অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ীও আছে কমিটিতে

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আওতাধীন নবগঠিত ১৯ কমিটি নিয়ে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। এসব কমিটিতে ইয়াবা ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী, সরকার বিরোধী ব্যক্তি ও চাঁদাবাজকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও একই ব্যক্তিকে ওয়ার্ড ও থানার দুটি কমিটিতেই রাখা হয়েছে। গতকাল বিকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ১২ নেতা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিটির সহ-সভাপতি সুজিত দাশ। তবে এক বিজ্ঞপ্তিতে গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে আগামী এক মাসের মধ্যে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
লিখিত বক্তব্যে সুজিত দাশ বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা মানেননি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কমিটিতে রাখতে ৮০০ থেকে ৮৫০ জন নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিলেও সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়নি। বেশিরভাগকে কমিটিতেও রাখা হয়নি। এই দুইজন নেতা নিজেদের মাইম্যান সৃষ্টির নেশায় বুঁদ হয়ে পুরানো ত্যাগী কর্মীদের স্বপ্নকে গলাটিপে হত্যা করেছেন।
তিনি বলেন, কমিটিতে অস্ত্র, খুন, মাদক মামলার আসামিকে রাখা হয়েছে। একই ব্যক্তিকে থানা ও ওয়ার্ডের উভয় কমিটির দায়িত্বে রাখা হয়েছে। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগিতা সংগঠনের সাথে অতীতে জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনে হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটিতে স্থান পাওয়া বেশ কয়েকজন নেতার বিতর্কিত কর্মকান্ডের তথ্য দেয়া হয়। এসব তথ্য দেখা যায়, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাবুদ্দিন শাবু ২০১৪ সালে ইয়াবাসহ পতেঙ্গা মডেল থানায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মাহাফুজুর রহমান তুহিন নামে এক নেতাকে সদরঘাট থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অতীতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা মোহাম্মদ দিদার নামে একজনকে আকবরশাহ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। পতেঙ্গা সৈকতে দোকান বসানো নিয়ে চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত মাসুদ করিমকে পতেঙ্গা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি করা হয়েছে। মো. আরমান হোসেন নামে এক নেতা সরকারবিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এখন পাহাড়তলী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। ২০১৪ সালের আগে আরমান ফেসবুকে আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন নিউজ নিজের ফেসবুকে শেয়ার করতেন। তার বিরুদ্ধে মারধর ও অপহরণের অভিযোগ আছে। চকবাজার ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রাজুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে এবং দাগি আসামি। এ কমিটির প্রচার সম্পাদক শফিউল আজম ওয়ার্ড ও থানা দুটি কমিটিতেই রাখা হয়েছে। শফিউল থানা কমিটির সদস্য। পাহাড়তলী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজন সর্ববিদ্যা ২০১৯ সালে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাঈনউদ্দিন ফরহাদ একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসা, অপহরণ, চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন মহিউদ্দিন ফরহাদ। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল ইসলাম জাবেদের বিরুদ্ধে অস্ত্রবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। চান্দগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও আছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, মনোয়ার জাহান মনি, মুহাম্মদ আজিজ মিসির, আব্দুর রশিদ লোকমান, মিনহাজুল আবেদীন সায়েম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সরফরাজ নেওয়াজ চৌধুরী রবিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ খান, মো. সালাউদ্দিন।
এদিকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়ে একাংশের সংবাদ সম্মেলনের পর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের ঘুম ভেঙেছে। গতকাল বিকালে দুই নেতা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নবগঠিত ১৯ থানা ও ওয়ার্ড কমিটির কোন নেতৃবৃন্দের নামে রাজনৈতিক গঠনতন্ত্র বিরোধী অভিযোগ থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রতিজন পদপ্রত্যাশী দুই হাজার টাকাসহ জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এসব আমরা এ টাকা নেয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলাম। এ টাকা কোথায় গেছে খবর নিতে পারেন। জমা দেয়া জীবনবৃত্তান্তগুলো যাচাই বাছাই করা হলে বিতর্কিত কেউ কমিটিতে আসতো না।