অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা নয়, কারাগারে পাঠানো হবে

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

পণ্যের দামবৃদ্ধি করলেই অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে শুধু জরিমানা নয়, প্রয়োজনে জেল দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসন প্রথমে পাইকারী মার্কেটগুলোতে গিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে সতর্ক করেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বিএসটিআইও এ কাজ করছে। পাইকারী-খুচরা প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়মূল্য টাঙিয়ে রাখার জন্য বারবার নির্দেশনা দেয়ার পরেও তা অমান্য করে চলেছে। গত দু’দিন আগেও বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এবার অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে জরিমানায় না হলে জেল দেয়া হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গত মাসের খাতওয়ারী অপরাধ চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, কতিপয় ব্যবসায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য অবৈধভাবে মজুদ ও পণ্যের কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না করতে প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সভা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখাসহ বঙ্গবন্ধু টানেলে দুর্ঘটনা রোধকল্পে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
সড়কে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, ট্রাক ও পণ্য পরিবহন থামিয়ে সড়কে চাঁদাবাজি চলবে না। পরিবহন শ্রমিকেরা চাঁদা নিলে অফিসে নেবে, সড়কে নয়। যারা চাঁদাবাজি করে তাদের ব্যাপারে পরিবহণ নেতৃবৃন্দ আনঅফিসিয়ালি নোট দেবেন, ব্যবস্থা নেব। সড়কে চাঁদাবাজি রোধে র‌্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্য কঠোর অবস্থানে থাকবে। হাটহাজারী পৌরসদরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানজট নিরসন ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাত্রী পরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দেড়গুন বা দ্বিগুন ভাড়া নিলে গাড়ির চালক-সহকারীকে জেল-জরিমানার আওতায় আনা হবে।
সভায় জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস.এম শফিউল্লাহ বিপিএম-সেবা, পিপিএম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র উদ্ধারে সমগ্র বাংলাদেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রথম এবং মাদক উদ্ধার ও সার্বিক মূল্যায়নে দ্বিতীয়। সেজন্য আমাকে পিপিএম পদক দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এটা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ। পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, প্রতিনিধি বা যেই হোক, সড়কে গাড়ি থামিয়ে কোন ধরণের চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। যদি কোন গাড়িতে অবৈধ জিনিস থাকে তাহলে ব্যবস্থা নিতে কোন আপত্তি নেই। চলতি রমজান ও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, জাল টাকার ব্যবসা ও চুরি-ছিনতাই রোধে পুলিশ বাহিনী সতর্ক রয়েছে। হাটহাজারী সদরসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনএসআই’র যুগ্ম পরিচালক মো. মাজহারুল ইসলাম, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরওয়ার কামাল দুলু, চেম্বার পরিচালক অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান, হাটহাজারী পৌর প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, র‌্যাবের এএসপি মো. নাফি উদ্দিন, ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি হরিপদ চক্রবর্তী, মহানগর পিপি এডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম, রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির ও বিজিবি’র সহকারী পরিচালক উপেন্দ্র নাথ প্রমুখ। সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ, পৌর মেয়র, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রতিনিধি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।