অবৈধ সরকার যদি থাকে আমরা কেউ বাঁচব না

19

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির মানববন্ধনে অংশ নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। রাস্তা-ঘাটে, পথে-মাঠে, সমাবেশে প্রত্যেক জায়গায় আজ একটা প্রশ্ন এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে কবে বিদায় দিবেন? আমরা নিশ্বাস ফেলতে পারছি না। আরো কিছুদিন এ অবৈধ সরকার যদি থাকে আমরা কেউ বাঁচব না। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় প্রতিটি দিন অতিবাহিত করছি, আমাদের মুক্তি দিন। দেশকে মুক্ত করেন। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের ম্যাসেজ। পরিষ্কারভাবে জনগণের সিদ্ধান্ত এবং তারা অতিসত্বর এই সরকারের বিদায় দেখতে চায়। গতকাল শনিবার কাজির দেউড়ি নূর আহমদ সড়কে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরো বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে বিস্ফোরণগুলো হচ্ছে এগুলোকেও তারা রাজনীতিকরণের চেষ্টা করছে। একটা সরকারের আমলে যখন এগুলো ঘটে তখন সে সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ। তারা রাজনীতি করছে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরশাদের পতনের সময় মন্দিরে মন্দিরে আক্রমণ হয়েছিল। স্বৈরাচারেরা যখন পতনের অবস্থানে চলে যায় তখন তারা এ ধরনের কর্মকান্ড করে। তারা আরো করবে। কারণ আওয়ামী লীগের কোনো রাজনীতি নেই। এ দলটি রাজনৈতিকভাবে দৈন্যদশায় পতিত হয়েছে। দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার ষড়যন্ত্রে মেতেছে।
নির্বাচনে যারা ভোট চুরিতে জড়িত তাদের তালিকা করা হচ্ছে জানিয়ে আমির খসরু বলেন, সারাবিশ্বের দৃষ্টি বাংলাদেশের দিকে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দিকে। দৃষ্টি হচ্ছে মানবাধিকারের দিকে, দৃষ্টি হচ্ছে এদেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচারের দিকে, দৃষ্টি হচ্ছে বাকস্বাধীনতার পক্ষে, মানুষের জীবনের নিরাপত্তার দিকে। বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে আছে। আর এক শতাংশের নিচের মানুষ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এই সরকার লক্ষ কোটি টাকা লোপাট করেছে, বিদেশে পাচার করেছে, এ টাকা ফেরত দিতে হবে। আর যারা আওয়ামী লীগের সাথে ভোট চুরিতে লিপ্ত থাকবেন, জড়িত থাকবেন সবার একটি তালিকা করা হচ্ছে।
আমীর খসরু বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশের ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা আইন করেছে এ নির্বাচনে ভোট চুরির সাথে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আসবে। এটা তো বাইরে থেকে আসবে, ভেতর থেকে তাদের বিচার হবে। ওয়ান ইলেভেনে তাদের যেসব মামলা তারা খারিজ করে দিয়েছে, গত এগারো বছরের গুম, খুনের যে মামলা এগুলোকে একত্রিত করলে আওয়ামী লীগের ৩০০ আসনের মধ্যে একটি আসনেও প্রতিদ্বন্দিতা করার প্রার্থী পাওয়া যাবে না। সবাইকে জেলে যেতে হবে। বিচারের আওতায় আসতে হবে। কেউ ছাড় পাবে না। তাই তাদের বলবো, বুঝিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। আর করিয়া নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। বাংলাদেশের মানুষকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিয়ে চলে যান। ৫০ বছর পর আবার দেখা হবে।
অন্যদিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী ও লুঠেরা সরকার হিসেবে বহিঃবিশ্বে আওয়ামী লীগ পরিচিতি পেয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই কর্তৃত্ববাদী সরকার মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণ করেছে। এই দুঃসহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে জোরদার গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি নিদর্লীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আবদুল্লাহ আল নোমান আরো বলেন, যুগে যুগে স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, জনগণ বিজয়ী হয়েছে। চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও এই ধারাবাহিকতার কোনো ব্যতিক্রম হবে না। আমরা অবশ্যই এই আন্দালনে জয় লাভ করবো। সরকার কখনো ২০১৮ সালের মত রাতের ভোটে, কখনো ২০১৪ সালের মত বিনাভোটে আবার কখনো ব্রাহ্মণ বাড়িয়ার উপ নির্বাচনের মতো সাত্তার মার্কা পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার ধারাবাহিকতা রক্ষ করার পথ খুঁজছে উল্লেখ করে নোমান বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না এবং কোনো পাতানো নির্বাচন বাংলাদেশে আর হবে না। দমন-পীড়ন যত বাড়বে আন্দোলন ততবেশী বেগবান হবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা এনামুল হক, ইদ্রিস মিয়া, ইফতেখার মহসীন, মোশারফ হোসেন, নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, এস.