অসময়ের বৃষ্টিতে জলমগ্ন নগরীর নিম্নাঞ্চল

99

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত আরো দু’একদিন থাকতে পারে। প্রথম দিনের বৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুরো নগরের পানির চিত্র পর্যবেক্ষণে নেমেছে। এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে নিচ্ছে সেনাবাহিনী।
করোনা ও বর্ষায় নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন মেগাপ্রকল্পের কাজে ধীর গতি দেখা দেয়। তা কাটিয়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুরোদমে নগরজুড়ে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। কাজের সুবিধার্থে প্রতিটি খালে দেয়া হয় বাঁধ। বৃষ্টি শুরু হওয়াতে এই বাঁধ এখন গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। বাঁধের কারণে পানি চলাচল করতে না পেরে রাস্তায় পানি উঠে যাচ্ছে। বৃষ্টির ফলে যাতে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সে চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও এমুহূর্তে সবগুলো বাঁধ সরাতে চায় না সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শুধু প্রয়োজনীয় বাঁধই সরানোর চিন্তা তদারক সংস্থার। সে জন্য এলাকাভিত্তিক মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।
মেগাপ্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, বৃষ্টি না থাকায় অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে সবগুলো খালে আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রত্যেকটা খালে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এখন বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় পানি উঠতে পারে। আমাদের লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোথাও বেশি পানি উঠলে বাঁধ ভেঙে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের লোকবল এবং ঠিকাদারের লোকবল প্রস্তুত আছে। প্রত্যেক এলাকার আপডেট নেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় আমরা যাবো।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেটি এখন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপটি যতোই উপকূলের কাছাকাছি আসবে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ততোই বাড়বে। নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, সমুদ্রবন্দর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এই কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে নালা ও ড্রেনের কাজে হাত দেয় মেগা প্রকল্পের তদারক সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। খাল থেকে মাটি উত্তোলন, ড্রেন নির্মাণ, জলাধার এবং ব্রিজ- কালর্ভাট নির্মাণ কাজ শুরু করে। এসব কাজ করতে গিয়ে নালা ও ড্রেনের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দিতে হয়েছে। বৃষ্টিার কারণে কাজের সুবিধার জন্য দেওয়া এসব বাঁধ এখন ফাঁদে রূপ নিয়েছে। বাঁধগুলো না সরালে অনেক এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। তাই সেনাবাহিনীর রেসপন্স টিম জোরালো করা হয়েছে। প্রতিটি এলাকার চিত্র পর্যালোচনা করে কিছু কিছু বাঁধ সরানো হচ্ছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গৃহীত ৫ হাজার ৬শ ১৬ কোটি ৪৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক চলমান মেগাপ্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএ’র সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল নালা পরিষ্কারের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন, খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা বাড়ানো, মাটি উত্তোলন, প্রতিরোধ দেওয়াল দেয়া, ড্রেন সংস্কার ও নতুন ড্রেন তৈরি করাসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়। চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও প্রায় ৫২ শতাংশ কাজ করতে সক্ষম হয় বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। যার কারণে বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ।