অস্থির বাজার ব্যবস্থা দাম ও ভেজাল শাসনে কার্যকর ব্যবস্থা জরুরি

14

 

কৃষি উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপসমূহ সন্তোষজনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের কৃষি উৎপাদনে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভর্তুকির পাশাপাশি খাদ্যশস্য আমদানিতে আমদানিকারকদের বহু সুযোগ সুবিধা প্রদান করে চলেছেন। দেশ ও দেশের মানুষ খাদ্যের সংকট হতে মুক্ত থাকুক এমন আশা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর। যে কারণে দেশে ভয়াবহ খাদ্য সংকট সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। উৎপাদন সন্তোষজনক এবং আমদানিও চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে চলছে। সরকারি হিসাব মতে দেশে ভোজ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকারই কথা। চাল, গম, ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল, মাছ, মুরগি, চিনি ইত্যাদির মূল্য কোন সময় অন্তত ছয় মাস স্থিতিশীল থাকতে দেখা যায়নি। এমন হবার কথা নয়। দেশের বাজার ব্যবস্থায় স্বস্তি কখনো ফিরে আসছে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেশের মানুষ কোন সদোত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।
কৃষকরা দেশের কৃষি উৎপাদনের সাথে জড়িত। ‘উৎপাদন বাড়লে দাম কমবে’ এটা অর্থনীতির সূত্র। উৎপাদন বাড়ার পর দাম না কমে বরং বাড়তে দেখা যাচ্ছে এটা তো অর্থনীতির সূত্রকে কবরস্থ করার হিসাব। আমরা দেখতে পাচ্ছি কৃষক উৎপাদন বাড়ালেও তার সুফল কৃষকরা পাচ্ছে না। কেননা উৎপাদিত খাদ্যশস্যের বাজার কৃষকদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এক শ্রেণির আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগী কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। অপরদিকে আমদানি শুল্ক সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূর্তুকি দিয়ে কমিয়ে দিয়ে দেশের বাজারে আমদানি পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে চায়। অথচ আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা সরকারের নিকট হতে শুল্ক গ্রহণ করে লাভবান হবার পাশাপাশি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অস্থিতিশীল করে তুলছে খাদ্যপণ্যের বাজার। দেশের বাজার ব্যবস্থায় যেকোন রকম স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না, তার পেছনে কে বা কারা দায়ী তা সরকার ও বিশেষজ্ঞদের কাছে অস্পষ্ট নয়। যেকোন সরকার ভোগ্যপণ্যের দাম শাসনে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে সে সরকারকে দেশশাসনে সফল বলা যায় না। সরকার যারা চালায় তারা দেশের মানুষ। সরকারের স্থানীয় পর্যায়ে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হলে সেই ব্যর্থতার কুফল ভোগ করতে হয় দেশের সাধারণ জনগণকে।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায়Ñ দেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান সন্তোষজনক। অথচ পণ্যের দাম সে তুলনায় বেশি। অন্যদিকে বাজারে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের মধ্য ভেজালের সয়লাব চলছে। এর দায়ভার কেউ ঘাঁড়ে নিতে চায় না। আমরা জানি দেশের কোন সেক্টরই সরকারি ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে নয়। দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের অসংখ্যÑ কলকারখানা, মিলফ্যাক্টরি আছে। তাদের দেখভাল করার জন্য বিএসটিআই’র মতো প্রতিষ্ঠানও আছে। দেশে এমন বহু খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সরকারের নিকট হতে অনুমোদন গ্রহণ না করে খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে বাজারে ভেজাল পণ্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতার যথেষ্ট অভাব দেখা যাচ্ছে। ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ কিংবা ভোক্তাঅধিকার সংরক্ষণের প্রক্রিয়া বিষয়ে দেশে যথেষ্ট ঘাটতি দেখা যায়। বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদনে দেশে খাদ্যের মজুদ এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের যেমন বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে, তেমনি অস্থিতিশীল খাদ্যদ্রব্যের বাজার এবং ভেজাল দ্রব্যের কারণে ভোক্তাদেরকে একটি অসাধু পক্ষের ঠকানোর কথাও স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে।
সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ খাবার অপরিহার্য। বাজারে পর্যাপ্ত খাবার কিংবা খাদ্যদ্রব্য পাওয়া গেলে হবে না, গণস্বাস্থ্য রক্ষায় ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ভেজাল খাদ্য খাওয়ার ফলে গণস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি সাধিত হবে তার দায়ভার সংশ্লিষ্টদের বহন করতে হবে। একটি স্বাধীন জাতির বাজার ব্যবস্থায় যে লাগাতার অস্থিরতা বিরাজ করছে তা আর কদিন চলবে আমরা জানিনা। এমন অবস্থাতে একটি দেশের বাজার ব্যবস্থা চলতে পারে না। অস্থিতিশীল বাজার দর ও ভেজাল পণ্যের ভয়াবহ খপ্পর থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহের দায়বদ্ধতার সাথে কাজ করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না করে অসাধু সিন্ডিকেটের ইচ্ছানুরূপ মূল্য বাড়িয়ে দেয়ার কারণে সাধারণ জনগণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যাতে প্রমাণিত হয় সরকারের পক্ষভুক্তরা বাজার দরের ঊর্ধ্বগতি ও অস্থিতিশীলতাকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে অসাধু ব্যবসায়ী এবং দেশের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সৃষ্টিকারীদের উৎসাহিত করছে। এভাবে দায়সারা এবং অমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশের খাদ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়।
আমরা লক্ষ করেছি বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের দাম অস্থিরভাবেই চলছে। এর জন্য বিগত কোন সরকার যেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তেমনি দেশের দুর্নীতিবাজ, অসাধু ব্যবসায়ী, গুদামজাতকারী সিন্ডিকেট এবং ভেজাল দ্রব্য সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের শাস্তিমূলক কার্যকর ব্যবস্থার অভাবে ব্যর্থ হতে চলেছে দীর্ঘদিনের ব্যাপক অর্জন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠুক। জনগণ মোটা ভাত মোটা কাপড়ে সুস্থ শরীর সংরক্ষণ করে বেঁচে থাকুক। দেশের গণস্বাস্থ্যের উন্নতি এবং উন্নয়নের স্বার্থে অসাধু ব্যবসায়ীদের অশুভ লাগাম টেনে ধরে দেশের বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যথাযথ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দেশের ব্যবসায়ীরা মানব কল্যাণে ব্যবসা করার মানসিকতায় প্রত্যাবর্তন করবে এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের মানবকল্যাণে ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করতে জাতীয়ভাবে সচেতনতার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।