অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে রেহাই নেই

35

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, সরকারের নির্দেশনায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে জঙ্গিবাদ প্রায় নির্মূল হয়ে গেছে। ক্যাসিনো, মাদক, সন্ত্রাস পুরোপুরি নির্মূল করতে না পারলেও কতটুকু প্রশমিত করা যায় সে বিষয়গুলো প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেখতে হবে। ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ভোলার ঘটনায় সরকার কাউকে ছাড় দেবে না। এ ঘটনাকে ইস্যু করে এখানে কেউ কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি বা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হলে রেহাই নেই। সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রাম বিভাগের প্রত্যেক জেলায় অতিরিক্ত নজরদারী বাড়ানোর মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। হাটহাজারীর ও অন্যান্য এলাকার মাদ্রাসা এবং মঠ-মন্দিরগুলোতে পুলিশের পর্যাপ্ত ফোর্স দেয়া হয়েছে, বিজিবিও নামানো হচ্ছে। মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিদিন পেঁয়াজ আসলেও বাজার অস্থির। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অসাধু ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা আমাদের দায়িত্ব। গুদামে পেঁয়াজ মওজুদ রয়েছে কি না তা নজরদারীর পাশাপাশি প্রতিদিন পাইকারী ও খুচরা বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা, জেলা প্রশাসক সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস পৃথক সভাগুলোর আয়োজন করে। বিগত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইনামুল হাসান, মো. মোজাম্মেল হক ও মো. মামুন।
তিনি বলেন, টাস্কফোর্সের সকল অভিযানগুলো সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। এ অভিযানগুলো আরো জোরদার করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদেরকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। মাদক, চোরাচালান, ছিনতাই, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, চুরি-ডাকাতি, ইভটিজিং, জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও অন্যান্য অপরাধে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মামলা রুজু হচ্ছে। বিচারক সংকট, ধার্য্য তারিখে মামলার শুনানী না করা, আইনজীবীদের ব্যস্ততা ও বিভিন্ন কারণে আদালতগুলোতে মামলার জট লেগে আছে। মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে বাদী-বিবাদীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। অনেকে তাদের মামলার অগ্রগতি বিষয়েও অবগত নন। বিচার প্রার্থীরা বছরের পর বছর ঘুরে বেড়াচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পেন্ডিং মামলাগুলো দ্রæত নিস্পত্তি করা যা কিনা তা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে তেল পাচার রোধে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথে বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল আরো জোরদার করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটতে পারবে না। সরকারের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অমান্য করা যাবে না।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রত্যেক জেলায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার, চোরাচালানরোধ, জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভোলার ঘটনার মতো এখানে যাতে কেউ সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকার মাদ্রাসাগুলোকে কড়া নজরদারীতে রাখা হয়েছে। এছাড়া আদালতে পেন্ডিং থাকা মামলা গুলো দ্রুত নিস্পত্তি করতে হলে বিভিন্ন মামলার স্বাক্ষীদেরকে আদালতে হাজির করতে মামলা পরিচালনাকারী পিপিদেরকে ভূমিকা রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, ওয়াসা, সিটি করপোরেশনের রাস্তা খোড়াখুড়ির ও কাটাকাটির কারণে নগরীর সড়কগুলোতে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে যানজট নিরসন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। কোন ঘটনাকে পুঁজি করে নগরীতে কোন ধরনের আইন-শৃংখলার ঘটতে দেয়া হবে না। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক সভাগুলোতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, বিভাগীয় স্থানীয় সরকার পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার ব্রি. জেনারেল মো. আমীরুল ইসলাম সিকদার, ডিজিএফআই’র পরিচালক ব্রি. জেনারেল মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ ভূইয়া, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হাবিবুর রহমান, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন (চট্টগ্রাম), তন্ময় দাস (নোয়াখালী), একেএম মামুনুর রশীদ (রাঙামাটি), মো. মাজেদুর রহমান খান (চাঁদপুর), আবুল ফজল মীর (কুমিল্লা), মো. কামাল হোসেন (কক্সবাজার), মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম (বান্দরবান), অঞ্জন চন্দ্র পাল (ল²ীপুর), প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস (খাগড়াছড়ি), মো. ওয়াহিদুজ্জামান (ফেনী), হায়াত-উদ-দৌলা (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক প্রফেসর ড. গাজী গোলাম মওলা, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-মহাপরিচালক মো. সামছুল আলম, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী, রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদার, সড়ক পরিহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চল কমিটির সভাপতি মৃনাল চৌধুরী, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. আবদুল মান্নান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন, প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সুলতান মিয়া, বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, চট্টগ্রাম জেলা পিপি এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, চোরাচালান নিরোধ ট্রাইবুন্যালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট হরিপদ চক্রবর্তী, মহানগর পিপি এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী, কোস্টগার্ডের জোনাল কমান্ডার মোহাম্মদ রেদওয়ান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অঞ্জনা ভট্টাচার্য্য প্রমুখ। পৃথক সভাগুলোতে বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি