অপরাধ জগতে শিশুরা বলির পাঁঠা দ্রুত লাগাম টানা জরুরি

24

 

দেশের চলমান অপরাধ প্রবণতা সিনেমার কাহিনীকেও হার মানাচ্ছে। নিয়মিত পত্রিকার পাতায় এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিচিত্র সব অপরাধের খবর চাউর হচ্ছে। পাশবিক ধর্ষণ কান্ড শিশুরা রেহাই পাচ্ছে না। অস্বাভাবিক কামনা বাসনা সমাজে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়- সামাজিক অপরাধ ধরন পাল্টিয়ে ধ্বংস করছে শিশুদের জীবন। শিশুরা হল আগামীর কাÐারি। অথচ মা-বাবার ব্যক্তিগত বিকৃত রুচির বলি হচ্ছে শিশু সন্তানরা। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় অন্ধকার অসভ্য যুগের যে কর্মকাÐের ইতিহাস রয়েছে তাকে হার মানাচ্ছে বর্তমান সামাজিক – পারিবারিক অপরাধ। নানা রকম অপরাধের বিপরীতে অপরাধি ধরা পড়ছে। কিন্তু দেশের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতায় দ্রুত বিচিত্রসব অপরাধের বিচার হচ্ছে না। আবার আইনের ফাঁকফোঁকরে অনেক অপরাধি পারও পেয়ে যেতে দেখা যায়। ব্রিটিশ আইনের দুর্বলতা অপরাধ জগতের পরিধি ও প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ কতে ব্যর্থ হচ্ছে। আইন এবং বর্তমান বিচার ব্যবস্থা যাই হোক, দেশে নৈতিক শিক্ষার অভাবজনিত কুফলে নানা রকম ধরন পাল্টিয়ে অস্বাভাবিক ইত্যাকার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে সমাজে। দেশে মূল্যবোধশিক্ষার জায়গাটা খুবই দুর্বল বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। শিশুশিক্ষা তথা দেশের বুনিয়াদি শিক্ষায় সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টি হচ্ছে না। অন্যান্য জীবের সাথে মানুষের যে পার্থক্য তা শিক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ করে একজন মানব সন্তান প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার কৌশলগত শিক্ষা বর্তমানে নেই। বর্তমানে শিক্ষার উদ্দেশ্য প্রায় জৈবিক চাহিদা পূরণ তথা চাকরি, সার্টিফিকেট কিংবা অস্বিত্ববাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবার দিকেই ঝুঁকে আছে। নৈতিকশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানবজাতির জন্য নিজের ক্ষতি মেনে নেয়া, ত্যাগস্বীকার করা, অন্যের উপকারে নিজের স্বার্থ ত্যাগকরা এবং সার্বিক মানবের কল্যাণে নিজেকে উপস্থাপনের শিক্ষা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা হতে পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ নিজের বৈষয়িক লাভ ক্ষতি নিয়ে বেশি ব্যস্ত। দৈহিক ও জৈবিক চাহিদা ব্যাপকতর হবার কারণে নীতি নৈতিকতা ভ‚লুণ্ঠিত হচ্ছে সমাজে এবং পরিবারে। দৈহিক ও জৈবিক সুখ লাভের প্রবণতা মারমুখি হবার কারণে দেশের নরনারী বিচিত্রভাবে অপরাধ জগতের বাসিন্দা হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। যার ফলে সমাজে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিম ব্যক্তিস্বার্থ, অনাচার, অবিচার, সীমাছাড়িয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত লালসা চরিতার্থ করতে গিয়ে শিশুকন্যা ধর্ষণ, নিজের পরকীয়াকে নিষ্কন্টক করতে মা-বাবা নিজের রক্ত থেকে প্রসবিত শিশুহত্যা করছে। বিষ প্রয়োগ করে আপন শিশুকে মারছে। যে প্রবণতা পশুর মধ্যেও দেখা যায় না। কেউ স্বামীকে ফাঁসাতে সন্তানকে হত্যা করছে, আবার কেউ স্ত্রীকে ফাঁসাতে একই কান্ড ঘটাচ্ছে। স্ত্রীকে দল বেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করে নিজের ভাইকে ফাঁসানোর চেষ্ট করতেও দেখা যাচ্ছে। মাদকের কুফল, অস্ত্রের জোর, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সামাজিক প্রতিহিংসার কারণেও বলি হচ্ছে শিশুসন্তান। যার কারণে দেশের বহু শিশু সন্তান অকালে ঝরে যাচ্ছে। এ অবস্থা দেশে আর কত চলবে আমরা জানি না।
দেশে নৈতিক, মানবিক, সৎ নাগরিক সৃষ্টির লক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। সার্টিফিকেট তৈরির শিক্ষা হতে যোগ্য এবং সৎ নাগরিক সৃষ্টি সম্ভব নয়। ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা বাধ্যকতামূলক করা ছাড়া নৈতিক নাগরিক সৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না। আইন এবং আইনের শাস্তি কোন কালে সমাজকে পরিবর্তন করতে পারেনি। নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা ছাড়া বিশেষায়িত শিক্ষাও জাতির কল্যাণ বয়ে আনে না। ডাক্তার, প্রকৌশলি হতে শুরু করে মানবিক নৈতিক শিক্ষাহীন ব্যক্তিরা মানবতার ক্ষতিই করে থাকে। তাদের বিশেষায়িত শিক্ষা সমাজে অস্থিতিশীল পরিবেশের জন্ম দিতেও দেখা যায়, যদি না তাদের বিশেষায়িত শিক্ষার সাথে নৈতিক মুল্যবোধের সংযোগ না থাকে। সুতরাং দেশের শিশুদের উপর অপরাধ জগতের কালো থাবা এবং সার্বিক অপরাধ হতে দেশের নাগরিকদের রক্ষায় দেশে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার উপর জোর প্রদান করা জরুরি। নৈতিক ও দায়বদ্ধতাহীন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি অফিসার, বিচারক, প্রশাসন দিয়ে কখনো সমাজে প্রকৃত মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই দেশের শিক্ষা জগৎকে কল্যাণমুখি করতে একমুখি নৈতিক শিক্ষার আওতায় সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।