অপ্রতিরোধ্য সড়ক দুর্ঘটনা! জরুরি আইনের কঠোর প্রয়োগ

40

আমরা সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের গৃহীত আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর যেন দীর্ঘ না হয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।
প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত দুই দিনে চট্টগ্রামে যে দুটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তাতে শিশুসহ চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সারা দেশে এ দুইদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৯ জন। মূলত এমন কোনো দিন নেই যে, সংবাদমাধ্যমে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর থাকে না। সড়কে এরকম প্রাণহানি মর্মান্তিক, অনাকাক্সিক্ষত। জানা গেছে, গত শুক্রবার চট্টগ্রাম আমবাগান এলাকায় নিজের মোটর সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পথে পেছন থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে মোটর সাইকেলের আরোহী সাথে সাথে মৃত্যবরণ করেন। নিহত ব্যক্তি একজন প্রকৌশলী, জাইকার অধীনে ওয়াসার চলমান প্রজেক্ট-এ কাজ করেন। শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর সীমানা পেরিয়ে ফৌজদারহাট মোড় অতিক্রম করতেই একটি লরি পেছন থেকে ধাক্কা দেয় চলন্ত কারকে। সাথে সাথেই পথেই ঝরে পড়ে বাপ মেয়ের তিনটি তরতাজা প্রাণ। অবকাশকালীন মাস এ ডিসেম্বরে স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে ঢাকা থেকে বেড়াতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনদিনের বিনোদন শেষ করে ঢাকায় পাড়ি দেয়ার পথে মর্মান্তি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বাবা ও দুই মেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়, হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে। মর্মান্তিক এ দুই দুর্ঘটনাসহ দুইদিনে নিহত ১৯জনই ছিল আমাদের গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ। তাদের মেধা,মনন, চিন্তা ও কর্মের মধ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণই ছিল নিঃসন্দেহে। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর সরকারের শীতিল মনোভাব গাড়ির চালকদের বেপরোয়া মনোভাব থেকে মুক্ত করতে পারে নি। এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে জনগণের কাছে। সরকার দেশবাসীকে আশাবাদী করে তুলেছিল ‘নিরাপদ সড়ক আইন ২০১৮’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে এ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করলেও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ক্রমান্বয়ে তা থেকে সরে আসছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আমরা মনে করি, সরকার বিষয়টি গভীর মনোযোগের সাথে আমলে নেবে এবং প্রণীত আইন বাস্তবায়নে যেন কোনরকম গাফিলতি না হয়, সেইদিকে লক্ষ্য রাখবে। আমরা আশা করি, সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ও আইনের প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতাই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব । তবে জনসচেতনতার বিষয়টিও আমাদের গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কে সড়ক নিরাপত্তা দশক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ সময়ের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার বিষয়ে সদস্য দেশগুলো একমতও হয়েছে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতে (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু দেশে সড়ক নিরাপত্তায় দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। সড়ক নিরাপত্তায় যুক্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের ইতোপূর্বে নেয়া পরিকল্পনাগুলো ছিল গতানুগতিক। এর মাধ্যমে কী অর্জিত হয়েছে আর কী অর্জিত হয়নি বা কী অর্জন করা প্রয়োজন তার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর দেশে প্রথমবারের মতো ‘সাবধানে চালাবো গাড়ি, নিরাপদে ফিরবো বাড়ি ‘প্রতিপাদ্যে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ উদযাপন করা হয়েছে। এ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছিলেন, দেশ ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্যে অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নাধিন আছে। আমরা সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর যেন দীর্ঘ না হয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।