অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

7

ড. অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞান প্রচারক। কলকাতার পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা-অধিকর্তা।
অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১ লা ফেব্রæয়ারি বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বাগনানের মুগকল্যাণ গ্রামে। পিতা গ্রামের এক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। প্রাথমিক পড়াশোনা গ্রামের স্কুলে। বিদ্যালয়ের পাঠ মুগকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে। তবে ইন্টারমিডিয়েট, স্নাতক আর স্নাতকোত্তর পর্বের পড়াশোনা শেষ করেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলিত গণিতে এমএসসি – করার সময় স্পেশাল পেপার হিসাবে নিয়েছিলেন অ্যাস্ট্রোনমি আর সেটা পড়াতেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকারের পিতা বিষ্ণু বাসুদেব নারলিকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাশ করার পরই বেনারসের স্থানীয় ডিএভি কলেজে অঙ্কের অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এরপর ১৯৫৬ সালে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ‘নটিক্যাল অ্যালম্যানাক ইউনিটে’ যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি এই সংস্থার সমস্তদায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘ ১২ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সংস্থাটিকে ১৯৮০ স¤প্রসারিত করেন এবং নতুন নামে এক আন্তর্জাতিক গবেষণাগার – ‘পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার’ পরিণত করেন। তিনি হন প্রথম অধিকর্তা। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রæয়ারি সরকারি কর্মক্ষেত্র থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নেওয়ার পর ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার এম. পি. বিড়লা তারামÐল যোগ দেন। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে বিড়লা তারামÐলের নবকলেবরে উদ্বোধনের পর মহাকাশকে দর্শকদের সামনে হাজির করার নতুন প্রকল্পে তাঁর অবদান আছে। সাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানসচেতনতা প্রসারে অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। সারা জীবন নিরলস পরিশ্রম করেছেন। প্রথমে টেলিস্কোপ হাতে, পরের সøাইড সহযোগে চলে যেতেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো সাধারণকে বোঝাতে। একই সাথে তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রের নামে কুসংস্কার ও অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধেসবসময় মুখর হতেন। সহজ৭ সরল ভাষায় জ্যোতিষশাস্ত্রের ভ্রান্ত দিকগুলো তুলে ধরতেন। বেতার ও দূরদর্শনের অসংখ্য জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞান সচেতনতার কাজ করে গেছেন।তার ২২৫ টিরও বেশি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে প্রবন্ধের সংখ্যা ২৫০০এর বেশি। ইংরেজিতে তিনটি ও বাংলায় পাঁচটি প্রকাশিত বই রয়েছে তার। বাংলায় প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল –
* ধূমকেতু রহস্য ও হ্যালি * জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিবিজ্ঞানী * জ্যোতিষ কি আদৌ বিজ্ঞান
১৯৯৫ সালে ভারত সরকার অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ‘সম্মানিত করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ‘গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য ‘স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করে। ওই বছরই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ডিএসসি উপাধিতে ভূষিত করে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্যগুলো বাংলায় লেখা এবং সেগুলো ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এই অসামান্য অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২ সালে তাঁকে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ‘জগত্তারিণী’ স্বর্ণপদকে সম্মানিত করে।
* প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাষ্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের এফিমারাইউস কমিশনে তিনি একমাত্র নির্বাচিত ভারতীয় সদস্য ছিলেন।
* রয়্যাল অ্যাষ্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ফেলো।
* ব্রিটিশ অ্যাষ্ট্রোনমিক্যাল-এ নির্বাচিত সদস্য।
* আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা সংক্রান্ত সম্মেলনে যেসব দেশ থেকে তিনি আমন্ত্রন পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলি হল- আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, বেলজিয়াম, জাপান, চিন, ও কোরিয়া। সম্মেলনগুলিতে তিনি যেসব গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন সেগুলি উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল।
* পশ্চিমবঙ্গ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির ফেলো।
অধ্যাপক অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে জুন সোমবার রাত আটটায় বার্ধক্যজনিত কারণে কলকাতায় পপরলোক গমন করেন। সূত্র : উইকিপিডিয়া