অর্থনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দিতে হবে

28

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর গুরুত্ব আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের চলমান উন্নয়ন কর্মসূচি যেন অব্যাহত থাকে, সেজন্য রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’
গতকাল রবিবার লন্ডনের একটি হোটেলে স্থানীয় সময় বিকালে ‘দূত (ইউরোপ) সম্মেলনে’ তিনি এই আহŸান জানান।
সম্মেলনের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। তিনি জানান, সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন, অভিবাসন ও রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ও আলোচনা করা হয়েছে।
দ্রæত পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে কূটনীতিকদের সময়োপযোগী অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই জন্য আমাদের দেশে বিনিয়োগের আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা ও দক্ষ জনশক্তি রফতানি বাড়াতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ও দক্ষ যুবশক্তি রয়েছে, যারা বিশ্ব শ্রম বাজারের চাহিদা পূরণে সক্ষম।’ খবর বাংলা ট্রিবিউনের
একটি দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে এমন একটি অ্যাপ চালু করেছি, যার মাধ্যমে জনগণ ৯টি ভাষা শিখতে পারছে।’ কূটনীতিকদের নিজ নিজ কর্মস্থলে বিভিন্ন দেশের বাজার পরিবীক্ষণ করে সে দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের বাধাগুলো চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’ প্রবাসে কর্মরত কূটনীতিকদের এ লক্ষ্য অনুসরণে তাদেরও নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নেরও নির্দেশ দেন তিনি।
বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনে দ্রæত ও উন্নত সেবা দিতে কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৮ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের শেষ নাগাদ যা ৮ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করা আমাদের লক্ষ্য।’ একইসঙ্গে ২০২০ সাল নাগাদ আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ এখন আর সাহায্য নির্ভর নয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এবারে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করেছি। এর ৯০ শতাংশ অর্থ আমাদের নিজস্ব উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে।’
বিএনপি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা বিগত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, অথচ তারা এই নির্বাচনে যথার্থ প্রতিদ্ব›িদ্বতার পরিবর্তে মনোনয়নবাণিজ্য করেছে।’ বাংলাদেশ প্রপাগান্ডায় বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় আস্থা রাখে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনকে গুরুত্ব দেয়।
‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রæতা নয়’, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুসৃত এই পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার এই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।’ তিনি বলেন, ‘এই নীতি অনুসরণ করে সরকার কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়সহ অনেক বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে। আশা করি, একইভাবে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুরও সমাধান হবে।’ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে বাংলাদেশ।’ সম্মেলনে বাংলাদেশি দূতদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক প্রমুখ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত ১৫ জন রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও স্থায়ী প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনে অংশ নেওয়া কূটনীতিকরা হলেন আবু জাফর (অস্ট্রিয়া), মো. শাহাদৎ হোসেন (বেলজিয়াম), মুহম্মদ আবদুল মুহিত (ডেনমার্ক), কাজী ইমতিয়াজ হোসেন (ফ্রান্স), ইমতিয়াজ আহমেদ (জার্মানি), জসিম উদ্দিন (গ্রিস), আবদুস সোবহান সিকদার (ইতালি), শেখ মোহাম্মদ বেলাল (নেদারল্যান্ডস), মুহম্মদ মাহফুজুর রহমান (পোল্যান্ড), রুহুল আলম সিদ্দিক (পর্তুগাল), ড. এসএম সাইফুল হক (রাশিয়া), হাসান মাহমুদ খন্দকার (স্পেন), নাজমুল ইসলাম (সুইডেন), শামিম আহসান (সুইজারল্যান্ড) ও সাইদা মুনা তাসনীম (যুক্তরাজ্য)।
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতরা সংশ্লিষ্ট দেশে নিজ নিজ কার্যক্রম, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলন এবং অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে এক সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বিকালে লন্ডন পৌঁছেন।