অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে স্বপ্নের ফাইনালে ইংল্যান্ড

36

কম রানে আটকে মঞ্চ তৈরি করেই রেখেছিলেন ক্রিস ওকস, জফরা আর্চার ও আদিল রশিদরা। বাকি কাজটা সারলেন ব্যাটসম্যানরা। ব্যাট-বলের ছন্দময় পারফরম্যান্সে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে আট উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে ২৭ বছর পর আবারও বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ড। টস জয়ী অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দেয় তারা ২২৩ রানে। রান তাড়ায় জয় ধরা দিয়েছে ৩২ ওভার ১ বলেই।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া আগে সাতবার সেমিফাইনাল খেলে হারেনি কখনই। তবে ইংল্যান্ড দল তো গত চার বছরে অনেক ইতিহাসই লিখিয়েছে নতুন করে! এবার চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীদের অচেনা স্বাদ উপহার দিল তারা। আগামী রবিবার লর্ডসের ফাইনালে ইংলিশদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, শিরোপার স্বাদ পায়নি কোন দলই। বিশ্বকাপ ক্রিকেট তাই নিশ্চিতভাবেই পাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়ন।
২২৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংলিশ দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো এবং জেসন রয় তুলে নেন ১২৪ রান। ১৮তম ওভারে মিচেল স্টার্কের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন বেয়ারস্টো। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। তার আগে ৪৩ বলে পাঁচটি চারের সাহয্যে বেয়ারস্টো করেন ৩৪ রান। আর এই উইকেট নেওয়ার মধ্যদিয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ২৭টি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন অজি পেসার স্টার্ক। এর আগে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ২৬টি উইকেট নিয়ে চূড়ায় বসেছিলেন অজি কিংবদন্তি পেসার গেøন ম্যাকগ্রা।
দলীয় ১৪৭ রানের মাথায় ‘বিতর্কিত’ এক ক্যাচে বিদায় নেন জেসন রয়। তার আগে ৬৫ বলে ৯টি চার আর ৫টি ছক্কায় করেন ৮৫ রান। জো রুট ৪৬ বলে আটটি চারে ৪৯ রানে এবং চার নম্বরে নামা দলপতি ইয়ন মরগান ৩৯ বলে আটটি চারে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে নেমেছিল টস জিতে। আগে ব্যাটিংয়ের ইচ্ছে ছিল ওয়েন মর্গ্যানেরও। তবে নতুন বলের দুই বোলারের বোলিং দেখে নিশ্চয়ই টস হারকে আশীর্বাদ মনে হয়েছে ইংল্যান্ড অধিনায়কের! ইনিংসের প্রথম বলে বাউন্ডারিতে শুরু করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। এরপর থেকেই ওকস ও আর্চারের দাপট।
ইনিংসের দ্বিতীয় আর নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই আর্চার ফেরান অ্যারন ফিঞ্চকে। টুর্নামেন্টে পাঁচশর বেশি রান করা অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ফিরেছেন শূন্য রানে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আরেক ওপেনারকে ওয়ার্নারকে ৯ রানে থামায় ওকসের বাড়তি লাফানো বল।
চোট পাওয়া শন মার্শের বদলি হিসেবে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া পিটার হ্যান্ডসকম সুযোগ পেয়ে যান সেমিফাইনালে খেলার। কিন্তু রাঙাতে পারেননি বিশ্বকাপ অভিষেক। ওকসকে শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড। সপ্তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৩ উইকেটে ১৪। ওকস ও আর্চারের বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া ছিল প্রায় দম বন্ধ অবস্থায়। দুই প্রান্ত থেকে দুজন মিলে টানা করেছেন ১১ ওভার। অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৩ উইকেটে ২৮। বোলিং পরিবর্তনের পর একটু শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পান ব্যাটসম্যানরা। স্মিথ ছন্দ পেতে শুরু করেন। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামা অ্যালেক্স কেয়ারিও ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে সঙ্গ দেন।
দুজনের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। আর্চারের বাউন্সার কেয়ারির থুতনিতে ছোবল দিয়ে রক্তাক্ত করার পর ব্যান্ডেজ বেঁধে ব্যাটিং চালিয়ে যান এই কিপার ব্যাটসম্যান। ১০৩ রানের জুটির শেষটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য হতাশার। দারণ খেলতে খেলতেই রশিদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন ৪৬ রান করা কেয়ারি।
ওই ওভারেই আসে আরেকটি উইকেট। মার্কাস স্টয়নিসের বাজে সময় দীর্ঘায়িত হয় রশিদের গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে আউটে।
সাতে নামা ম্যাক্সওয়েল চেষ্টা করেছেন নিজের মতো ব্যাটিংয়েই। তাকে ফেরাতে আর্চারকে আক্রমণে ফেরান মর্গ্যান। আর্চার অধিনায়ককে কাক্সিক্ষত উইকেট এনে দেন দারুণ এক ¯েøায়ারে।
এক প্রান্তে অসহায় দাঁড়িয়ে থাকা স্মিথ এরপর সঙ্গী পান মিচেল স্টার্ককে। দুজন মিলে দুইশ পার করান দলকে। অষ্টম উইকেটে গড়ে ওঠে ৫১ রানের জুটি। শেষ দিকে হয়তো রান আরেকটু বাড়াতে পারতেন স্মিথ। কিন্তু কিপার জস বাটলারের সরাসরি থ্রো তাকে থামিয়ে দেয় ৮৫ রানে। পরের বলেই বিদায় নেন ২৯ রান করা স্টার্ক। শেষ দিকে তাই আর বেশি বাড়েনি অস্ট্রেলিয়ার রান।
নতুন বলে আগুন ঝরিয়েছেন ইংলিশদের দুই পেসার ক্রিস ওকস ও জফরা আর্চার। গতি, বাউন্স আর ছোট সুইং মিলিয়ে গুঁড়িয়ে দেন তারা অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার। দুজনে ভাগাভাগি করেছেন ৫ উইকেট। মাঝে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট নিয়েছেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ।