অভিযানে নামলেই দোকানপাট বন্ধ!

94

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওষুধের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি বাজার নগরীর হাজারী গলিতে ভেজাল বিরোধী অভিযানের খবরে সেখানকার ২০টি মার্কেটের ৯৮ শতাংশ দোকান বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। দোকান বন্ধ দেখে অভিযানে আসা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হাজারী গলিতে অবস্থান নেন। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দুটি গোডাউনের তালা ভেঙ্গে ৩০ লাখ টাকার অধিক মূল্যের অনুমোদনহীন ওষুধ জব্দ করে প্রশাসন। যেখানে ৩০ থেকে ৪০ ধরনের নকল, ভেজাল ও অনুমোদনহীন বিদেশি ওষুধ রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে অভিযান শেষ হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্টরা হাজারী গলিতে অভিযানে যান। খবর পেয়ে সেখানকার ২০ মার্কেটের ৯৮ শতাংশ ব্যবসায়ী নিজ নিজ দোকান বন্ধ করে সটকে পড়েন। এসময় অলিগলিতে শত শত মানুষের ভিড় জমে। কে ব্যবসায়ী আর কে পথচারী কিংবা ক্রেতা চেনা মুশকিল হয়ে পড়ে। প্রশাসনের লোকজন একটি মার্কেটের বেশকটি ওষুধের দোকান খোলা পেয়ে অভিযান চালায়। সেখানে তিনটি দোকানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে বেশিরভাগ দোকান ও গোডাউন বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যাওয়ায় বেকাদায় পড়ে যায় অভিযানকারী দল। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাজারী গলির বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে নিজ নিজ দোকান খোলা জন্য অনুরোধ করেন। এসময় তাকে বলতে শোনা গেছে, আমি আপনাদের প্রতি কোনো ধরনের জুলুম করবো না। আপনারা আমাকে দায়িত্ব পালন করতে দিন। কিন্তু তার ডাকে কেউ সাড়া দেননি। এভাবে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করে তিনি কোনো দোকানে প্রবেশ করতে না পেরে রাস্তায় অবস্থান নেন। এরপর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দুটি গোডাউনের তালা ভেঙ্গে ৩০ লাখের অধিক মূল্যের অনুমোদনহীন, নকল, ভেজাল ও সরকারি ওষুধ জব্দ করে প্রশাসন। জব্দকৃত ওষুধ ধ্বংস কার্যক্রম শেষ করেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা
প্রসঙ্গত, এর আগে হাজারী গলি ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সেখানকার অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীদের নির্মূল করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তুভেজাল ও নকল ওষুধ ব্যবসার সাথে জড়িত শক্তিশালী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় তাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরপর থেকে হাজারী গলিতে ভেজাল ওষুধের মজুদ ও সরবরাহ আগের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে হাজারী গলিতে অভিযানে গেলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে সরে পড়েন। এজন্য আমাদের অভিযান পুরোপুরি বাধাগ্রস্ত হয়। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বাধ্য হয়ে দুটি গোডাউনের তালা ভেঙ্গে ১৫ বস্তা ওষুধ জব্দ করা হয়। যেখানে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকার অধিক মূল্যের অনুমোদনহীন ও বিদেশি ওষুধ রয়েছে। জব্দকৃত ওষুধ যথাযথ ভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। এসময় আরও ৩টি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের সহকারি পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন রাজু আকন্দ বলেন, হাজারী গলিতে অভিযান চালিয়ে ৩০-৪০ আইটেমের অনুমোদনহীন বিদেশি ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। যেখানে ইন্ডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওষুধও রয়েছে। এসব ওষুধ এরইমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে। এসময় আরও তিনটি দেকানকে জরিমানা করা হয়েছে।