অভিযানের খবর শুনলেই ভীড় করে সাধারণ মানুষ

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

সয়াবিন তেলের দাম বাড়বে জেনে আগে থেকেই অনেকে মজুদ করে রেখেছিলেন। মূল্যবৃদ্ধির পর নতুন দামে বিক্রি শুরু করে পূর্বের কেনা তেল। এ অবস্থায় বাজার স্বাভাবিক রাখতে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে বিভিন্ন গুদামে মিলছে তেল মজুদের চিত্র। ভোক্তা অধিকার আইন বিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকায় এসব মজুদদারী ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে জরিমানা।
নগরীতে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চলছে তেল মজুদদারির বিরুদ্ধে। গুদামে মিলছে হাজার হাজার লিটার মজুদ তেলের সন্ধান। পূর্বে কিনে মজুদ করে রাখা এসব তেল বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে। গায়ের দাম মুছে বা স্টিকার তুলে অথবা বোতলজাত তেল ড্রামে ঢেলে বিক্রি করা হচ্ছে নতুন দামে। অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযানকারী দলের সামনে মজুদ তেল পূর্বের মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে সার্বিকভাবে অভিযানে বাজারে তেলের দামের উপর কোনো প্রভাব পড়েনি। গতকাল রোববারও ৬ হাজার ১২০ লিটার সয়াবিন তেল মজুদ রেখে নতুন দামে বিক্রির অপরাধে এক দোকানিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং সংলগ্ন ঈশান মিস্ত্রি হাট এলাকার মেসার্স আসহাব বাণিজ্যালয়ের মালিককে তেল মজুদের দায়ে জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি আগের দামে কেনা সয়াবিন মজুদ রেখেছিল। দাম বাড়ার পর পুরনো তেলগুলো বেশি দামে বিক্রি করছিল। দোকানটি থেকে ৬ হাজার ১২০ লিটার খোলা সোয়াবিন তেলের মজুদ পাওয়া যায়, যার কারণে সেটিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তেলগুলো আগের দামে বিক্রি করা হবে- দোকানির কাছ থেকে এমন লিখিত অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের খবর শুনে সেখানে ভিড় করতে শুরু করে সাধারণ মানুষ। অভিযানের ফলে সেখানে সয়াবিন তেল পুরাতন দামে পাওয়া যাবে এমনটা মনে করে ভিড় করেন অনেকে। তেলের মজুদ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই তেল পূর্বের মূল্যে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তেল কিনতে সাধারণ মানুষের ভিড় থাকায় মুহূর্তের মধ্যে হাজার লিটার তেলও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, তেলের বাজার এককভাবে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। দাম বেড়ে যাবে সেটা খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক আগে থেকে জেনে গেছে। যার কারণে প্রতিটি অভিযানে সয়াবিন তেল মজুদের প্রমাণ মিলছে। ব্যবসায়ীরা লাভ করবেন ঠিক আছে, কিন্তু মজুদদারি করে পণ্যের দাম বাড়ানো অন্যায়। গায়ের মূল্য দেখে পণ্য কেনার প্রতি ভোক্তাদের মনোযোগী হতে হবে। ভোক্তা অধিকারের অভিযান আরো জোরালে করতে পারলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট থেকে কিছুটা হলেও ভোক্তারা নিস্তার পাবে।
সয়াবিন তেলের মজুদদারির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হলেও বাজারে তেলের দামে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। শুধুমাত্র পূর্বের দামে কেনা তেল বর্তমান দামে (বাড়তি দামে) বিক্রি করা হলে তখন সে প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হচ্ছে। বোতলের গায়ের দামের বেশি মূল্য রাখা হলে সেটাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, অভিযানে আমরা যেটা দেখছি, সয়াবিন তেল দাম বাড়ার আগে মজুদ করে রেখেছিলেন দোকানি। এখন দাম বাড়ার পর সেগুলো নতুন দামে বিক্রি করছেন। বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করা ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী অপরাধ। অভিযানের সময় জরিমানা ছাড়াও তাৎক্ষণিকভাবে ভোক্তাদের মাঝে পণ্যগুলো পূর্বের মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রমজান থেকে আমরা অভিযান শুরু করেছিলাম, অভিযান অব্যাহত থাকবে। চট্টগ্রামে প্রায় নিয়মিত আমাদের অভিযান ছিল। অভিযানের প্রভাবে মজুদকৃত তেল বিক্রি হয়েছে। এখন নতুন সয়াবিন তেল বাজারে আসতে শুরু করেছে। তারপরও কোথাও মজুদ করে বাড়তি দাম আদায়ের অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।