অবশেষে আলোর মুখ দেখছে আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার

134

অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ‘আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার’ বা ‘ফুড সেফটি ল্যাব’। ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ইউপিইএইচএসডিপি) আওতায় এ খাদ্য পরীক্ষাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পটি এডিবি’র ২৮ কোটি টাকা অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়। জনবল নিয়োগের অর্গানোগ্রাম মন্ত্রণালয় অনুমোদন না করায় গত ৩ বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে চলে আসছে ল্যাবটি। তবে গতকাল ৩৪টি পদ সৃজন সংক্রান্ত বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চসিকের কাছে পত্র পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এতে আগামী ১৫ জানুয়ারি এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি পূর্বদেশকে নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা।
চসিক সূত্র জানায়,নগরীর বিবিরহাটে স্থাপিত ৮ হাজার বর্গফুটের খাদ্য পরীক্ষাগারটিতে স্থাপন করা হয়েছে ৬টি আধুনিক ল্যাব। এরপর খাদ্যের ভেজাল শনাক্ত ও গুণাগুণ নির্ণয়ে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ৮২টি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ল্যাবটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল ল্যাবটিতে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছিল চসিক। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ‘মান রক্ষা করা, প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন ও তার রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা’ এই তিন শর্তে পরীক্ষার অনুমোদন দেয়।
এরপর থেকে ল্যাবে সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শকদের মাধ্যমে সংগৃহীত খাদ্যপণ্য ও খাবার পানিসহ বিভিন্ন পানীয় পরীক্ষামূলক টেস্ট করা হচ্ছে। তবে কোন সাইনিং অথোরিটি না থাকায় টেস্টের পরবর্তী কোন পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
সূত্রটি আরও জানায়, চসিকের পক্ষে ল্যাবটিতে নিয়োগে জনবল কাঠামোর একটি অর্গানোগ্রাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই অর্গানোগ্রামে পরিচালকসহ ২৩ পদে ৩৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুমোদন চাওয়া হয়। এ অর্গানোগ্রামের অনুমোদন না মিললেও ‘ইউপিইএইচএসডিপি’ প্রজেক্টের বিপরীতে ইতোমধ্যে পরিচালক ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অন্য পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে পরিচালকসহ আরও গুরুত্বপূণ পদ খালি থাকায় এতদিন আলোর মুখ দেখেনি ল্যাবটি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ল্যাবটি এখনও চসিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। বর্তমানে ল্যাবটিতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রজেক্টের অধীনে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের পরীক্ষা করা হচ্ছে। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু অর্গানোগ্রামের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। অনুমোদন পাওয়া গেলে ল্যাবটির মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
অবশ্য চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী পূর্বদেশকে বলেন, আগামী জুন পর্যন্ত প্রজেক্টের অধীনে ল্যাবটি পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালিত হবে। তবে চসিকের চাওয়া অর্গানোগ্রাম অনুমোদন না হলে কোন কাজে আসবে না ল্যাবটি। তাই অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী জনবল নিয়োগ খুবই জরুরি। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা সভা হবে। তারপর অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ছাড় পেলে সিটি কর্পোরেশন এখানে জনবল নিয়োগ করতে পারবে। তাহলে ল্যাবটি নগরীর জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট আশিষ কুমার দাশ বলেন, আমরা প্রতি মাসেই বাজার থেকে সংগৃহীত ১৫টি খাদ্যপণ্যের পরীক্ষা করছি। সেগুলোর রিপোর্ট ঢাকায় প্রেরণ করছি। সিটি কর্পোরেশনের জনবল নিয়োগ না হওয়ায় আমাদের কাজ টেস্টেই (পরীক্ষা) সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে। নগরীতে যতগুলো রেস্টুরেন্ট বা খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোকে সিটি কর্পোরেশন থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু কোন ল্যাব না থাকায় তাদের ফুড কোয়ালিটি যাচাই করার সিটি কর্পোরেশনের কোন সুযোগ নেই। ল্যাবটি কাজ শুরু করতে পারলে এবং সিটি কর্পোরেশন চাইলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের খাদ্য নমুন ও মান পরীক্ষাপূর্বক লাইসেন্স দিতে পারবে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে অনেক খাদ্য রপ্তানি ও চট্টগ্রামে অনেক খাদ্য আমদানি হয়। সেগুলোর মানও যাচাই করতে পারবে ল্যাবটি। এতে জনস্বাস্থ্য রক্ষা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি মোটা অংকের রাজস্ব অর্জন করতে পারবে সিটি কর্পোরেশন।
চসিকের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহ বলেন, আমরা অর্গানোগ্রামের অনুমোদন চেয়েছি অনেক আগে। সেটি অনুমোদন হলে আমরা জনবল নিয়োগ করতে পারবো। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যালোচনা সভার পর বুঝতে পারবো কি হতে যাচ্ছে। তবে ল্যাবটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে, এটা অনুমান করতে পারছি।