অর্ধদিবস হরতালে অচল বান্দরবান

53

বান্দরবানে পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চথোয়াই মং মামাকে অপহরণ করে হত্যা এবং লাগাতার গুম-খুনের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ডাকা অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে হরতালের সমর্থনে শহরজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও কোথাও কোথাও পিকেটিং করেছে হরতালকারীরা। বন্ধ ছিল সবধরনের যান চলাচল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হরতাল চলাকালে জেলা শহর থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো যানবাহন। শহরে অটোরিক্সা মোটর সাইকেল চলাচলও ছিল বন্ধ। বান্দরবান-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-রাঙামাটিসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। তবে বান্দরবানে সপ্তাহের বাজারের দিন হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। সকাল থেকেই জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা শহরের ট্রাফিকমোড়, বাসস্ট্যান্ড ও বান্দরবান-কেরানীহাট প্রধান সড়কের সুয়ালকসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সড়কে গাছ-সাইনবোর্ড ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে হরতাল পালন করেন। এছাড়াও তারা জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। হরতালের আওতায় ছিল জেলার ৭ উপজেলাও।
এদিকে হরতাল শেষে দুপুরে জেলা শহরের বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো। হরতাল চলাকালে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করায় সকল যানবাহনের মালিক ও চালক সমিতি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সর্বস্তরের জনগণকে দলের পক্ষে থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য অঞ্চলের শান্তির জন্য পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল পার্বত্য এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে হত্যা করে আ’লীগ শূন্য করার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে দায়ী করে বলেন, জেএসএস ও অন্যন্যা সংগঠগুলো পাহাড়ে একের পর এক সন্ত্রাসীদের হত্যাকান্ডে পার্বত্য এলাকাকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে। যে কোনোভাবেই হোক- এসব অন্ত্রধারী সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান, আব্দুর রহিম চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কাজল কান্তি দাশ, সহ-সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, যুগ্ম সম্পাদক ল²ীপদ দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাহাদুর, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অমল কান্তি দাশসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আ’লীগ নেতা চথোয়াই মং মার্মাকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর মধ্যে ৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটককৃতরা হলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য জনসংহতি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ক্য এস মং (৫৫) জেএসএস এর বান্দরবান জেলা সাধারণ সম্পাদক ক্য বা মং (৪৯), দলের সদস্য দীপন তংঞ্চগ্যা (৩০), মিথোয়াই মার্মা, উজি মুখ পাড়ার হেডম্যান থোয়াই হ্লা মার্মা (৫৩), জর্দান পাড়ার কার্বারী মং হ্লা ত্রিপুরা (৬৫)। এদের মধ্যে ক্য এস মং ও ক্য বা মং কে আ’লীগ নেতা চ থোয়াই মং হত্যা মামলায় এবং দীপন তংঞ্চগ্যা ও মিথোয়াই মার্মাকে রাজবিলা আ’লীগ নেতার ছোট ভাই ক্য চিং থোয়াই হত্যা মামলায় রবিবার সকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এসময় পুলিশ আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রিমান্ড আবেদন না মঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। বাকী ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখনো থানায় আটক রাখা হয়েছে।
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা মামলায় আমরা এ পর্যন্ত ৭ জনকে আটক করেছি। এর মধ্যে ৪ জনকে আদালতে প্রেরণ করেছি এবং বাকী ৩ জনকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হরতালকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন ছিল বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৩ মে রাত ৯ টার সময় কয়েক জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বান্দরবান পৌর আ’লীগের সহ-সভাপতি চ থোয়াই মং মার্মাকে তার খামারবাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। গত শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের জদার্নপাড়ার গহীন জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে হরতাল আহ্বান করে জেলা আওয়ামী লীগ।