দেশে নতুন মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথের বাজার তেমন বড় নয়। দুই একবার চালান ঢুকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও অভিযানের কারণে বাজার বড় হতে পারিনি। নতুন মাদক হিসেবে সেবকও তেমন নেই। দুই-চার জন যারা সেবক, তারা সবাই উচ্চবিত্ত শ্রেণির। তারা প্রতিজন মাসে মাদক কেনেন ২-৩ লাখ টাকার। বাকি দিতে হয় না এবং লাভজনক হওয়ায় মাদকের এই ছোট বাজারে বড় গডফাদার হতে চেয়েছিলেন চন্দন রায় (২৭)। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য বলছে, গডফাদার হওয়ার লক্ষ্যে পর পর তিনবার মালয়েশিয়া থেকে আইসের চালান নিয়ে আসেন চন্দন। স্বর্ণের ব্যবসা বাদ দিয়ে মন দেন মাদকে। অল্প দিনেই পেয়ে যান অভিজাত এলাকার মাদক সেবক। পরিচিতির সঙ্গে সঙ্গে বাজার ধরারও চেষ্টা চালান তিনি। মালয়েশিয়ায় থাকা তার আত্মীয় শংকর বিশ্বাসের মাধ্যমে বিমান থেকে সংগ্রহ করেন মাদক। ছোট ছোট প্যাকেটে আসা আইস বা ক্রিস্টাল মেথ স্বর্ণ গলানোর কাজে ব্যবহার করার কাজে লাগে বলে সবাইকে জানান তিনি। ইতোমধ্যে এই মাদক বিক্রি করে অনেক অবৈধ সম্পদ গড়েছেন চন্দন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন গোয়েন্দারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘চন্দন রায়ের সঙ্গে আরও যে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা শুধু আইস মাদকের বিক্রেতা নন, সেবকও। চন্দনের কাছে থেকে প্রতিবার প্রতিজন ৩-৪ লাখ টাকার আইস মাদক কিনে থাকেন। তারা নিজেরা সেবন করেন। পাশাপাশি তাদের বন্ধুদের কাছেও বিক্রি করেন। মূলত নিজে সেবন করতেই তারা ক্রয় করেন। যে কয়বার এই চালান এসেছে, তারাই ক্রয় করেছেন।’ খবর বাংলা ট্রিবিউনের
সদ্য সাবেক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) ডিআইজি ড. এএফএম মাসুম রব্বানী বলেন, ‘চন্দন বিদেশ থেকে আইস এনে বাজার তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। আসলে আমাদের দেশে আইসের সেবক আর কারবারি সেই পর্যায়ে নেই।’
রাজধানীর জিগাতলা থেকে উদ্ধার করা নতুন মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি। খুরশীদ আলম বলেন, কেউ আমাদের কাছে জানতে চাইলে আমরা তো সে তথ্য জানিয়ে দেই। আইস সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হয়তো অবহিত করেছে।
ডিএনসি কর্মকর্তারা জানান, আইস ও ক্রিস্টাল মেথ মিহি দানাদার জাতীয় মাদক। এমডিএমএ মাদকটি এক ধরনের ট্যাবলেট। ইয়াবায় সাধারণত ২০ ভাগ অ্যামফিটামিন থাকে। তবে নতুন এই মাদকের মিথাইলের সঙ্গে শতভাগ অ্যামফিটামিন থাকে। এ জন্য বিশ্বজুড়ে এটি ভয়ংকর মাদক হিসেবে চিহ্নিত। এটি সেবনের পর মানবদেহে অল্প সময়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন এই মাদক সেবনে মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এটি হৃদযন্ত্র, কিডনি ও লিভারেরও ভয়াবহ ক্ষতি করে।
আইস-এর অন্যান্য নাম সেবু, ক্রিস্টাল ম্যাথ ডি-ম্যাথ। ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান অ্যামফেটামিন। ইয়াবায় থাকে ২০-২৫ শতাংশ অ্যামফেটামিন। আইসও তৈরি হয় অ্যামফেটামিনে। তবে আইসে অ্যামফেটামিন ব্যবহার করা হয় শতভাগ, যে কারণে ইয়াবায় যে ক্ষতি তার চেয়ে বেশি ক্ষতি আইস সেবনে। একবার আইস সেবন শুরু করলে আর এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় না।