অপরিকল্পিত নগরায়নের মাশুল দিচ্ছে নগরবাসী

98

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, শত বছর আগের গড়ে ওঠে এই নগর। অতীত থেকেই এই নগর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে আসছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের খেসারত এখন আমাদের সকলকেই দিতে হচ্ছে। তবে আমি চাই, নগরবাসীকে একটি সুন্দর, সুস্থ ও গ্রিন-ক্লিন সিটি উপহার দিতে। এ লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আন্দরকিল্লার কেবি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে চসিকের গত চার বছরের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনী ইশতেহার মাথায় রেখে আধুনিক নগরের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন বলে জানান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
তিনি বলেন, নগরের ১ হাজার ৩৭৫টি খোলা ডাস্টবিন থেকে ৮২৫টি অপসারণ করা হয়েছে। নগরবাসীর সংখ্যা বেড়েছে বর্জ্য বেড়েছে।জনদুর্ভোগ লাঘবে দিনের বেলা থেকে রাতে বর্জ্য অপসারণ করছি। আমরা ৯ লাখ বিন বিতরণ করেছি। ১৯৭২ জন পরিচ্ছন্ন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছি। জনগণকে সচেতন করতে সক্রিয়, বলিষ্ঠ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে গণমাধ্যম। আমাদের সফল হতেই হবে। সত্যিকারের ক্লিন সিটি করতে হবে।
১২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ ফুট প্রস্থ, ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননের কাজ চলছে। ভূমি মালিকদের তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।
এস আলম গ্রæপের মাধ্যমে নগরে গণপরিবহন সংকট কাটাতে তিন রঙের ১০০ এসি বাস চালু করা হচ্ছে। আশা করি জানুয়ারিতে ৩ রুটে এসব বাস চালু হবে। স্টপেজের জায়গা চিহ্নিত করা হচ্ছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ণের কুফল নগরবাসী ভোগ করছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিমানবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নিয়েছি। এখানে বন্দরের জমি লিজ নিয়ে অনেক জ্বালানি স্থাপনা ও তৈলাধার গড়ে তোলা হয়েছে। যা সরানো কঠিন কাজ। সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত দুই পাশে ড্রেন তৈরি করা হচ্ছে। জাইকার অর্থায়ন ও ডিজাইনে হচ্ছে পোর্ট কানেকটিং ও এক্সেস রোডের কাজ। নিমতলা থেকে অলংকার পর্যন্ত ৬ দশমিক ২ কিমি পোর্ট কানেকটিং সড়ক। এক্সেস রোডের কাজে এলইডি লাইটিং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরাকান সড়কের কাজ ১২টি লটে চলমান আছে। কম সময়ে ডিসেম্বরের মধ্যেছ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
শুষ্ক মৌসুম কাজ করার উপযুক্ত সময়। এ সময়টা কাজে লাগাতে সচেষ্ট আমরা। জাইকা নিজস্ব স্টাইলে কাজ করে। যতক্ষণ কাজ চলে জাইকার লোক থাকে। পোর্ট কানেকটিং সড়কের কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগবে। কাজগুলো নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ৫৬০ কিমি পিচঢালা সড়ক ৮১৬ কিমিতে, ২২২ কিমি কনক্রিট সড়ক ৩২৮ কিমিতে, ৬৮৩ দশমিক ৫৫ কিমি পাকা নালা ৯৪৬ দশমিক ৫ কিমিতে, ১৪৬ দশমিক ০৭ কিমি ফুটপাত ২৮৭ কিমিতে, ৮০ দশমিক ২০ কিমি প্রতিরোধ দেয়াল ৯৯ কিমিতে, ১৮৮টি ব্রিজ ২১৯টিতে, গভীর নলকূপ ৩৭২টি থেকে ৪২৩টিতে, কালভার্ট ৯৩২টি থেকে ১ হাজার ৪৮টিতে উন্নীত করা হয়েছে। ৭৮ দশমিক ৫৩ কিমি ব্রিক সলিং ৫২ দশমিক ৯৩ কিমি কমিয়ে ২৫ দশমিক ৬ কিমিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি জানান, নগরের ৯৫২ কিমি সড়ক বা ৮০ ভাগ আলোকায়নের আওতায় আনা হয়েছে। ১ হাজার ৩০৪ কিমি সড়কে ৬৪ হাজার ৬৮৩টি এলইডি বাতি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এনার্জি বাতি ১১ হাজার ২৩টি থেকে ১৫ হাজার ২৭৩টিতে, এলইডি বাতি ১০০টি থেকে ৪ হাজার ৪০টিতে, মেটাল হ্যালাইড ১৭৫টি থেকে ১৯১টিতে উন্নীত করা হয়েছে। ৩৩ হাজার ২৯৪টি টিউব লাইট কমিয়ে ৩০ হাজার ৩৪৫টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিউ মার্কেট মোড়ে হকাররা ক্রেতা পাচ্ছেন বলে বসছে। হকার নেতাদের সঙ্গে ১০০ ঘণ্টা সভা করেছি। পুলিশের অভাবে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সব সময় অভিযান চালাতে পারেন না।
কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, সেনাবাহিনী জায়গাটি শিশুপার্ক করার জন্য চসিককে দিয়েছিল। শিশুপার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চসিকের চুক্তিটা নবায়নযোগ্য। তাদের আধুনিক রাইডের শর্ত দিয়েছি। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তারা আধুনিক রাইড সংগ্রহ করছে। আগ্রাবাদ শিশুপার্ক নিয়ে মামলা চলছে। এ ছাড়া সাড়ে তিনশ’ মামলা চলছে বিভিন্ন বিষয়ে।
সত্য, নগরের জন্য কল্যাণকর, অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহব্বান জানান মেয়র।
এ সময় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব আবুুল হাশেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কাউন্সিলরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবিদা আজাদ।