অর্থবহ স্বাধীনতার প্রাসঙ্গিক ধারা

14

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

মুক্তির মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জনে বাঙালি বীরের জাতির মর্যাদায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। দ্বিজাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ভঙ্গুর পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক-সামরিক-আঞ্চলিক বৈষম্যের চরিত্র ধারণকারী শাসকগোষ্ঠীর নব্য আন্তঃ-ঔপনিবেশিক যাঁতাকলে বাঙালি জাতিকে চরম নিষ্পেষণে নিপতিত করেছিল। স্বাধীন সত্ত¡ার বিপরীতে পরাধীনতার গ্লানি সংহার করে মূলতঃ ১৯৪৮ সাল থেকেই মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদাসীন করার অপোষহীন ব্রতে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হওয়া শুরু করে। বিশ্ব ইতিহাসে বিরল ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন মহান স্বাধীনতার রোডম্যাপ তৈরিতে যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে প্রতিভাত। ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার মূলমন্ত্র বা ম্যাগনাকার্টাখ্যাত বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা স্বাধীনতার নতুন পথপরিক্রমা উন্মুক্ত করে। কালক্রমে উনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়, একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ২৬ মার্চ দিবসপ্রহরে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকাল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করে। ত্রিশ লক্ষ শহীদান, দুই লক্ষ জননী-জায়া-কন্যার সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে দুর্ধর্ষ যুদ্ধংদেহী পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসরদের শোচনীয় পরাজয়ের পথ ধরে বিশ্ব মানচিত্রে লালসবুজ পতাকার বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।
১৯৭১ সালে বিজয় মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ দীর্ঘ নয় মাসের রক্ত¯œাত মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্বের সমাপ্তি ছিল বটে। যে মহান নেতার নেতৃত্বে জাতির এত বিশাল বিসর্জন ও অর্জন; তাঁর অনুপস্থিতিতে হৃদয়ের রক্তক্ষরণে শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীনতার অনন্য স্বাদ গ্রহণ করতে প্রিয় মাতৃভূমির সকল নাগরিক পরিপূর্ণ অপারগ ছিল। গভীর কাতরতার আর্তনাদে অধীর আগ্রহে প্রাণপ্রিয় নেতাকে তাঁরই নেতৃত্বে মুক্ত মাতৃভূমিতে স্বমহিমায় ফেরার উদ্দেশ্যে সেদিন এমন কোন বাঙালি বা বাঙালি পরিবার ছিল না; যারা মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডা-গীর্জাসহ প্রত্যেক ঘরে ঘরে মহান স্রষ্টার কাছে আকুল প্রার্থনা নিবেদন করেনি। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেই বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত যুদ্ধোত্তর দেশকে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা এবং দেশকে এগিয়ে নিতে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্তরিকতা-গতিময়তায় শক্তি যোগানোর অঙ্গীকারে আবদ্ধ করেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার চারস্তম্ভকে প্রতিষ্ঠিত করার নিরবচ্ছিন্ন ও নিরলস কর্মযজ্ঞে নিজেকে নিবেদন করলেন। গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন নবোম্মেষ পরমাত্না তবে সংযমিত কন্ঠে সাবধান করেছেন গণতন্ত্রকে যেন উচ্ছৃংঙ্খলতার মোড়কে কলুষিত করা না হয়।
বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে দেশের সমুদয় উৎপাদিত ও প্রাকৃতিক সম্পদ কৃষক-শ্রমিক ও সর্বশ্রেণির মানুষের মধ্যে সুষমভাবে বন্টনে কৃষকদের সুদসহ বকেয়া খাজনা, পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত জমির কর, লবণ উৎপাদকদের আবগারি শুল্ক, নিবর্তনমূলক ইজাদারী প্রথা ইত্যাদি বিলুপ্ত করেন। দরিদ্র চাষিদের ঋণ, সার, বীজধান প্রদান নিশ্চিতকল্পে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, ক্ষতিগ্রস্ত রেল ও সড়ক সেতু দ্রুত সময়ে পুন:নির্মাণ, ব্যাংক-বীমা-শিল্প-ব্যবসা সকল বিরাজমান অরাজকতা নির্মূলকল্পে দক্ষ পরিচালক নিয়োগ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ক্রয়/আমদানি এবং চলমান ক্রিয়াশীল পুঁজির সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। ব্যাংক-বীমা, পাট-বস্ত্র-চিনিশিল্প, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, বৈদেশিক বাণিজ্যসহ শিল্প-কারখানার বৃহদাংশ জাতীয়করণ করেন। জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী দাবি দেওয়া উত্থাপনের মনোভাব পরিহার করে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কার্যকর প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজতান্ত্রিক শৃংঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেন।
