অষ্টম বার সিআইপি হলেন স্মার্ট গ্রুপের এমডি মুজিবুর রহমান

132

নিজস্ব প্রতিবেদক

পোশাক শিল্প রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশের খ্যাতনামা শিল্প পরিবার স্মার্ট গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে আবারও ‘বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (সিআইপি) হিসেবে নির্বাচিত করেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সিআইপি (রপ্তানি)- ২০১৮ মর্যাদা দেয়া হলো। এবার ১৭৬ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ নিয়ে ৮ম বারের মতো সিআইপি মর্যাদা পেলেন তিনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এর যৌথ আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকাস্থ হোটেল সোনারগাঁও এর বলরুমে উপস্থিত থেকে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, এমপি এর হাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সিআইপি কার্ড- ২০১৮’ গ্রহণ করেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দীন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ যে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে সেখানে ব্যবসায়ীদের অবদান অনস্বীকার্য। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা প্রত্যেকেই অনেক সাহসী মানুষ। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে আজকের অবস্থানে এসেছেন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি টার্গেট ৮০ বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, এটা বড় ধরনের টার্গেট। তবে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা পেলে আমরা সেটা অর্জন করতে পারবো।
তিনি বলেন, পণ্যেও বৈচিত্র্যকরণ (প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন) ও পোশাকখাতের অগ্রগতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকা সম্প্রসারণে আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সামনে গার্মেন্টসে রিলোকেশনের কারণে আমাদের সুযোগ বাড়বে। ভিয়েতনামের বাজার ধরার একটা সুযোগ আছে আমাদের সামনে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের উন্নতির মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এটাও চিন্তা করেন। তিনি দূতাবাসগুলোকে বলে দিয়েছেন। আপনাদের কাজ হলো বাংলাদেশের পণ্য প্রদর্শন করা। সেখান থেকে আমাদের সমর্থন আছে। আর আমরাও চেষ্টা করবো আপনাদের সব সমস্যা সমাধান করতে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশে পণ্য উৎপাদন, বিপণন, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখায় বিভিন্ন খাতের ১৭৬ ব্যবসায়ীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে রপ্তানির জন্য ১৩৮ ব্যবসায়ীকে (২০১৮ সাল) এবং পদাধিকার বলে ৩৮ ব্যবসায়ী নেতাকে সিআইপি কার্ড দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালে সিআইপির (রপ্তানি) জন্য পণ্য ও সেবা সংশ্লিষ্ট ২২টি খাতের মধ্যে ২০টি খাতে মোট ২৫০টি আবেদন পাওয়া যায়। মেলামাইন ও আসবাবপত্র খাতে কোনো আবেদন পাওয়া যায়নি। এছাড়া জাহাজনির্মাণ শিল্প ও চামড়া (ক্রাশ ও ফিনিশড) থেকে আবেদন পাওয়া গেলেও শর্তাদি পূরণে সক্ষম না হওয়ায় এ খাতে সিআইপি (রপ্তানি) নির্বাচিত করা সম্ভব হয়নি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৮ সালের সিআইপি নির্বাচন সংক্রান্ত সব আনুষ্ঠানিক কার্যাদি সম্পন্ন হওয়া সত্তে¡ও করোনা পরিস্থিতির কারণে (২০২০ ও ২০২১ সালে) এই কার্ড প্রদান করা সম্ভব হয়নি।
দেশের সফল রপ্তানিকারক, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও পারস্পরিক সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করার পাশাপাশি তাদের রপ্তানি বাণিজ্যে উৎসাহিত করতে প্রতিবছর সিআইপি কার্ড দেয় ইপিবি।
২০১৮ সালে কাঁচা পাট রপ্তানির জন্য একজন, পাটজাত পণ্যে তিনজন, চামড়াজাত পণ্যে পাঁচজন, হিমায়িত খাদ্যে সাতজন, তৈরি পোশাকখাতে ২৩ জন, কৃষিজাত দ্রব্যে ছয়জন, অ্যাগ্রো প্রসেসিংয়ে চারজন, হালকা প্রকৌশল পণ্যে দুইজন, ফার্মাসিউটিক্যালসে দুইজন, হস্তশিল্পজাত পণ্যে পাঁচজন, হোম টেক্সটাইল পণ্যে তিনজন, তৈরি পোশাকে (নিট) ৪৩ জন, সিরামিক পণ্যে দুইজন, প্লাস্টিক পণ্যে দুইজন, টেক্সটাইল পণ্যে পাঁচজন, কম্পিউটার-সফটওয়্যারে দুইজন, বিবিধ ২৩ জন, ইপিজেডভুক্ত ‘সি’ ক্যাটাগরির পণ্যে দুইজন ও ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে ৩৮ জনকে সিআইপি কার্ড দেওয়া হয়েছে।
রপ্তানি খাতে অবদানের জন্য এক বছর মেয়াদে সিআইপি নির্বাচন করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে নির্বাচিত সিআইপিরা পরবর্তী বছরের সিআইপি (রপ্তানি) ঘোষণার আগে পর্যন্ত এই মর্যাদায় ভূষিত থাকবেন।
সিআইপি (রপ্তানি) হিসেবে নির্বাচিত ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাস ও গাড়ির স্টিকার প্রাপ্তি, জাতীয় অনুষ্ঠান ও পৌরসভায় নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন। এছাড়া ব্যবসা সংক্রান্ত সফরে বিমান, রেলপথ, সড়ক ও জলপথে সরকারি যানবাহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার, ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন প্রাপ্তি, নির্বাচিত সিআইপি তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে কেবিন সুবিধায় অগ্রাধিকার এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ-২ ব্যবহারের সুবিধা পেয়ে থাকেন।