অসহায় মানুষের প্রতি বিশেষ নজর দিন

13

করোনা ভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের কারণে চলমান কঠোর লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে জরুরি সরকারি সেবা, চিকিৎসা, গণমাধ্যমকর্মী, বাজার ও প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। গত প্রায় দুই সপ্তাহের অধিক সময় তাদের আয়ের জুড়ি একেবারে খালি বললে অত্যক্তি হবেনা। কিন্তু এসব মানুষের সহযোগিতায় এখনও সরকার বা সামর্থবান মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের কোন তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অবশ্যই সোয়া কোটি পরিবারের সহযোগিতার জন্য অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে, এ বরাদ্দ সঠিকভাবে বিতরণে হলে আশা করা যায়, লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। বলার অবকাশ নেই যে, অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের ঝুঁকিটা শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি জীবন ধারণের। নিম্ন আয়ের মানুষ এই বৈশ্বিক মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছরের দুই মাসের অধিক সাধারণ ছুটির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই এখনো বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ওই সময় দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। নিম্ন আয়ের মানুষ যখন সেই ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই শুরু হয়েছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। এতে দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল খেটে খাওয়া মানুষের টিকে থাকার সংগ্রাম আরো কঠিন হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছেন নতুন করে। অর্থনীতিবিদরা লকডাউনের সময় দরিদ্রদের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, শহরের দরিদ্রদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বিত্তবানদের সহায়তা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। লকডাউন-পরবর্তী সময়ে এ ধরনের লোকরা যাতে সহজেই আয় করতে পারে, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করার কথা বলছেন তারা। সরকার লকডাউনে দরিদ্র মানুষের সহায়তায় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে কবে কখন কীভাবে এসব সহায়তা দেয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে। অন্য একটি সূত্র জানায়, সোয়া কোটি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি করে ডাল, তেল, লবণ ও ৪ কেজি আলু দেয়া হবে। ৩৬ লাখ পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে দেবে সরকার। ১ লাখ কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া বাড়ানো হয়েছে খোলা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি। চালু করা হচ্ছে বিশেষ ওএমএস। দেশব্যাপী ৭৫ হাজার টন চাল ১০ টাকা দরে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। টিসিবির মাধ্যমেও বিক্রি বাড়ানো হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। দেখার বিষয় উদ্যোগগুলো মাঠপর্যায়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা।
সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে তদারকি জোরদার করতে হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিংবা বিত্তবানরা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবার সেভাবে চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এনজিওগুলোরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই। আমরা মনে করি, দেশের সংকটকালে ঐক্যবদ্ধভাবে এই মহামারি মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের পাশে যার যার সামর্থ ও অবস্থান থেকে দাঁড়ানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। সরকার স্বল্পমূল্যে সরকারিভাবে পণ্য সরবরাহ আগামী দুই মাসের জন্য চালু রাখা দরকার। দরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে, বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতের স্বল্প আয়ের লোকজনের জন্য এ মুহূর্তে কীভাবে সম্পূরক আয়ের ব্যবস্থা করে তাদের সক্রিয় সহযোগিতা করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে অতি দ্রুতগতিতে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ও পরিষেবা দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখা জরুরি।