অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১)

56

 

চিত্রশিল্পী, সাহিত্যিক। ১৮৭১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তাঁর জন্ম। পিতা গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৭৬ সালে নর্মাল স্কুলে অবনীন্দ্রনাথের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। তারপর কিছুদিন তিনি সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন করেন, কিন্তু এন্ট্রান্স পরীক্ষার পূর্বেই কলেজ ত্যাগ করেন (১৮৯০)। পরে তিনি নিজ চেষ্টায় ইংরেজি, ফরাসি, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা-সাহিত্য এবং সঙ্গীতে দক্ষতা অর্জন করেন।
ছবি আঁকার প্রতি অবনীন্দ্রনাথের আগ্রহ ছিল প্রবল। প্রথমে পাশ্চাত্য এবং পরে প্রাচ্য রীতিতে তিনি ছবি আঁকেন। ইতালিয়ান গিলার্ডি, ইংরেজ পামার, জাপানি টাইকান প্রমুখ চিত্রশিল্পীর নিকট তিনি চিত্রাঙ্কন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। তবে ভারতীয় চিত্ররীতিতেই তিনি সমধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন এবং তাঁর হাতেই ভারতীয় শিল্পকলা নতুন প্রাণ পায়। ‘নির্বাসিত যক্ষ’, ‘ভারতমাতা’ ও ‘সাজাহানের মৃত্যু’ তাঁর অমর শিল্পকীর্তি। Indian Society of Oriental Art (১৯০৭) তাঁরই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। লন্ডন, প্যারিস ও জাপানে তাঁর চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয়।
অবনীন্দ্রনাথ ১৮৯৮ সালে কলকাতার আর্ট কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘকাল এ পদে দায়িত্ব পালনের পর ১৯২১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বাগেশ্রী অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং ১৯৪২ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলন, বিদেশি পোশাক বর্জন, রাখিবন্ধন উৎসব, স্বদেশী শিল্পের উন্নয়ন ইত্যাদি জাতীয় কর্মকান্ডে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
চিত্রাঙ্কনের মতো সাহিত্যচর্চায়ও অবনীন্দ্রনাথ খ্যাতি অর্জন করেন। বিশেষত শিল্পকলা সম্পর্কে তাঁর সমালোচনা ছিল অতি উন্নত মানের। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি: শকুন্তলা (১৮৯৫), ক্ষীরের পুতুল (১৮৯৬), রাজকাহিনী ও ভারতশিল্প (১৯০৯), বাংলার ব্রত (১৯১৯), খাজাঞ্চির খাতা ও প্রিয়দর্শিকা (১৯২১), চিত্রাক্ষর (১৯২৯), বাগেশ্বরী শিল্প (১৯৪১), জোড়াসাঁকোর ধারে (১৯৪৪), সহজ চিত্রশিক্ষা (১৯৪৬), ৪ খন্ডে প্রকাশিত অগ্রন্থিত অনেক গল্প (১৯৪৬), আপনকথা (১৯৪৬), ভারতশিল্পের ষড়ঙ্গ (১৯৪৭), আলোর ফুলকি (১৯৪৭), ভারতশিল্পে মূর্তি (১৯৪৭), শিল্পায়ন (১৯৫৫), কিশোর সঞ্চয়ন (১৯৬০), বাদশাহী গল্প (১৯৭৬) ইত্যাদি। ১৯৫১ সালের ৫ ডিসেম্বর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। সূত্র: বাঙলাপিডিয়া