অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে শরীরে বাসা বাঁধছে দুরারোগ্য ব্যাধি

1

হাটহাজারী প্রতিনিধি

মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়তই খাদ্য গ্রহণ করে। তবে সম্প্রতি হাটবাজার থেকে মানহীন ভেজাল খাদ্যপণ্য কিনে একদিকে মানুষ তথা ক্রেতাসাধারণ ঠকছেন। অন্যদিকে এসব ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে পড়ছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। পাশাপাশি মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে দুরারোগ্য ব্যাধি-এমনটা দাবি করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এসব ভেজাল আর মানহীন পণ্য থেকে কোনো অবস্থাতেই যেন রেহাই মিলছে না। তাই ক্রেতাসাধারণ এ নিয়ে চরমভাবে উদ্বিগ্ন। গত শনিবার হাটহাজারী পৌরসভার ও উপজেলার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব বাজারে মানসম্পন্ন পণ্যের চেয়ে মানহীন পণ্যের সয়লাব ঘটেছে। নির্ধারিত পণ্যের উৎপাদন বা বাজারজাত করার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) নিয়মনীতি। যদিও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের তেমন কোনো নজরদারি চোখে পরেনি। সূত্র জানায়, ৭ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু রায়হান এবং র‌্যাব-৭ এর সিপিসি-২ হাটহাজারী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। এ সময় খাদ্যপণ্য উৎপাদনে নানা অনিয়ম ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য মজুত রাখা ও বিএসটিআই অনুমোদনহীন পণ্য বাজারজাত করার অপরাধে পৌরসভার বাসস্টেশনের খাজা বেকারিকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, কাঁচাবাজার সংলগ্ন আলাউদ্দিন বেকারিকে ৭৫ হাজার ও মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকারহাট বাজারের ঘোস সুইটসকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ওই সময় চট্টগ্রাম জেলার বিএসটিআই কর্মকর্তাসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেই থেকে অদ্যাবধি আর কোনো ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়নি।
সেই সুযোগে পৌরসভা ও উপজেলার হাটবাজারগুলোতে অধিক মুনাফা লাভের আশায় অসাধু ভেজাল পণ্যের কারবারিরা মানসম্পন্ন পণ্যের চেয়ে মানহীন পণ্যে বাজার সয়লাব করেছে। সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা গেছে, পৌরসভার ও উপজেলার বেশ কয়েকটি খাদ্য তৈরির কারখানাগুলোতে রয়েছে নোংরা, অস্বাস্থ্যকর ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এবং কর্মচারীরা কাজ করছেন উদম শরীরে। কর্মচারীদের শরীরের ঘাম তৈরিকৃত খাবারে পড়লেও সেদিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। এছাড়া মানবদেহের ক্ষতির কারণ রং, কেমিক্যালসহ নানা উপাদানযুক্ত ভেজাল এবং বিষাক্ত খাদ্যের কাছে জিম্মি এখন উপজেলার সব শ্রেণিপেশার মানুষ। খাদ্যে ভেজাল মেশানোকে জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি জানিয়ে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ হোসাইন বলেন, বাজারে ভেজালমুক্ত খাদ্য সামগ্রী পাওয়াটাই কষ্টকর। বাজারজাত করা খাদ্য সামগ্রী ভেজাল ও বিষাক্ত কেমিক্যালের সংমিশ্রণে তৈরি। এসব ভেজাল খাদ্য খেয়ে প্রতি বছর জীবনঘাতী রোগের বিস্তার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এর ফলে পাকস্থলীর প্রদাহ, ক্যান্সার, চর্মরোগ, লিভার ও কিডনি সংশ্লিষ্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহিদুল ইসলাম জানান, ভোজল খাদ্য তথা অসাধু ব্যবসায়ীদের এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া বাজার মনিটরিং এর অংশ হিসেবে বিষয়টি আমরা আমলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকি। এরমধ্যে খাদ্যে ভেজাল বা নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা বা খাদ্য দ্রব্য বাজারে বিক্রি এমন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।