অ্যাথলেটিক ট্র্যাক মাতালেন অভাবী সংসারের মেয়ে তানিসা

33

বছর বিশেক ধরে চলাফেরা করতে পারেন না নোয়াখালীর সদর উপজেলার শ্রীপুরের আবু তাহের। ব্রেইনস্ট্রোক থেকে অবশ হয়ে গেছে একটি পা। লাঠি ভর দিয়ে কোনো রকম দাঁড়াতে পারেন। এক কথায় কাজকর্ম করতে পুরোটাই অক্ষম। আবু তাহেরের স্ত্রী কমলা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে ৮ জনের সংসারের ঘানি টেনেছেন।
চার মেয়ের মধ্যে তিনজনকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের বড়জন বিয়ে করে আলাদা। এখন ছোট ছেলে আর সন্তানদের সবার ছোট তানজিনা আক্তার তানিসাকে নিয়ে পুরোনো একটা টিনের ঘরে কোনোভাবে পার করছেন অভাবের দিনগুলো।
অভাবী সংসারের সেই কিশোরীর চোখেমুখে এখন স্বপ্ন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানো। তার এই স্বপ্নের ফুল ফুটিয়েছে ৩৫ তম জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস। কিশোরীদের ১৫০০ মিটার দৌড়ে ৫:১৭,৭৯ মিনিট সময় নিয়ে জিতেছেন স্বর্ণ। এই ইভেন্টে নোয়াখালীর কোনো অ্যাথলেটের এটাই জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণ জয়।
রফিক উল্যাহ আক্তার মিলন দেশের তৃণমূল পর্যায়ের অ্যাথলেটিক কোচ। নাজমুন্নাহার বিউটি, সামসুন্নাহার চুমকি, সুমিতা রানী, সামসুদ্দিন ও মাহফুজুর রহমান মিঠুসহ অনেক অ্যাথলেট তৈরি এই মিলনের হাতে। আর নোয়াখালীর হয়ে ১৫০০ মিটার দৌড়ে প্রথম স্বর্ণ জেতা তানিসাকে আবিষ্কার করেছেন তার স্ত্রী শাহিন আক্তার। যিনি নোয়াখালী আহমদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল টিচার। ওই বিদ্যালয়েই ষষ্ঠ শ্রেডুর ছাত্রী তানজিনা আক্তার তানিসা।
স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভালো দৌঁড়ায়। দুইবার দ্বিতীয় হয়েছেন। তা দেখেই তাকে অ্যাথলেটিক কোচ স্বামী রফিক উল্যাহ আক্তার মিলনের হাতে তুলে দেন শাহিন আক্তার। মিলন সাহস বাড়াতে গত সামার অ্যাথলেটিকসে সিনিয়রদের সঙ্গে ৩০০০ মিটার দৌড়ে নামিয়ে দিয়েছিলেন তানিসাকে।
জুনিয়র মিটে ৩০০০ মিটার ইভেন্ট নেই। তানিসা খেলেছেন ৮০০ ও ১৫০০ মিটার দৌঁড়ে। এর মধ্যে ১৫০০ মিটারে জিতেছেন স্বর্ণ।