অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে কক্সবাজারে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে

16

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। এ সমুদ্রসৈকত নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করে। প্রকৃতির অপার দান এ দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের কারণে দেশ বিদেশের হাজারে পর্যটক প্রতিদিন কক্সবাজারে ছুটে যান। সঙ্গতকারণে এটি দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে ব্যাপক অর্থ। সরকার প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সড়ক, বিমান ও রেল যোগাযোগসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছে। কয়েকটি মেগাপ্রকল্পের কাজ প্রয়য শেষ পর্যায়ে। কিন্তু যাদের জন্য কক্সবাজার প্রধান পর্যটন নগরী হয়ে উঠেছে সেই পর্যটকদেও নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে শহরের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে অপরাধীরা টর্চার সেল প্রতিষ্ঠা করেছে। ছোট ছোট বিভিন্ন কটেজে এ সব টর্চারসেলে পর্যটকদের জিম্মি করে টাকা পয়সা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম। তিনি জানান, কক্সবাজার শহরের কলাতলীর কটেজ জোন এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানকালে সাইনবোর্ড ছাড়া শিউলি কটেজ হিসেবে পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠানে গেলে তালাবদ্ধ দেখা যায়। তালা খুলতে বলার পরও না খোলায় তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সংঘবদ্ধ অপরাধীরা বিকল্প একটি পথে পালিয়ে যায়। এ সময় একটি কক্ষে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করা হয় চার জনকে। একইসঙ্গে ওই কক্ষ থেকে নির্যাতন করার নানা উপকরণও জব্দ করা হয়। কক্সবাজারে এমন আরও সাইনবোর্ড বিহীন ২০-৩০টি কটেজ আছে। সংঘবদ্ধ একটি দুর্বৃত্তচক্র এই কটেজগুলোকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তবে এ অপরাধের সাথে জড়িত সন্দেহে আশপাশে অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা যায়। উদ্ধার ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রোববার রাতে কক্সবাজার শহরের আবাসিক কটেজ জোনে কম ভাড়া কক্ষ খুঁজছিলেন তারা। এ সময় দালালরা তাদের এই কটেজে নিয়ে যায়। সেখানে লোকজন ছিল খুবই কম। পুরুষ পাঁচ থেকে ছয়জন আর নারী তিন থেকে চারজন। একপর্যায়ে চারজনকে আটকে নারীদের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তুলে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। হাতিয়ে নেওয়া হয় সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন। পরে আরও টাকার জন্য তাদের ওপর নির্যাতন চালান হয়। এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান , এরকম আরও কয়েকটি কটেজে জিম্মি করে নির্যাতনের তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। গত মাসে কক্সবাজারে বড়াতে এসে ঢাকার এক দম্পতি শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। স্বামীকে বেধে রেখে স্ত্রীকে দর্শনের মত ঘটনাও ঘটেছে এ পর্যটন নগরীতে। ওইসময় কক্সবাজার সৈকতের নিরাপত্তা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বহিনীকে কয়েকদিন নড়েচড়ে বসেতে দেখা যায়, এরপর যে লাউ সেই কদু। পর্যটন নগরীর মত একটি শহরে প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন অপরাধীরা পর্যটকদের হেনস্তা করবে, শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করবে, যৌন নিপীড়ন চালাবে, অর্থকড়ি কেড়ে নিবে আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিলিপ্ত হয়ে থাকবে-তা কোনভাইে মেনে নেয়া যাবেনা। এ অবস্থার অবসান হতে হবে। কারণ এ নগরীর সাথে দেশের ভাবমুর্তি জড়িত। এখানে দেশ-বিদেশের, বিভিন্ন জেলা উপজেলার মানুষ মানসিক প্রশান্তির খুঁজে আসে। যাপিত জীবনের নানা জটঝামেলাকে কয়েকদিন নির্বাসনে দিয়ে হিল্লোল আনন্দে মেতে উঠতেই এখানে মানুষ আসে। কিন্তু প্রশান্তির খুঁজে এসে অশান্তিতে পড়তে হলে, জীবনের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হলে, কেন মানুষ কক্সবাজারে আসবে! এ জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রকৃত বৈধ হোটের মোটেল ব্যবসায়ী ও স্থানীয় অধিবাসীদের সচেতন হতে হবে। আমরা জানি, স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকাংশের আয়ের উৎস পর্যটক। কোন কারণে কক্সবাজারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হলে তবে স্থানীয় অধিবাসী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতিই হবে বেশি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলকে অপরাধ দমনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিকল্প নেই।