অর্গানিক শুঁটকি দেখাচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন

54

 

আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকা রায়পুর গ্রামের তিন যুবক জয়নাল আবেদীন, মো. তানভীর, মো.সুমন। পড়ালেখা ও পারিবারিক সুবাদে থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। তিনজনই বিভিন্ন বিষয়ে অনার্সে পড়ালেখা করছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিছু একটা করার। উপকূলীয় এলাকায় বাড়ি হওয়ায় শুঁটকির ব্যবসাটা মাথায় আসে সবার আগে। কিন্তু সাধারণভাবে যেভাবে শুঁটকি শুকায় তা স্বাস্থ্যেও জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বিকল্প চিন্তা শুরু করেন তারা। এরমধ্যে করোনা শুরু হওয়ায় অবসরে স্বাস্থ্যকর শুটকি নিয়ে চিন্তাবাবনা করতে থাকেন। ইউটিউব ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে অর্গানিক শুঁটকির বিষয়ে ধারনা নেন। পরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রশিদুল হকের সাথে আলোচনা করলে তিনি তাদেরকে উৎসাহিত করেন এবং সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস দেন। এরপর তারা নেমে পড়েন অর্গানিক শুটকির কার্যক্রমে। বারশত কারিবাড়ী এলাকায় স্থাপন করেন ‘টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ার’। গত ৩ ফেব্রæয়ারি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রশিদুল হক এটি উদ্বোধন করেন। উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত খোলা জায়গায় যেভাবে শুঁটকি তৈরি করে তাতে ধুলাবালি তাকে। পোকায় না ধরার জন্য দেয়া হয় ক্ষতিকারক বিষ। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর বিকল্প হিসেবে টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ারে ঢুকবেনা কোনো ধুলোবালি। কোনো ধরণের কেমিক্যাল ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে এই শুটকি উৎপাদন করা হয়। উদ্যোক্তারা আরো জানান, একটি টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ারে একবারে প্রায় ৮ শত কেজি শুটকি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। শুঁটকি একবার ঢুকালে ১০ দিন পর্যন্ত লাগে। তবে উদ্যোক্তাদের চিন্তার কারণ অর্গানিক শুটকির বাজারজাত নিয়ে। এখনো পাইকারী বাজারে অর্গানিক শুঁটকির তেমন সাড়া পড়েনি। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় বাজারদরও একটু বেশি। তবে উদ্যোক্তারা হাল ছাড়তে নারাজ। তারা অনলাইন শপিংকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এদিকে সাম্পতিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে চট্টগ্রামে ক্যানসারের হটস্পট হিসেবে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে চিহ্নিত করেছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের শুঁটকি খাওয়ার প্রবণতাকে দায়ী করেছেন। কারণ শুঁটকিতে মেশানো হয় মানুষের শরীরের ক্ষতিকারক বিষ। এজন্য গবেষকরা এখন বিষমুক্ত শুঁটকির উপর গুরুত্বারোপ করছেন। উদ্যোক্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, সাধারণভাবে যে শুঁটকি উৎপাদন করা হয় তা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অন্যদিকে অর্গানিক শুঁটকি যেমনি স্বাস্থ্যকর তেমনি সুস্বাদুু। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ মাত্রই অর্গানিক শুটকি পছন্দ করেন। আমরা আশাবাদী, প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও আমরা আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারব। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রশিদুল হক বলেন, আমি তিন যুবকের অর্গ্যানিক শুঁটকি উৎপাদনের কার্যক্রম হাতে নেয়ায় অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। আমি নিজে কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছি। আশাকরি পরিকল্পনা মাফিক এগুলে উদ্যোক্তারা সফল হবেই।