দেশ পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয় উপাদান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাধান্য পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর সরকারের বাজেট পরিকল্পনায়। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন নতুন কর আরোপ ছাড়াই ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য ৭৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পেশকৃত বাংলাদেশের প্রথম বাজেটে রাজস্ব এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয় যথাক্রমে ৪৩৪ কোটি ৫ লাখ এবং ৩১৮ কোটি ৩ লাখ টাকা। ১৯৭৩-৭৪ সালের অর্থবছরে জন্য বাজেট ছিল ৮৩০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং এই বাজেটে রাজস্ব ও উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয় যথাক্রমে ২৯৫ কোটি ৩০ লক্ষ এবং ৫২৫ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। ১৯৭৪-৭৫ সালে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দসহ রাজস্ব এবং উন্নয়ন ব্যয় যথাক্রমে ৪৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং ৫২৫ কোটি টাকা সর্বমোট ৯৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কল্যাণ ও উন্নয়নমুখী ১৯৭৫-৭৬ সালের বাজেটের পরিমাণ ছিল সর্বমোট ১৫৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ বাজেটে রাজস্ব ও উন্নয়ন ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫৯৯ কোটি ১৯ লাখ এবং ৯৫০ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার সৎ ও সাহসী ভূমিকা নিয়ে যখনই ঘুরে দাঁড়নোর কর্মপন্থা স্থির করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে অদম্য শক্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তাঁকে শাহাদত বরণ করতে হয়েছে। স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে পুরো জাতি-রাষ্ট্রকে বিশাল সময়ের প্রেক্ষাপটে পিছিয়ে নেয়ার সকল অপকৌশল অবলম্বন করেছে সেনা-স্বৈর অপশাসন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাঙালির বঙ্গবন্ধু-বিশ্ববন্ধু শেখ মুজিব চিরঞ্জীব। তাঁর কোন মৃত্যু নেই। যতই দিন-কাল-সময়-মাস-বছর অতিক্রান্ত হবে বঙ্গবন্ধু অধিকতর বেশি ইতিহাস সমৃদ্ধ হবেন শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্ব ইতিহাসে নব-নবতর অধ্যায়ে। কবি অন্নদাশংকর রায়ের সেই বিখ্যাত বিপুল প্রচারিত ও উচ্চারিত কবিতা – ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান।/দিকে দিকে আজ অশ্রæগঙ্গা রক্তগঙ্গা বহমান/তবু নাহি ভয়, হবে হবে জয়, জয় মুজিবর রহমান’ আজ যেন নতুন মাত্রিকতায় নির্ভীক ত্যাগের চেতনা অব্যাহত সঞ্চারণ করে চলেছে। স্বাধীনতা অর্জন যেমন কঠিন এবং বিশাল রক্তক্ষয়ী ফসল, তেমনি স্বাধীনতা রক্ষা ও একে অর্থবহ করে তোলা অধিকতর কষ্টকর। বঙ্গবন্ধুর জীবন, দর্শন এবং রাজনৈতিক জীবন প্রবাহের মূলেই ছিল লোভ, হিংসা ও অহংকারকে নিধন করে সততা, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রজ্জলন ঘটিয়ে মেহনতি মানুষের হৃদয় জয় করা এবং সামগ্রিক অর্থে একটি ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত সকলের জন্য সুখী ও কল্যাণকর জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি নির্দেশনার আলোকে বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মযজ্ঞ সুচারুরূপে সুসম্পন্ন করার লক্ষ্যে অদম্য অগ্রগতিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সংকল্প গ্রহণ করেছেন। দীর্ঘ ক্রান্তিকাল ও অন্ধকারের ষড়যন্ত্রকে নিস্ফল করে উন্নয়নের সকল সূচক ও বহুমাত্রিকতায় সামষ্টিক উন্নয়নের সার্থক ইতিহাস সৃজনে বর্তমানে জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববরেণ্য এবং নন্দিত রাষ্ট্রনায়কের মর্যাদায় সমাসীন হয়েছেন। ধরিত্রী, সমুদ্র, সীমান্ত বিজয়ী হয়ে দেশকে কিছু সময়ের জন্য খাদ্য রপ্তানী দেশে পরিণত করেছেনও বটে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে দেশের প্রতিটি খাতেই উন্নয়ন-সমৃদ্ধির অপরূপ ছোঁয়ায় মানব উন্নয়ন সূচকে উন্নয়নশীল বিশ্বকে ডিঙ্গিয়ে ঈর্ষণীয় অভিধায় দেশকে উন্নয়নের রোলমডেল এবং নিজেকে উন্নয়নের সফল রূপকার হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জনঅধ্যূষিত মাতৃভূমির বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সার্বিক কল্যাণে কৃষি-কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে অগ্রাধিকার ও শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সুগভীর দরিদ্রতাকে উৎপাটন করে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন; তারই আলোকে তাঁর সুযোগ্য কন্যা ইতিমধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রমে অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক নীতি অবলম্বন করে সুষ্ঠুভাবে বিচার ও বিচারের রায় কার্যকর এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহতভাবে সচল রেখেছেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু বিচারের রায় কার্যকর করে নির্ভিক সাহসীকতা ও দৃঢ়চেতা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অবিরাম-নিরলস প্রচেষ্টায় অবিচল রয়েছেন। বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে জাতির জনকের মত রাজনীতির কবি শুধু নয়, উন্নয়নের সুদক্ষ প্রকৌশলী হিসেবেও নিজেকে গৌরবোজ্জ্বল ও দেশকে সমুজ্জ্বল করেছেন। প্রায় সাত লক্ষ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন, বিগত বছরের তুলনায় বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির উদ্যোগ এবং দেশকে চুয়াত্তর বৎসরের অধিক গড় আয়ুর দেশে পরিণত করে বিশ্বে বিষ্ময়কর অর্জনের অধিকারী হয়েছেন। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়াল সড়ক, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় সাড়ে তিন কিমি দৈর্ঘ্যরে দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু ট্যানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়ক চার ও ছয় লেনে উন্নীত করা হয়। সমগ্র বাংলাদেশকে রেলের আওতায় নিয়ে আনতে বর্তমান সরকার কর্তৃক যোগাযোগের অন্যতম সহজ ও নিরাপদ মাধ্যম রেলপথ সম্প্রসারণ-আধুনিকায়নের উদ্যোগ সর্বত্রই সমাদৃত। দক্ষিণাঞ্চলে রেলের পরিধি বৃদ্ধিকরণে পদ্মা সেতুতে রেলের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলানা পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ পর্যন্ত রেলপথ তৈরির জন্য সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির প্রণয়ন বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জন। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি হৃদরোগ, কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, নিউরো, চক্ষু, বার্ণ, নাক-কান-গলাসহ বিশেষায়িত ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি জেলায় নূন্যতম একটি করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সব হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে। অতিসম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দিয়েছেন। মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতসহ সামাজিক খাতসমূহে অধিক বিনিয়োগের অপরিহার্যতায় সরকার সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করেছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম দ্রæতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষির আধুনিকায়ন, নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং সার উৎপাদন-আমদানিতে সরকারি ভর্তুকি দেওয়ার ফলে দেশ কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান, সবজি ও মাছ উৎপাদনে যথাক্রমে তৃতীয় ও ১ম অবস্থানে রয়েছে। ভারত থেকে ডিজেল আমদানি ব্যয়-সময় সাশ্রয়সহ দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে ১৮ মার্চ ২০২৩ তারিখ উদ্বোধন করা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন।
বাংলাদেশ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী বছরের মধ্যে আমরা দেড় ট্রিলিয়ন অর্থনীতির মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছি। বর্তমান জিডিপির আকারে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ধারাবাহিকভাবে এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে ২৮ এবং ২০৩৬ সালের মধ্যে ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। আমাদের আশু লক্ষ্য হলো ২০৩১ সালে মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ-জ্ঞানভিত্তিক এবং স্মার্ট দেশ হিসেবেই বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’ তিরি আরও বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা অন্তত বাস্তবমুখী ও সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সফলভাবে আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’ দুঃখজনক হলেও সত্য; বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের সকলক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রগতিতে ঈর্ষান্বিত-পরশ্রীকাতর অন্ধকারের পরাজিত শক্তি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। দৃশ্যমান এতসব তাৎপর্যপূর্ণ প্রাগ্রসর সমাজে উত্তরণের অনুষঙ্গ বিশ্বস্বীকৃত হলেও দেশকে পিছিয়ে নেওয়ার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নানামুখী কদর্য বেড়াজাল নির্মাণ করছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ জাতির সাহসিক সত্যের কাঠিন্যে অচিরেই সমূহ বাধা বিপত্তি-অন্তরায়-প্রতিবন্ধকতার দুর্ভেদ্য প্রাচীরের পরিবর্তে ভঙ্গুর নির্মাণশৈলীর মত বিধ্বস্ত হবেই – জাতির এই প্রত্যাশা অবশ্যই সোনার বাংলা বির্নিমাণে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।