অমল বোস

36

 

অমল বোস ১৯৪৩ সালে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ষাটের দশকের প্রথম থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। সেই সুবাদে ঢাকাতেই তিনি জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ছিল তাঁর স্ত্রী- স্বাতী বোস, একমাত্র মেয়ে- মন্দিরা বোস ও মেয়ের জামাই- ইন্দ্রজিৎ সরকার। জনপ্রিয় এ অভিনেতা পেশাগত জীবনে জুট মিলস্‌ কর্পোরেশনের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মঞ্চ, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে ছিল তার উজ্জ্বল পদচারণা। সংক্ষেপে তার অভিনয় জীবনের উল্লেখযোগ্য কাজগুলো তুলে ধরা হল। ১৯৬০-এর দশকে অমল বোস তার অভিনয় জীবন শুরু করেন মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে। তিনি ১৯৬৩ সালে থেকে ঢাকা ক্লাব থিয়েটার-এ মঞ্চ নাটকে কাজ করেছেন। নুরুল মোমেনের নাটক আলো ছায়া তার নির্দেশনায় দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। সেই সময় তিনি অবসর, সপ্তরূপা, শৈবাল ও রংধনু নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৬৬ সালে ‘রাজা সন্ন্যাসী’ ছবিতে অভিনয় করে চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেছিলেন তিনি। এরপর ‘তিনি নীল আকাশের নীচে’, ‘শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ’ সহ বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি একটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন অমল বোস। অভিনয়ের পাশাপাশি সত্তরের দশকে ‘কেন এমন হয়’ নামের ছবিটি পরিচালনা করেন তিনি। ২০০৪ সালে মতিন রহমান পরিচালিত ‘রং নাম্বার’ এবং মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘কুসুম কুসুম প্রেম’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন।
এছাড়াও, বিশিষ্ট পরিচালক ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত পরিচালিত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি’র ‘নানা-নাতি’ পর্বে অমল বোসের নানা ও মোহাম্মদ শওকত আলী তালুকদারের নাতি চরিত্রটি বহুল আলোচিত হয়। সেই থেকে তিনি নানা নামেই জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং প্রসিদ্ধ হন। রাজা সন্ন্যাসী, নীল আকাশের নিচে, মহুয়া, সোনালি আকাশ, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, গুনাই বিবি, রাজলহ্ম¥ী শ্রীকান্ত, অবিচার, আজকের প্রতিবাদ, আমি সেই মেয়ে, তোমাকে চাই, অজান্তে, মন মানে না, কাজের মেয়ে, আমি তোমারী, তুমি শুধু তুমি, সন্তান যখন শত্রু, বিয়ের ফুল, তোমার জন্য পাগল, মিলন হবে কতো দিনে, ক্ষেপা বাসু, মন, ভালবাসা কারে কয়, হঠাৎ বৃষ্টি, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ, মায়ের সম্মান, রং নাম্বার, কুসুম কুসুম প্রেম সহ শতাধিক সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছেন। অমল বোস তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নব্বইয়ের দশকে পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম নির্মিত ‘আজকের প্রতিবাদ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারিতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হৃদরোগজনিত কারণে অমল বোসের মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র: ইন্টারনেট