এম. মামুন, নাজমুল মোস্তফা আমিন, মুজিবুর রহমান, মঞ্জুর উদ্দিন চৌধুরী, খোরশেদ আলম, এডভোকেট ফোরকান, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, নুরুল ইসলাম সওদাগর, হাজী ইসহাক, মাস্টার লোকমান, হামিদুল হক মান্নান, হুমায়ুন কবির আনসার, আবু নিপার, আবুল কালাম আবু, নুরুল কবির, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজগর, মহিলা দল নেত্রী জান্নাতুন নাইম রিকু, ডা. মহসীন খান তরুণ, মঞ্জুর আলম, মোহাম্মদ মহসীন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন এডভোকেট শওকত ওসমান।
উত্তর জেলা বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থেকে জনগণের অধিকার হরণ করে চলেছে। আওয়ামী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে চলেছে। এই সরকার জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ।
নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ গেইট থেকে আলমাস সিনেমা পর্যন্ত মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, আজকের মানববন্ধনসহ বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের নেতৃত্বে নির্বাচনসহ ১০ দফা আদায়ের আন্দোলনে সবাইকে যোগ দেয়ার আহŸান জানান।
উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক মো. নুরুল আমিন, নুর মোহাম্মদ ও ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক এম এ হালিম, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, আলহাজ ছালাহ উদ্দিন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির সদস্য কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার, এড. আবু তাহের প্রমুখ।
মহানগর বিএনপির মানববন্ধন আব্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কের মূল অংশ থেকে শুরু হওয়া মানববন্ধনে কাজীর দেউড়ি মোড় ও লাভলেইন হয়ে জুবলী রোড় পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে সর্বস্তরের জনসাধারণ অংশ নেন।
মানববন্ধনে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চরম দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। দেশে চরম দুর্নীতি চলছে। এই অবৈধ সরকার দুর্নীতি দুঃশাসনের মাধ্যমে অর্থ লুটপাট করে জনগণের টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশের অর্থনীতি অবনতির মূলে রয়েছে বিনাভোটে নির্বাচিত অবৈধ সরকারের এমপি, মন্ত্রী এবং আমলারা। যার ফলে গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় গ্রেড়ে। এইটি হাইব্রিড সরকারের শাসন ব্যবস্থা। ডিজিটাল বাংলাদেশর কাথা বলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতি করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বলে আর ভোট ডাকাতির চেষ্টা করবেন না। বিএনপি ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষার জন্য রাজপথে আছে। প্রয়োজনে নিজের বুকের তাজা রক্ষ দিয়েও অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নির্বাচন আসলে সরকার সংবিধানের দোহাই দেয়। তারা সেই সংবিধানের দোহাই দেয় যা তারা পরিবর্তন করে নিজের মত করে নিয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তায়ন করেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। অন্যথায় শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন দেশের জনগণ হতে দিবে না। বর্তমানে দেশের সকল প্রতিবন্ধকতা ও অশান্তির মূলে রয়েছে অবৈধ সরকার। সরকারের পতন ছাড়া রাষ্ট্র মেরামত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশকে আজ পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। চলমান আন্দোলন সংগ্রামকে আরো জোরদার করে দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
যুগ্ম আহব্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক আলহাজ এম এ আজিজ, যুগ্ম আহব্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, আবদুল মান্নান, আহব্বায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন জিয়া, হারুন জামান, এড. মুফিজুল হক ভূঁইয়া, নিয়াজ মো. খান প্রমুখ।