অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্যের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে : ফখরুল

17

ঢাকা প্রতিনিধি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম এবং সরকারের অব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেশনের যাঁতাকলে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। জ¦ালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সারাদেশে আগুন জ¦লছে। জ¦ালানির মূল্য যদি বাড়াতেই হতো সরকার তা সহনীয়ভাবে ধাপে ধাপে বাড়াতে পারতো। বুধবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সরকারের কিছু সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীচক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে।
ফখরুল বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম এবং সরকারের অব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেশনের যাঁতাকলে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এ সরকারের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নেই। তারা জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ এ সরকারের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারকে রাজপথের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে সত্যিকার অর্থে জনমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করি।
ফখরুল বলেন, বর্তমানে নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র আমরা সবাই জানি। আমরা যতটা তিক্তভাবে বাজারের মুল্যবৃদ্ধি অনুভব করতে পারি, তা সরকার কখনোই অনুভব করতে পারবেন না। আর পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সরকারের মদদপুস্ট সিন্ডিকেটকারীদের ভ‚মিকার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। মূল্যবৃদ্ধির এই দুর্নীতিবাজচক্রের সম্পর্ক রয়েছে সরকারের লোকজনের সঙ্গে। আর বর্তমান সরকারকে মূলত চালাচ্ছেই এক ধরনের স্বার্থান্বেষী অর্থপিপাসু বণিক সমাজ। কিন্তু সরিষায় ভ‚ত থাকলে ভ‚ত তাড়াবে কে? রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তখন যা হবার তাই হচ্ছে দেশে। এবারের বাজেটের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়।
ফখরুল বলেন, মাসাধিককাল থেকেই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের নেতিবাচক প্রভাবে এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল ও ভোগ্যপণ্যসহ সকল পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ভোক্তারা যখন দিশেহারা তখন হঠাৎ করে বিনা নোটিশে রাতের অন্ধকারে জ¦ালানি তেলের দাম নজিরবিহীন বৃদ্ধি করে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। কারণ এর প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেশি বেড়ে গেছে। এই মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি। এত বেশি মূল্যবৃদ্ধি এর আগে আর কখনও হয়নি। ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম একবারে শতকরা ৪৫ ভাগ থেকে ৫১ ভাগ বাড়িয়েছে সরকার। জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে দেশের মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতির কফিনে শেষ পেরেকটুকু ঠুকে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সর্বক্ষেত্রে। গরিব সীমিত আয়ের মানুষেরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষেও টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গণপরিবহন থেকে কাঁচাবাজার- সর্বক্ষেত্রে কয়েকগুণ মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে সবাই। প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে, তারা মিছিল করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, জ¦ালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সারাদেশে আগুন জ¦লছে। জ¦ালানির মূল্য যদি বাড়াতেই হতো সরকার তা সহনীয়ভাবে ধাপে ধাপে বাড়াতে পারতো। হঠাৎ করে রাতের আঁধারে একবারে এত বেশি দাম বৃদ্ধিতে জ¦ালানি ব্যবহার সংশ্লিষ্ট সকলেই হতচকিত হয়ে পড়েছে। বিশ^বাজারে জ¦ালানির দাম যখন ১৩০ ডলার থেকে ৯০ ডলারে নেমে এসেছে এবং আরো কমে আসছে। আর বাংলাদেশে জ¦ালানির মূল্য এক লাফে এত বেশি বৃদ্ধি করা হলো। মূলত এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় জ¦ালানি তেলের দর বাড়ানোর টেকনিক নিয়েছে সরকার। তবে এক লাফে এত বেশি মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অমানবিক। অবিবেচক সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপরিণামদর্শিতার দায় পুরোপুরি সাধারণ মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হলো।
ফখরুল বলেন, জ¦ালানি তেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা কর আদায় করে সরকার। প্রকারান্তরে যার দায়ভার পড়ে ভোক্তা পর্যায়ে জনগণের উপর। এই দুর্যোগকালে সাময়িক সময়ের জন্য জ¦ালানি আমদানিতে কর আদায় মওকুফ করা হলে আকাশ ভেঙ্গে পড়তো না। সরকারের রাজস্ব বিভাগ তো সরকারেরর অংশ। সরকার চাইলেই এনবিআর এই কর মওকুফ করতে পারে। কিন্তু সরকার তা করেনি, করবেও না। তাদের তো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর টাকা লাগবে। আর এনবিআরকেই জনগণের পকেট কেটে ঐ টাকা যোগাড় করে দিতে হয়।
ফখরুল বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বিশ^বাজারে যখন জ¦ালানি তেলের মূল্য অনেক হ্রাস পায়, তখন বাংলাদেশে জ¦ালানি মূল্য কিন্তু কমানো হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে বিপিসি বিশ^বাজার থেকে কম দামে জ¦ালানি কিনে এনে দেশে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেছে। এভাবে বিপিসি প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা প্রফিট করেছে। ঐ লাভের টাকা থেকে বর্তমানে তেল আমদানির অর্থ যোগান দিতে পারে সরকার। কিন্তু সরকার তা করবে না। জনগণের কাঁধে চাপানোই তাদের জন্য সহজ পথ। সরকার ভোক্তাদের কাছে গ্যাস বিক্রির সময় গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের কথা বলে গত কয়েক বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা জিডিএফ ফান্ডে জমা করেছে। কথা ছিল এ অর্থ নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কারে ব্যয় করা হবে। কিন্তু সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এতদিন বঙ্গোপসাগর বা সারাদেশে গ্যাস উত্তোলনে কোন অর্থ ব্যয় না করে দলীয় ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে লাভবান করার জন্য বরং বেশি দামে এলএনজি আমদানিতে অর্থ ব্যয় করেছে। এখন এই জিডিএফ ফান্ড থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে এলএনজি কিংবা তেল আমদানি করছে বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।