আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে অসন্তোষ

16

তদন্তাধীন বিভিন্ন মামলায় আসামিদের মিডিয়ার সামনে হাজির করে সংবাদ সম্মেলন করার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
শুনানিকালে মিন্নির জামিন আবেদন পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, মামলা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় এসপি কিভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন? আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘ইদানিং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) করে আসামিকেও হাজির করা হচ্ছে। এর আগে, গাজীপুরের এক জঙ্গির মামলার সময় আমরা (আদালত) বলেছিলাম, আসামিদের মিডিয়ার সামনে হাজির করে বক্তব্য (সংবাদ সম্মেলন) না দিতে। কিন্তু এখন দেখছি বিভিন্ন সময় আসামিদের জ্যাকেট পরিয়ে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হচ্ছে। এ ধরনের দৃষ্টান্ত বিশ্বের আর কোনো দেশে আছে কিনা জানা নেই’।
আদালত আরও বলেন, ‘শুধু এ মামলায় না, আরও অনেক মামলায় আমরা সংবাদ সম্মেলন (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর) দেখেছি। তদন্ত পর্যায়ে এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? এসপি (বরগুনার) বলেছেন, আসামি মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন। বিচারিক জবানবন্দির আগে এসব কি পাবলিকের (সংবাদ সম্মেলন করে) সামনে বলা যায়? প্রায় দেখা যায়, তদন্ত পর্যায়ে এ ধরনের ব্রিফিং করা হচ্ছে, যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়। সে (মিন্নি) যদি দোষ স্বীকার করে, তাহলেও কি এসপির এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হয়েছে?’
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, না, এটা উচিত হয়নি। তখন আদালত বলেন, মিন্নিকে সকালে সাক্ষী হিসেবে নেওয়া হয়েছে পুলিশ লাইনে। রাতে তাকে আসামি করা হয়েছে। তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু আছে? জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মিন্নিকে অনেক পরে (মামলা হওয়ার) ডাকা হয়েছে। আদালত বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের অনেক নিয়ম রয়েছে। আগে ক্যান্টনমেন্টে ডাকা হতো। সেখানে একজন লোককে নেওয়া হলে তার মানসিক অবস্থা কি হতে পারে?
মিন্নির আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, জামিন আবেদনকারীকেও (মিন্নি) সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়েছিল। তখন আদালত বলেন, তারা (আইন শৃঙ্খলা বাহিনী) গণমাধ্যমে নানা কথা বলেন, এসব তদন্তকে প্রভাবিত করে। জানি না বিশ্বের আর কোথাও এটা (সংবাদ সম্মেলন) দেখা যায় কিনা! অতি উৎসাহী হলে নানা সমস্যা হয়। এগুলোর বিষয়ে একটা নীতিমালা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে) থাকা দরকার। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ২২ আগস্ট এ মামলায় বিচারিক আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে। সেখানে সব উঠে আসবে। এ পর্যন্ত এ মামলায় যারা ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে চার জন জবানবন্দি দিয়েছেন।
তখন আইনজীবী আমিন উদ্দিন বলেন, ১৬৪ ধারায় মিন্নির জবানবন্দি পড়লে বোঝা যায়, এটা সাজানো। একজন মানুষের কি এতো ক্ষমতা, যে তিনি এতো সুন্দর করে ঘটনার বর্ণনা দেবেন? আসামিকে যদি জামিন দেওয়া হয়, তবে কোনোভাবেই তদন্ত প্রভাবিত হবে না। তাকে ডেকে নিয়ে সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একটা মেয়েকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তার ওপর কতটা চাপ থাকে তা বোঝা যায়! এছাড়াও এ মামলার আরেক আসামিকে ১ জুলাই গ্রেপ্তারের পর ১৪ জুলাই জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে যার মধ্যে একটি বড় সময়ের ব্যবধান রয়েছে। তবে মিন্নিকে জামিন দিলে সে পালিয়ে যাবে না। তার বাবার হেফাজতে থাকবে।
এরপর আদালত মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না সে বিষয়ে জানতে চান। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জবাব দেওয়ার জন্য আদালত এক সপ্তাহের সময় দেন। এছাড়া জবানবন্দির বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। ২৮ আগস্টের মধ্যে তাকে ওই ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি এ মামলার যাবতীয় নথিসহ (কেস ডকেট বা সিডি) তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছেন আদালত।