচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু। জোটের মনোনয়ন না পেলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করবেন। এ প্রসঙ্গে জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘মহাজোট নেত্রীর সিদ্ধান্তে গত নির্বাচনে কোতোয়ালী আসনের রানিং এমপি হয়েও আসনটি ছেড়ে দিয়েছি। চট্টগ্রাম-৮ আসনে এবার নির্বাচন করবো। আমরা যেহেতু এখনো জোটে আছি সে হিসেবে আশা রাখতে পারি মহজোটের শরীক দল হিসেবে আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেয়া হবে’।
জাতীয় পার্টি ছাড়াও জোটের শরীক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এ আসনটি চেয়েছেন। ইতোমধ্যে দলের সভাপতি এসএম আবুল কালাম আজাদ নিজেকে এ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনএফ সভাপতি এসএম আবুল কালাম আজাদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনে আমাকে বিএনএফ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এখন আমি প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন প্রত্যাশা করছি। ইতোমধ্যে আমি নির্বাচনী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হতে নির্বাচনী এলাকায় চলে আসছি’।
এছাড়া প্রয়াত সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদলের দল জাসদও আসনটি প্রত্যাশা করছেন। স্ত্রী সেলিনা খান আওয়ামী লীগ প্রার্থী হতে চাওয়ার পর নিজ দলের প্রার্থী দিতে চাইছে দলটি। ইতোমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আবু মো. হাশেমকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। জাসদ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইন্দুনন্দন দত্ত পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা জোটে যখন আছি একজন প্রার্থী পছন্দ করে রেখেছি। প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর। বাদল ভাইয়ের স্ত্রী যখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার কথা বলছেন আমরা একজন প্রার্থী নিয়ে এগিয়েছি’।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তথ্য অনুযায়ী এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৮৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৬০জন ও মহিলা ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫২৮ জন। এ আসনের মধ্যে বোয়ালখালী অংশে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ১২৬ ভোট ও চসিক অংশের পাঁচ ওয়ার্ডে ৩ লক্ষ ১১ হাজার ৮৬২ ভোটার আছে। এ আসনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭০টি।