অসহনীয় লোডশেডিং-পরিত্রাণের উপায় খোঁজা জরুরি

44

রতন কুমার তুরী

জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি বলা হলেও, দেশে যেভাবে লোডশেডিং হচ্ছে তাতে করে আসলে দেশে এখন বিদ্যুতের ঘাটতি কতো তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মতে সারাদিনে দুই হতে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলেও এখন কোনোকোনো জায়গায় একঘণ্টা পরপর বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। এমন অসহনীয় পরিস্থিতিতে জনজীবনে সৃষ্টি হয়েছে অস্বস্তি। অনেকেই বিদ্যুতের এমন অস্বাভাবিক লোডশেডিংকে মেনে নিতে পারছেনা। তাদের ভাষ্য হলো এই মুহূর্তে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিতো হচ্ছে তাতে করে দেশের কোনো জায়গায় একঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। লোডশেডিং-এর বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকদের খুব জরুরিভাবে ভাবা উচিত কারণ দিনে যদি একঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হয় তাহলে মানুষের নিত্যদিনের কর্মকাÐের ওপর গভীর প্রভাব পরবে। কেউকেউ আবার লোডশেডিং কারণে রাতে ঘুমাতে না পারায় অসুস্থ হয়ে পরছে।
অন্যদিকে দেশের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ব্যাপক সংখ্যক পরীক্ষার্থী বর্তমানে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদেরকেও এই লোডশেডিং-এর বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। এর বাইরে গৃহস্থালি কাজের জরুরি একটি উপাদান ফ্রিজ। বিদ্যুতের ঘনঘন আসাযাওয়ার কারণে এই উপাদানটি বর্তমানে প্রায় অকেঁজো হয়ে যাচ্ছে। ফ্রস্ট ফ্রিজগুলো কিছুটা কাজ করলেও ননফ্রস্ট ফ্রিজসমূহের অবস্থা হয়েছে তথৈবচ। এই ফ্রিজগুলোতে বরফ জমাট বাঁধা থাকার সিস্টেম না থাকার কারণে গৃহস্থালি সব জিনিসপত্রই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভাদ্র মাসের শুরুতেই যেহারে ভ্যাপসা গরম পড়ছে তার জন্য মানুষ এমনিতে হাফিয়ে ওঠেছে তার মধ্যে বিদ্যুতের এমন ঘনঘন আসাযাওয়া জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠছে। এমন অসহনীয় লোডশেডিং এর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের এখনই উপায় খুঁজে বের করা উচিত। জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম করে প্রতিদিন একটি নিদিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরেঘরে পৌঁছে দিতে সরকার রাত ৮ টার পর সকল শপিংমল বন্ধ দেয়ার পরও কেনো ঘনঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে তা অবশ্যই তলিয়ে দেখা উচিত।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে যদি ঘাটতি থাকে তা জনগণকে পরিষ্কার করা নিতান্তই প্রয়োজন। তানাহলে জনগণের সাথে বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ রয়েছে। কারণ সরকার মুখে যা বলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং এর সাথে তা একেবারেই মিলছেনা। তাছাড়া জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন হলে সরকারকে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।
প্রয়োজনবোধে নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোনো দেশ থেকে আনা যায় কীনা তা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এর বাইরে অধিক ভতুর্কি দিয়ে হলেও কুইক রেণ্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সমূহের কিছুকে স্বল্প পরিসরে খোলা রেখে জনগণকে বিদ্যুৎ সেবা দেয়ার বিষয়টিও সরকারকে এই মুহুর্তে চিন্তাভাবনা করতে হবে। যেহেতু এখন বিদ্যুতের লোডশেডিং এর পরিমাণটা খুববেশি দৃশ্যমান হচ্ছে এবং সাধারণ জনগণও এনিয়ে সমালোচনা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছে সেহেতু সরকারকে এই বিষয়ে দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মুলতঃ জনসাধারণের অনেকেই জ্বালানি সংকটের বৈশ্বিক সমস্যাটি বুঝলেও এতোবেশি বিদ্যুতের লোডশেডিং হওয়ার বিষয়টি একেবারেই মানতে নারাজ কারণ বিদ্যুৎ বিভাগের দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সাথে লোডশেডিং এর হিসাবে যথেষ্ট গরমিল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন এই বিষয়টি কেনো হচ্ছে তা সরকারকেই তলিয়ে দেখতে হবে । আমরা প্রত্যাশা করবো সরকারের বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ বিষয়টি ভালো করে দেখভাল করবেন। কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকা কোথাও আবার এক ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এবং এটি পুরো দিনরাত অব্যাহতভাবে চলতে থাকা এটাকে আর যাই বলা হোক লোডশেডিং বলা যায়না। লোডশেডিং হলো মূলত : বিদ্যুত সাশ্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ না থাকা তা সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন ঘণ্টা হতে পারে এখন একেবারে একঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ চলে যাওয়া। তাহলে লোডশেডিং এর সময় কতো হচ্ছে তা কর্তৃপক্ষ হিসাব করে দেখেছেন কি ? আমরা প্রত্যাশা করবো জ্বালানি সংকট কাটিয়ে ওটার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ বিদ্যুৎ বিতরণে আরো দায়িত্বশীল হবেন। প্রয়োজনবোধে জনগণের কথা বিবেচনা করে বিকল্প উপায়ে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তার একটি কার্যকরি পথ খুঁজে বের করবেন।
জনগণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চায় তবে এমন দিনে ছয়, সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকুন এটা চায়না। আশা করছি বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক