অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতায় আমাদের করণীয়

101

দেশে যখন কোন অর্থনৈতিক উন্নতি দৃশ্যমান হয় বা কোন সাফল্য অর্জিত হয় তখন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। দেশে রাস্তাঘাট প্রশস্থ হচ্ছে। ফ্লাইওভার হচ্ছে। একটু একটু করে জ্যামজট কমছে। উঁচু উঁচু ভবন নির্মিত হচ্ছে। আবাসন সমস্যার সমাধান হচ্ছে। দেশে বিদ্যুতের লোড শেডিং নেই। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে। দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরো দুইশতাংশ বাড়বে বলে শোনা যাচ্ছে। বাজেটের আকার বাড়ছে বলে শোনা যাচ্ছে। করের বোঝা কমবে বলে আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সুদের হার সিঙ্গেল ভিজিটের ব্যাপারে কথা দিলেন, এ বিষয়ে কোন ব্যাংক মানছে বলে মনে হয় না। কোন কোন ব্যাংক ১১.৫০ % আকার কোন কোন ব্যাংক ১৩% চক্রবৃদ্ধি সুদ নিচ্ছে। পত্রিকা পড়ি যখন চোখে পড়ে চট্টগ্রামে ৯৩টি পোশাক শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ৪ বছরে সারাদেশজুড়ে ১২০০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আমেরিকা বাই ইং এলায়েন্স বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান তল্পীতল্পা ঘটিয়ে চলে গেছে। এদের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আমাদের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে পোশাক শিল্প থেকে। যে কোনভাবে এ শিল্প খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে সার্বক্ষণিকভাবে তদারক করতে এর দুর্বল দিকগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। গত ২ মে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক এক সেমিনারের আয়োজন হয়। এতে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক এবং ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীর। ওসামা তাসীর সাহেবের বক্তব্যে উঠে আসে কমপ্লায়েন্সের মান নিশ্চিত করতে না পারায় গত ৪ বছরে ১২০০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতি কারখানায় যদি ১০০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিক থেকে থাকে তবে ১২ লক্ষ মানুষের রুটি রোজগারের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। এমন মন্তব্য করা বোধ হয় সঙ্গত। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা আমি করবো। সরকারকে সঠিক পথ ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে সুপরামর্শ দেবো এটা লেকখ হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ববোধ। এ ১২ লক্ষ লোকের যদি গড়ে ৩ জন করে সদস্য থাকে তবে ৩০ লক্ষ লোক খুব কষ্টে আছে। আমাদের পণ্যে ১ নং ত্রæটি হলো আমরা কমপ্লায়েন্সের মান নিশ্চিত করতে পারছি না। যার জন্য ২০১৩ সাল থেকে বছরে আমাদের পোশাক পণ্যের দাম গড়ে ০.৭৪% হারে কমেছে। সরকার গ্যাসের দাম এবং বিদ্যুতের দাম যদি ৬০% বাড়ায়। এতে করে উৎপাদনের ব্যয়ে যুক্ত হবে আরা ৯%। নির্বাচনের আগমুহূর্তে সর্বনিম্ন মজুরি ৪০০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮০০০ টাকা করা হয়। এতে উৎপাদনের ব্যয় আরো বৃদ্ধি পেলো। এরপর কমপ্লায়েন্স সম্পর্কিত ব্যয়বৃদ্ধি।
আমাদের পোশাক উদ্যোক্তারা স্বউদ্যোগে পণ্য বিক্রি করতে পারছেনা। তাদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে বায়িং হাউজ এবং এজেন্সির মাধ্যমে। তাই পোশাক শিল্প মালিকরা যথোপযুক্ত মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যার জন্যে বছর ঘুরে পণ্যমূল্য কমছে। আন্তর্জাতিক ভাবে আমাদের পণ্য ইমেজ সংকটে ভুগছে। একটা শক্তিশালী ইমেজ গড়ে তুলতে হলে ক্রেতাদের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ফরমায়েশ মতো মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে আশ্বস্থ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দেশে বিক্রয় প্রতিনিধি প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বায়িং হাউজ থেকে স্মার্ট বিক্রয় প্রতিনিধি সংগ্রহ ও নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করতে হবে। তৈরি পোশাক খাতকে টেকসই করার পাশাপাশি পরিচালনা ব্যায় সংকোচন করতে হবে।
এখন পোশাক কারখানার মালিকরা ঈড়ংঃ সরহরসরুরহম অর্থাৎ উৎপাদন করচ সংকোচন নীতি অনুসরণ করে কোন রকম ঘড়ৎসধষ চৎড়ভরঃ অর্জন করে ঠিকে থাকতে চাইছে। অর্থনীতিতে ঘড়ৎসধষ চৎড়ভরঃ হচ্ছে যে চৎড়ভরঃ অর্জিত হলে কোন একটা শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে। এক পাকিস্তানীর সঙ্গে আলাপকালে গবর্ করে বলেছিলাম আমাদের মহিলারা কিন্তু অবরোধ বাসিনী গৃহবধূই নয়। তারা আমাদের বোঝা নয় ৩০ লক্ষ মহিলারা আমাদের দক্ষকর্মীর হাত তারা আমাদের গার্মেন্টশিল্পের অন্যতম শক্তি। তখন আমাদের পোশাক শিল্প কারখানা ছিলো ৯,৬০০টি। এখন বড়ো জোরে ৫ লক্ষ থেকে ৬ হাজারের মধ্যে হবে। চীনকে যে কোনভাবে স্পর্শ করতে পারবো না। চীন ১৩৬ কেটাগরির গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারীদেশ। আমরা মাত্র ৩৪ কেটাগরির পণ্য রপ্তানি করি। চীনে শ্রম মুজুরী বৃদ্ধি পেলেও তাদের পণ্যে তারা মনোপলি। গার্মেন্টস পণ্যবাজার যদি কোন কারণে সংকুচিত হয় তবে আমাদের রপ্তানি বাজার বিরাট হুমকীতে পড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে আমাদের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। এ কথা মাথায় রেখে ২০১৪ সালে ৯’এ জুন জি টু জি ভিত্তিতে চীন সরকারের সঙ্গে আমাদের সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ ৩০ জুন চীনা হারবার ইজিওনিয়াং কোম্পানি ও বেজার মধ্যে সর্বপ্রথম জি টু জি ভিত্তিতে চায়না ইকোনমিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন স্থাপনের চুক্তি হয়। চুক্তির ভিত্তিতে আনোয়ারার বেলচড়া, বটতলী, বারখাইন ইউনিয়নের ৭৭৪ একর ভূমি দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তী দেয়া হয়। এর মধ্যে ২৯০ একর সরকারি খাস জমি প্রতীকী মূল্যে বেজার কাছে সরকার হস্তান্তর করেন। ৭৭৪ একর ভূমিতে চীন ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এখানে প্রতিষ্ঠিত হবে ফার্মাসিটিউক্যাল, গার্মেন্টস, টেলিকম, ইলেকট্রনিক্স, মেডিক্যাল ডিভাইস, আইটিসহ বিভিন্ন শিল্প ইউনিট। এই সুবাদে আমাদের প্রাপ্তি হচ্ছে আমাদের ৫৩,০০০ বেকার মানুষের কর্মস্থান হবে। এ অঞ্চলটা চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের খুব কাছে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পণ্য পরিবহনের জন্য এটা একটা মোক্ষম জায়গা। খুব স্বল্পব্যয়ে চীনা প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশি চালান দিতে সক্ষম হবে। অবকাঠামো তৈরি করে দিতে হবে বাংলাদেশকে। এক দেড়বছরের মধ্যে ১৫০ মেঘাওয়ার্ড এ বৈদ্যুতিক সংযোগ লাইনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। অবকাঠামো তৈরির জন্য চীন সরকারের কাছে ২ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা আমাদের সরকার ঋণ চেয়েছেন। এ টাকা দিয়ে বর্জ্য শোধন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সাব স্টেশন এল.এনজি টার্মিনাল, কালুরঘাট থেকে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, শিল্প জোনের সংযুক্ত সব সড়কগুলো চার লেইনে উন্নীত করে দিতে হবে। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজার) জন্য ২০ তলা ভবন নির্মাণ করতে হবে ঐ টাকায়। এখন পোশাক শিল্পে আমাদের প্রতিযোগী দেশ চীন আমাদের দেশে অবস্থান করে পোশাকসামগ্রী যেমন উৎপাদন করবে তেমনি আমাদের বন্দর এবং বিমান বন্দর ব্যবহার করে সুলভে বিদেশে পণ্য চালান দেওয়ার সুযোগটা হাতের মুটোয় নিয়ে নিলো। কি জানি তাদের পরিকল্পনা কতটুকু সুদূর প্রসারি। আমাদের দেশের বড়ো বড়ো ঠিকাদারী কাজ কর্মগুলো খুব সিদ্ধহস্তে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতের গ্রীবে। জানিনা বিনিয়োগের নামে চীন কোন দ্বিতীয় উপনিবেশ বাদ কায়েশ করতে যাচ্ছে কিনা? (ইডিবি) বা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো রপ্তানি আয়ের হাল নাগাদ যে তথ্য চিত্র প্রকাশ করেছে এতে আমাদের ইঙ্গিত লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি। আমাদের লক্ষমাত্রা ছিলো মে মাসে ৩০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার তৎস্থলে রপ্তানি আয় হয় ৩০৩ কোটি ৪২ লাখ ডলাল। সে হিসেবে ১.৫২ % শতাংশ আয় হ্রাস পেয়েছে বলা যায়।
গত ৫ বছরে ভিয়েতনাম পোশাক রপ্তানিতে ১১.৭৫% সেখানে আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে অর্ধেকের ও কম অর্থাৎ ৫.৭%। এর মধ্যে গত ৪ বছরে ১২০০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের এখন পোশাক শিল্পে অসুস্থ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। পোশাখ খাতে ন্যায্যমুল্য প্রাপ্তি থেকে আমরা বঞ্চিত। পোশাক শিল্পের ঠিকে থাকতে এখন মালিকগণ ঈড়ংঃ সরহরসরুরহম নিয়ে ব্যস্ত। শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ প্রায়। অনেক শ্রমিকদেরকে নিয়ে আগের তুলনায় বেশি খাটিয়ে যাচ্ছে বা শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করেছে। বিদেশি বিনিয়োগকৃত পোশাক শিল্পে যারা কাজ করে তারা এদেশের শ্রম আইনের কোন ধার ধারেনা। পোশাক শিল্পে হঠাৎ করে সর্বনিম্ন মজুরী দ্বিগুণ বৃদ্ধি। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বৃদ্ধি গ্যাসের মূল্য এবং বিদ্যুৎমূল্য বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার, বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য হ্রাস নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে। আমাদের এ বৃহত্তম রপ্তানি খাতের ওপর। আমাদের দেশের দক্ষ নারী শ্রমিক আজ চাকুরীর লোভে জর্ডান রাষ্ট্রের পোশাক শিল্পে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে করে যাচ্ছে বর্তমানে জর্ডানে ১ লাখের ও বেশি নারী শ্রমিক সেখানে কাজ করে আসছে। হয়তঃ পোশাক খাতে জর্ডানও আমাদের প্রতিযোগি হয়ে দাঁড়াবে। সাম্প্রতিককালে মালয়েশিয়াও গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদনের দিকে এগুচ্ছে। অর্থাৎ দিন দিন আমাদের প্রতিযোগিতার খাতায় নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা যদি হয় সে সুযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের হারানো বাজার পুন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এমুহূর্তেই গ্রহণ করতে হবে। আমেরিকার বাইং এলায়েন্সের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। আমেরিকার বাইং এলায়েন্সের দুর্ভাগ্য এটুকু আমরা প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ। যার জন্য ম্যানুয়েক্টচারিং রপ্তানি পণ্য বিশ্বে যোগান দিতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি। হাতেগুনা কয়েকটি পণ্য নয় রপ্তানি পণ্যে বহুমুখীতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের প্রতিটি শপিংমাল আজ বিদেশি পণ্যে সয়লাব। চলতি ঈদ মৌসুমে ভারত এবং পাকিস্তান থেকে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগ ভারতীয় এবং পাকিস্তানি পোশাকসামগ্রীতে বাংলাদেশ আজ পরিপূর্ণ; চীন থেকে নিম্নমানে জুতা-স্যান্ডেলে দেশ সয়লাব। এসমস্ত খাতকে যদি পৃষ্ঠপোশকতা করা যেতো বা আমদানি বাণিজ্যকে যদি উৎসাহিত করা যেতো তা হলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হতো। আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে খুব বেশি ঝুঁকে পড়েছি। তাহা স্বীয় অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে কাম্য নয়। ভারত স্বীয় স্বার্থে আমাদের রপ্তানিপণ্যের ওপর শুল্কারোপ করলে ও আমরা তাদের পণ্যের ওপর সংরক্ষণ বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করছিনা। স্বীয় স্বার্থে আমাদের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে দেশীয় উৎপাদন প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে শিল্প সংরক্ষণনীতি অনুসরণ করা বাঞ্চনীয়। ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসনামলে অষ্টাদশ শতাব্দীতে তাদের শিল্পবিপ্লবকে চাঙ্গা করতে মসলিন উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমাদের দেশের কৃষকদেরকে ধান চাষের পরিবর্তে নীলচাষে বাধ্য করে তাদের স্বীয় স্বার্থে। বর্তমানে আমাদের দেশে মেধা ও বুদ্ধিভিত্তি সম্প্রসারিত হয়েছে। নতুন প্রজন্মের উদ্ভাবিত শক্তিকে পৃষ্ঠপোশকতার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে সম্প্রসারিত করে উন্নত দেশের কাতারে স্থান করে নেওয়া কোন ব্যাপারই না। দেশ আত্মনির্ভরশীলতায় পরিপুষ্ট হউক এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক, কলামিস্ট