‘অ-মা-রে ইতারে মারি ফেলাইয়্যে’

49

চকরিয়া প্রতিনিধি

লোকালয়ে হাতির উপদ্রব বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতি দেখার জন্য এখন আর বনে যেতে হয়না। যখন তখন লোকালয়ে চলে আসছে হতি। কখনো ভাঙছে বাড়িঘর, কখনো নষ্ট করছে ক্ষেত-খামারের ফসল। সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে হাতির আক্রমণে মরছে মানুষ। গতকাল সোমবারও চকরিয়ার লোকালয়ে এসে তান্ডব চালিয়েছে দলছুট এক বন্য হাতি।
ভোরে উপজেলার ভেওলা মানিকচর (বিএমচর) ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী খিলছাদক এলাকায় হাতিটি এক বনকর্মীকে ধাওয়া করে পায়ে পিষ্ট করে মেরে ফেলে। পাহাড়ি উচু জমিতে প্রায় ১০ মিনিট ধরে লোকটিকে পায়ে দলে মারে ওই হাতি। এসময় হাতি আসার খবরে উৎসুক লোকজন আশে পাশে ভিড় করে এবং অদূরে দাঁড়িয়ে হাতির মানুষ মারার দৃশ্য দেখে। এসময় বন বিভাগের আরো কিছু কর্মীকে আশেপাশে দেখা যায়। তবে কাউকে হাতির কবল থেকে ওই কর্মীকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে দেখা যায়নি। হাতিটি সরে যাওয়ার পর কৌতহলী লোকজনকে বলতে শোনা যায় ‘অ-মা-রে ইতারে মারি ফেলাইয়্যে’, ওমারে মরি গেইয়্যে ফানলার’।
এরপর উৎসুক জনতা ও বনকর্মীদের কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে লোকটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ততক্ষণে মারা যান তিনি।
জানা গেছে, ভিলেজার বলে পরিচিত নিহত বনকর্মীর নাম রহমত আলী। রহমত আলী ডুলহাজারা ইউনিয়নের ছগির শাহকাটা এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। রহমত আলী কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অধীনে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জে ‘ভিলেজার’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গ্রামে হাতি আসার খবর পেয়ে তিনি খড়ে আগুন লাগিয়ে হাতিটি তাড়াতে যান। নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে এভাবে খড়ের আগুন নিক্ষেপের পর ক্ষুব্ধ হাতিটি তেড়ে এসে তাকেই পায়ে পিষে নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলে। সোমবার সকাল থেকেই হাতিটি এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে এবং ফসলের ক্ষতি করে। ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাতিটি তাড়াতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ ও বনবিটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশের পৃথক টিম চেষ্টা চালায়।
সাক্ষাৎকালে শুধু চকরিয়াই নয় আনোয়ারা, সাতকানিয়া, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় উদ্বেগজনকভাবে হাতির উপদ্রব বেড়ে গেছে। বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে বিভিন্নস্থানে হাতি চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়া এবং বন্য পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় হাতি লোকালয়ে চলে আসছে খাবারের সন্ধানে এবং কোন কোন সময় জানমালের ক্ষতি করছে। অনেক স্থানে এ পর্যন্ত ডজনখানেক হাতির মৃত্যুও হয়েছে। তবে সম্প্রতি যেভাবে হাতির পাল লোকালয়ে হানা দিচ্ছে তাতে এ ধরনের নিরাপত্তাহীন ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানায়।