অস্থির পেঁয়াজের বাজার

47

ভারতে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়ার সাথে সাথে দেশের বাজারেও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ফলে বাজারে পেঁয়াজের দামে এখন ঊর্ধ্বগতি। এ অবস্থায় মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রæত সরবরাহ এবং তুরস্ক ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেই এর দাম কমবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ থেকে পেঁয়াজের বাজার মনিটরিং করা হবে বলেও জানা গেছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, দেশের আমদানিকারক এবং ডিলারদের নিয়ে আগামীকাল সোমবার বৈঠক করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে দাম কমানোর ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।
জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা প্রতি মেট্রিকটন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ন্যূনতম ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। এর বিকল্প হিসেবে দেশে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে। তবে চাহিদার তুলনায় তা কম। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও দেশে পেঁয়াজের মূল্য ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা প্রতি কেজি। ভারতের বন্যা পরিস্থিতি এবং সীতাকুন্ডের ওজন স্কেলকে কেন্দ্র করে দামের এ ঊর্ধ্বগতি।
দেশের পাইকারী বাজারে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম তিনবার উঠানামা করেছে। পাইকারী বাজারে দামবৃদ্ধির কথা শুনে খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করেন। পরবর্তীতে দাম কমলেও তারা আর কমাননি। বর্তমানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা দামে।
জানা গেছে, ভারতে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ঘোষণার আগে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে টনপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ ডলার দরে পেঁয়াজ আমদানি করেছিলেন। এখন সেই পেঁয়াজের আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৮৫০ ডলার। ফলে তা দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে প্রভাব পড়েছে।
খাতুনগঞ্জ পাইকারী বাজারে গিয়ে জানা যায়, গত বুধবারে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি হলেও একদিনের মাথায় ১০ টাকা বেড়ে বৃহস্পতিবার ৫৫ টাকা ও গতকাল শনিবার ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ভারতের পেঁয়াজ। কিন্তু মিয়ানমারের পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। তবে মিয়ানমার থেকে পুরোদমে পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, ভারতের মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশসহ যেসব অঞ্চলে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, সেখানে ভয়াবহ বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই সেখানে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিলে রপ্তানিমূল্যও বাড়তে থাকে।
ব্যবসায়ী এমদাদুল হক রায়হান বলেন, ভারত সরকার পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছে। এত উচ্চ মূল্যে পেঁয়াজ কখনো বাংলাদেশে রপ্তানি করেনি ভারত সরকার।
জানা গেছে, সাধারণ ভোক্তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ তুললেও তা মানতে নারাজ ডিলার ও আড়তদাররা।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার মলিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন বলেন, সরকার চলতি বছরের বাজেটে রাজস্ব বাড়িয়েছে। তাই ভোগ্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। এছাড়া চীন ও ভারত থেকে কাঁচামালের আমদানি এবং দেশীয় উৎপাদন কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এখানে কারও হাত নেই। আবার কেউ কোন সিন্ডিকেটও করে রাখেনি।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল বলেন, ভারতে বন্যার কারণে দাম বাড়তি হওয়ায় দেশের বাজারে পেঁঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সীমান্তের ওখান থেকে আমদানিকারকরা যে দর নির্ধারণ করে দিচ্ছে, আমরা সে দরে কমিশনে পেঁঁয়াজ বিক্রি করছি। এতে আমাদের মত ব্যবসায়ীদের কোন হাত নেই।
খাতুনগঞ্জের পিএম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. এমদাদুল হক রায়হান বলেন, সম্প্রতি ভারতে বন্যার কারণে সে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আমরা ভারত নির্ভর হওয়ায় নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করছি। ফলে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি হলে অন্যদেশ থেকে আমদানি করা যায় কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতে যে এলসি দর নির্ধারণ করে রেখেছে, তা অনলাইনে হওয়ায় অন্যান্য দেশের নজরে আসে। সুতরাং একদেশ বাড়িয়ে দিলে অন্যদেশও বাড়িয়ে দেয় দাম।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার মলিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন বলেন, ভারতে দামবৃদ্ধির ফলে আমরা আমদানি নির্ভর হয়েছি মিয়ানমারের উপর। সেখান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ও অন্যান্য পণ্য টেকনাফ বন্দর থেকে খালাস করতে সময় লাগছে। আর এ সময়ের কারণে দেশের বাজারে প্রভাব পড়ছে। এছাড়া তুরস্ক এবং মিশর থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। আমদানি শুরু হলেই দাম আরও কমবে।
আড়তদারদের পেঁয়াজ মজুত করে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। এটি দ্রæত পঁচে যায়। যা বিক্রি করার তা অল্পদিনের মধ্যেই বিক্রি করতে হয়। সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই দাম আবার কমে যাবে।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি বলেন, চট্টগ্রামের পেঁয়াজের পাইকারী ও খুচরা বাজারে রবিবার থেকে মনিটরিং শুরু হবে। এ সময় বাজারে কোন অনিয়ম পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।