অশ্বিনীকুমার দত্ত

9

দত্ত, অশ্বিনীকুমার (১৮৫৬-১৯২৩) জনহিতৈষী ও জাতীয়তাবাদী নেতা। বৃহত্তর বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার অন্তর্গত বাটাজোরের একটি ছোট গ্রামে সচ্ছল কায়স্থ ভূম্যধিকারী পরিবারে অশ্বিনীকুমার দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ব্রজমোহন দত্ত একজন সাব-জজ ছিলেন। ব্যাচেলর অব আর্টস এবং মাস্টার্স অব আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুটি ডিগ্রিধারী অশ্বিনীকুমার দত্ত তাঁর জীবনের পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নেন। অবশ্য বরিশাল জেলা আদালতে স্বল্পকাল তিনি আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলেন। মানবপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকার জন্য তিনি সুপরিচিতি লাভ করেন। সমাজের কল্যাণ এবং উন্নয়নের প্রতি গভীরভাবে নিবেদিত হয়ে তিনি বরিশাল শহরের মধ্যে নিজের দান করা এলাকায় ব্রজমোহন বিদ্যালয় (১৮৮৪) ও ব্রজমোহন কলেজ (১৮৮৯) প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ছাত্রদের শারীরিক এবং নৈতিক দিকসমূহ বিকাশের জন্য তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘ কুড়ি বছর বিনা বেতনে কলেজে শিক্ষাদান করেন। তিনি বরিশাল শহরে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও (১৮৮৭) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর সারাজীবনের সহিষ্ণু সমাজসেবা তাঁকে স্থানীয় জনগণের কাছে খুবই প্রিয় করে তোলে। জনগণের সদিচ্ছা ও তাঁর পরিবারের সম্পদ ও প্রভাবের কারণে তিনি এমন জনসমর্থন লাভ করেন যা তাঁকে ১৯০৫-১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় সংকীর্ণ জেলা পর্যায় থেকে বৃহত্তর প্রাদেশিক রাজনৈতিক অঙ্গনে নিয়ে যায়। এ প্রক্রিয়ায় তিনটি স্থানীয় সংগঠন জনসমিতি (১৮৮৬), বাখরগঞ্জ হিতৈষিণী সভা (১৮৮৭) এবং নেত্রী সংঘ তাঁর সহায়ক হয়েছিল। এ সংগঠনগুলির তিনিই ছিলেন পথপ্রদর্শক এবং এগুলির কর্মকাণ্ডে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি বরিশাল পৌরসভার কমিশনার (১৮৮৫) হয়ে এর ভাইস চেয়ারম্যান (১৮৮৮) ও চেয়ারম্যান (১৮৯৭)-এর দায়িত্ব পালন করেন।
একজন কংগ্রেস সদস্য হিসেবে বরিশালে এক আলাদা সমর্থক গোষ্ঠী নিয়ে তিনি শহরের দ্বন্দ্ব-কলহ এবং উদারপন্থী ও চরমপন্থী দতন্দ্ব হতে নিজেকে সতর্কতার সঙ্গে দূরে রাখেন। অশ্বিনী দত্ত এ উদ্দেশ্যে তাঁর নেতৃত্বাধীন স্বদেশ বান্ধব সমিতির নামে গড়ে তোলা স্বদেশী স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে বরিশালকে স্বদেশী আন্দোলন এর একটি শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। জেলার সর্বত্র এর ১৬০টিরও বেশি শাখা গড়ে উঠেছিল। ফলে তাঁকে বরিশালে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯০৮ সালে তাঁর সমিতির উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এবং ১৯১০ সাল পর্যন্ত তিনি লহ্মৌ জেলে বন্দি থাকেন। তিনি স্বদেশী ব্যাংক, হিন্দুস্থান কোপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স এবং কোপারেটিভ নেভিগেশন লিমিটেড প্রভৃতি স্বদেশী অর্থনৈতিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। স্বদেশ বান্ধব সমিতির মুখপত্র হিসেবে বরিশাল হিতৈষী প্রকাশের পেছনে তিনি সহায়ক ছিলেন।
ধার্মিক অশ্বিনীকুমার দত্ত ১৮৮২ সালে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন, যেমন- ভক্তিযোগ, কর্মযোগ, প্রেম, ভারতগীতি ইত্যাদি।
সূত্র: বাংলা পিডিয়া