আইন না মেনে প্লাস্টিকের মোড়ক, ক্ষতিগ্রস্ত পাটশিল্প

83

১৭টি পণ্য পরিবহন, বাজারজাত ও মজুতকালে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে প্রণীত হয় ‘পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০।’ পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে এ আইন প্রণীত হয়। তবে নগরীর পাইকারী ও খুচরা বাজারে আইন অমান্য করেই পণ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিকের মোড়ক। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাটশিল্প। তবে আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে শীঘ্রই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন।
পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এ উল্লেখ রয়েছে- ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনে, আলু, আটা, ময়দা ও তুষ-খুদ-কুঁড়া এই ১৭ পণ্য উৎপাদন, বাজারজাত ও মজুতকালে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এ আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এসব পণ্য মোড়কীকরণে পাট ব্যবহার না করে অন্য কোনো উপাদান ব্যবহার করলে কমপক্ষে এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করতে পারবেন আদালত। এছাড়াও দন্ডিত ব্যক্তি পুনরায় একই অপরাধ করলে উক্ত দন্ডের দ্বিগুণ দন্ডে দন্ডিত করতেও পারবেন আদালত।
এ আইন বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে পাট অধিদপ্তর সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার ও পোস্টার-লিফলেট বিতরণ করেছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, নির্ধারিত পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সময় পাটজাত মোড়ক ব্যবহার না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি) ও রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ইআরসি) বাতিল করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চাতাল মিল মালিকেরা পাটের বস্তা ব্যবহার না করলে নিবন্ধন বাতিল করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা ১৭টি পণ্য বিক্রিতেই ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের মোড়ক। এ হার প্রায় ৮০ শতাংশ হবে। খাতুনগঞ্জে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে প্লাস্টিকের মোড়কে চাল-ডাল সজ্জিত। এছাড়াও ব্যস্ত এ বাজার থেকে সারা দেশে পণ্য যায়। আড়ত থেকে গাড়িতে তোলা পণ্যগুলোতেও ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিকের মোড়ক। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাটের মোড়কের দেখা মিললেও তা প্লাস্টিকের মোড়কের তুলনায় নগণ্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাটকল কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, পাটের মোড়ক বা বস্তা ব্যবহারে অনেকগুলো উপকার রয়েছে। প্রথমত এটি পরিবেশ দূষণ করে না।
এছাড়াও পুনঃব্যবহার করা যায় সহজেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত ছিল পাট। সে পাট সচেতনতার অভাবে মানুষ ব্যবহার করছে না। তারা বেছে নিয়েছে প্লাস্টিক-পলেথিন। যেগুলো পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাছাড়া পাটজত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপাদান বা কাঁচামাল সবকছিু দেশের। পাটজাত পণ্য বা মোড়ক ব্যবহার করলে পরিবেশ যেমন দূষণমুক্ত থাকে তেমনি দেশের টাকা দেশেই থাকে। আইন অমান্য করে অতিমাত্রায় প্লাস্টিকের মোড়ক ব্যবহারের অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি প্রশাসনের কঠোর নজরদারির অভাবকেই দেখছেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, বাধ্যতামূলক করা পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে আমাদের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়ে আসছে। পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আরো কঠোর হবে প্রশাসন। শীগ্রই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে হবে বলে জানান তিনি।