অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান নেই রাঙ্গুনিয়ায়

24

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

রাঙ্গুনিয়ায় সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চলছে ছোট বড় ৪টি হাসপাতাল ও ২৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হলেও নিরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। বিশেষজ্ঞ ছাড়াই রিপোর্ট তৈরি এবং চিকিৎসার কারণে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। জীবন ঝুঁকিতে পড়ছেন অনেকেই।
সরকারের হসপিটাল সার্ভিস মেনেজমেন্ট ডিজি হেলথ ওয়েবসাইট এর তথ্যমতে, রাঙ্গুনিয়ায় সরকার অনুমোদিত ছোট-বড় ৪টি হাসপাতাল ও ২৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার দীর্ঘদিন যাবত লাইসেন্স নবায়ন করেনি। অনেকে আবেদন করলেও হালনাগাদ সম্পন্ন না করে এসব প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন। রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারে ডাক্তার পাড়ায় ১০ থেকে ১৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে অধিকাংশেরই সরকারি কোন অনুমতি নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স, ভ্যাট লাইসেন্স, আয়কর, স্থানীয় ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, আরসিও রেডিসন কন্টোল অফিসার সার্টিফিকেট, ফায়ার লাইসেন্স ও ইউনিয়ন পরিষদের সাথে বর্জ্য অপাসারণ চুক্তির লাইসেন্স নেই এসব প্রতিষ্ঠানের।
সরেজমিনে দেখা যায়, দোভাষী বাজারে মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লাইসেন্স আছে ২৩ জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত। এরপর তারা আর নবায়ন করেনি। সেবা প্যাথলজী ২০১৯ সাল পযর্ন্ত লাইসেন্স আছে। রাঙ্গুনিয়া হেলথ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরও ২০১৯ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স রয়েছে।
জানা যায়, প্রতিদিন অবৈধ এসব প্যাথলজীতে ভুল রিপোর্টের কারণে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। প্রশাসনিকভাবে কোন তদারকি না থাকায় দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের। প্যাথলজীর ভুল রিপোর্টের কারণে যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। অবৈধ এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটির রিপোর্টের সাথে আরেকটির কোন মিলই খুঁজে পাওয়া যায়না।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ৩ থেকে ৪টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিধি মোতাবেক চললেও অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার তা অনুসরণ করেনা। প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফাইলে যথাযথভাবে টেকনিশিয়ানের সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে রাখলেও সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তির হদিস পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের অধিকাংশ টেকনিশিয়ান বাইরের প্যাথলজিতে কাজ করলেও হাসপাতালে তারা কোন কাজ করতে চান না। হাসপাতালে আসা রোগীদের বিভিন্ন অজুহাতে ফিরিয়ে দিয়ে প্যাথলজিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত রাঙ্গুনিয়ায় আনাচে-কানাচে নামে-বেনামে প্যাথলজি গড়ে উঠছে। ভুয়া রিপোর্ট ও অনভিজ্ঞ টেকনিশয়ান দ্বারা রোগীর প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার কারণে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন উপজেলার ৪ লক্ষাধিক মানুষ। সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় ঝাড়–দার এবং পিয়ন দিয়ে চলছে প্যাথলজি ল্যাবরেটরিগুলো। সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফাইলে টেকনিশিয়ানের সার্টিফিকেট থাকলেও প্যাথলজিগুলোতে নেই।
চন্দ্রঘোনার ডাক্তার পাড়া খ্যাত দোভাষীবাজারে এসব অবৈধ প্যাথলজী ডাক্তারদের সাথে কমিশন চুক্তিতে রোগীদের থেকে রোগ নির্ণয়ের জন্য ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
চন্দ্রঘোনা দোভাষি বাজারে কর্নসাস প্যাথলজী, চন্দ্রঘোনা প্যাথলজী, ন্যাশনাল প্যাথলজী, হেলথ কেয়ার প্যাথলজী, কর্ণফুলী প্যাথলজী, সেবা প্যাথলজী, শ্যামলী প্যাথলজী, মুন প্যাথলজী, চন্দ্রঘোনা ডায়াবেটিস হাসপাতাল সাইন বোর্ড টাঙিয়ে পুরোদমে চলছে প্যাথলজি ব্যবসা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এসব প্যাথলজীতে শুধু রক্ত মলমুত্র পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য ২ থেকে ৩ জন মহিলা ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। প্যাথলজীর সেবা সম্পর্কে তারা কিছু জানেনা বলে জানান। অনেক প্যাথলজীতে রিপোর্ট আগে থেকেই স্বাক্ষর করা দেখা যায়। দালালের মাধ্যমে এসব প্যাথলজীতে রোগী আনার ব্যবস্থা রয়েছে।
চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজার মা মণি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ জানান, আমরা সরকারি সকল নিদের্শনা মেনে প্যাথলজী চালিয়ে যাচ্ছি। সব কাগজ পত্রাদি বছরে নবায়ন করে আসছি।
চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার প্রবীর খিয়াং জানান, আমাদের হাসপাতালের প্যাথলজীর রিপোর্টের সুনাম বহু বছর আগে থেকে। আমরা সরকারের সকল বিধি মেনে প্যাথলজী চালিয়ে যাচ্ছি।
রাঙ্গুনিয়া হেলথ কেয়ার এন্ড হাসপাতাল এর পরিচালক ডাক্তার রেজাউল করিম জানান, আমরা সরকারের সব বিধি মেনে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছি। আমাদের অত্যাধুনিক ল্যাবে সব পরীক্ষা নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করে আসছি।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেব প্রসাদ চক্রবর্তী জানান, সরকার অনুমোদিত প্যাথলজীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানি জানান, এসব ভুয়া প্যাথলজীর তালিকা পেয়েছি। শিঘরই এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।