অশনি সংকেত! করোনার গ্রামযাত্রা থামাতে হবে

15

 

বলা হচ্ছে, মহামারি করোনার তৃতীয় ঢেউ প্রলয়ঙ্কারীর বেশে দেশ চষে বেড়াচ্ছে। দিনের পর দিন সংক্রমণে মৃত্যু ও আক্রান্ত দুটিই অস্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। শঙ্কা আর উদ্বেগের ঢাল-পালা বাড়িয়ে করোনা একদিনে গত বুধবার মৃত্যু ঘটিয়েছে ২০১জনের, শনাক্ত ১১,১৬২ জনের । এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য অশনি সংকেত। সীমান্তের পরিনাম চট্টগ্রামবাসীকে ভোগতে হতে পারে বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বৃহস্পতিবার মৃত্যু ঘটছেে ১৯৯জনরে আর আক্রান্ত বড়েে হয়ছেে ১১,৫৫১ জন। অপরদিকে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে চট্টগ্রাম মহানগরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৮ হাজার ২৯৫ জন। এ তথ্য বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এরমধ্যে উপজেলায় আক্রান্ত রোগী ১৩ হাজার ৯০৫ জন। উপজেলাগুলোতে সংক্রমণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেয়ে উত্তর চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে সংক্রমণের হার বেশি। প্রতিবেদনে বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন সূত্রে উল্লেখ করা হয়, উপজেলায় সংক্রমণ ঠেকাতে বাড়তি পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং করাসহ আক্রান্ত রোগীদের খোঁজ নিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে, উপজেলায় আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই উত্তর চট্টগ্রামের ছয় উপজেলার। স›দ্বীপ ছাড়া উত্তর চট্টগ্রামের বাকি ছয়টি উপজেলায় আক্রান্তের হার বেশি। এখন পর্যন্ত বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড ও রাউজানে। গত ১৫ দিনে স›দ্বীপ, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড ও মিরসরাইয়ে আক্রান্ত রোগী ১ হাজার ৪৯০ জন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাত উপজেলায় আক্রান্ত ৩৫৬ জন। সে তুলনায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া ছাড়া বাকি ছয়টি উপজেলায় তুলনামূলক সংক্রমণের হার কম। টিকা দেয়ায় অনাগ্রহ, লকডাউন অমান্য ও সচেতনতার অভাবের কারণেই উপজেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। আমরা চিকিৎসকদের সাথে সহমত পোষণ করে বলতে চাই, প্রকৃতপক্ষে গুজব এবং মনস্তাত্বিক ধারণা গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোকে করোনা সংক্রমণ বিষয়ে অসচেতন ও নির্ভয় করে তুলেছে। তাদের ধারণা, খেটে খাওয়া ও শারীরিকভাবে প্ররিশ্রম করে এমন মানুষের করোনা সংক্রমণ হয়না; করোনা বলতে আসলে কিছুই নেই; শহরের মানুষ যারা আরাম-আয়েশে থাকেন-তাদের এ ভাইরাস আক্রান্ত করে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব ধারণাকে পোক্ত করার পেছনে সমাজের কিছু অজ্ঞপন্ডিত, রাজনীতিক ও মোল্লা শ্রেণির মানুষ রয়েছে। নানা বিশ্বাস থেকে তারা করোনাকে তুচ্ছজ্ঞান করে সরকারের ঘোষিত বিধিনিষেধ আমলে নিচ্ছেনা। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগ বা প্রশাসনের মাইকে প্রচার দিয়ে গ্রামের মানুষকে বিধিনিষেধ সম্পর্কে সচেতনতার উদ্যোগ যথার্থ নয় বলে আমাদের ধারণা। গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে হলে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজপতি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের ইমাম ও পুরোহিতদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তারা স্ব স্ব অবস্থান থেকে জনগণকে সঠিত তথ্য দিয়ে সচেতন করলে গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হবে, মানবে বিধিনিষেধ। এ কাজটি অবশ্যই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে করতে হবে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। আশার কথা, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী পূর্বদেশকে জানিয়েছেন, যেসব উপজেলায় আক্রান্ত বেশি হচ্ছে সেখানে লকডাউনে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। সেটি প্রশাসন দেখছে। উল্লেখ্য যে, করোনা সংক্রমণের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত উত্তর চট্টগ্রামে নয় হাজার ৫৯৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় ৮১৪ জন, রাউজান ১ হাজার ৬৮৩ জন, ফটিকছড়িতে ১ হাজার ৫৩৭ জন, হাটহাজারীতে ২ হাজার ৯৮৮ জন, সীতাকুন্ডে ১ হাজার ৫১৮ জন, মিরসরাই ৮৫৯ জন, স›দ্বীপে ১৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪১১ জন। এরমধ্যে সাতকানিয়ায় ৪৫৪ জন, বোয়ালখালীতে ৭৬১ জন, পটিয়ায় ১ হাজার ৫৯ জন, আনোয়ারায় ৬৪৩ জন, চন্দনাইশে ৪৯৬ জন, বাঁশখালীতে ৬৪২ জন, লোহাগাড়ায় ৩৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলাগুলোর মধ্যে রাউজান, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড, হাটহাজারী ও পটিয়ার অবস্থা বেশি খারাপ। সেখানে তুলনামূলকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এসব উপজেলার উপর দিয়ে অন্যান্য জেলার মানুষের যাতায়াত বেশি থাকায় আক্রান্তও বেড়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। এসব উপজেলায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে চলমান লকডাউন অব্যাহত রাখার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে তিনজন আক্রান্ত হলে গ্রিন জোন, চার থেকে ৫৯ জন আক্রান্ত হলে ইয়েলো জোন এবং ৬০ জন মানুষ আক্রান্ত হলে রেড জোন চিহ্নিত করা হয়। চট্টগ্রামের অধিকাংশ উপজেলা এখন রেড জোনের দ্বারপ্রান্তে।