অপমৃত্যু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি

12

রোড সেফটির প্রতিবেদন হতে জানা যায় গেল নভেম্বর ২০২২ সড়কে দুর্ঘটনায় অপমৃত্যু হয়েছে ৫৫৪ জনের। সম্প্রতি শিশু ধর্ষণ ও তজ্জনিত মৃত্যুর খবর পত্র-পত্রিকায় বেড়েছে। ধর্ষণ, খুন খারাবি থামছেনা দেশে। বিভিন্ন কারণে অকাল মৃত্যু তথা অপমৃত্যু দেশে বেড়ে গেছে। গুম, হত্যা, ধর্ষণ, সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি দেশে মহামারির চেয়েও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। দেশের মানুষ বিবেক চর্চা, পাপপুণ্য সম্পর্কে সচেতনতা, সমূহ দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু এড়ানোর জন্য যে যার মতো সচেতন হলে অনেকগুলো অপমৃত্যুর ঘটনা নিয়ন্ত্রিত হবে।
দেশের সড়কগুলোতে যানবাহন নানা কারণে মৃত্যুদূতে পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি, চালকের অসতর্কতা লাইসেন্স ছাড়া অদক্ষচালক, গাড়ির দ্রুুতগতি তথা বেপরোয়া গতি, সড়কে অহেতুক দ্রæতগতির প্রতিযোগিতা, জনসাধারণের অসতর্কতা ইত্যাদি দায়ী। অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসতর্কতাই দায়ী। নদীতে, সৈকতে, পুকুরে ডুবে মৃত্যুর জন্য সাঁতার না জানা, বেপরোয়া আবেগ এবং কমবয়সী সাঁতার নাজানা শিশু কিশোরদের অভিভাবকদের অসচেতনতাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী। বর্তমানে শীতকালের আমেজ শুরু হয়েছে, শুষ্ক মৌসুম চলছে। শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাÐের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। তার জন্য আগুন নিয়ে অবহেলা, বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট, অপর্যাপ্ত রাস্তা ঘাট এবং অপরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা অনেকাংশে দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছার বেপরোয়া গতি এবং চালকের অদক্ষতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী। পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায়, বিগত নভেম্বর ২০২২ এর এক মাসে সড়কে যে ৫৫৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে তাতে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার মৃত্যুর হার ৪১.৯০ শতাংশ। দেশে অবৈধ রোজগার যেমন বেড়েছে তার সাথে পাল্লাদিয়ে মোটর সাইকেলের সংখ্যাও বেড়েছে। যার ফলে সড়কে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার মৃত্যুর হারও বেড়েছে। সারা দেশে নভেম্বর মাসে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে ২২৯জন। বাস্তবে আমরা দেখতে পাই মোটর সাইকেল অরোহীরা মোটর সাইকেলকে বিমানগতিতে উড়িয়ে নিতে চায়। চলার পথে মোটর সাইকেল চালকরা কোন যানবাহনকে সমীহ করতে চায় না। দু’চাকার গাড়ি দ্রæতগতিতে চললে যে দুর্ঘটনা ঘটে তাতে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। এমন বিশ^াস মোটর সাইকেল আরোহীরা চিন্তা করে সচেতনভাবে গাড়ি চালালে সড়কে যে পরিমাণ মোটর সাইকেল আরোহী মৃত্যু বরণ করছে তার সংখ্যা অনেকগুণ কমে আসতে বাধ্য।
দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। যার ফলে সড়কে নানা রকম যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সড়কপথে মালামাল পরিবহন বৃদ্ধির কারণে সড়কে ট্রাক, বাস, কার্গোযান ইত্যাদির সংখ্যাও বেড়েছে। নদী পথে মালামাল পরিবহন অনেকখানি কমে গেছে। সড়কপথে দ্রæত পৌঁছার সুবিধা ভোগ করতে ব্যবসায়ীরা পারতপক্ষে নদী বা সমুদ্রপথে মালামাল নিতে চায় না। ফলে সকল সড়কে ছোট বড় গাড়ির চাপ বাড়ছে প্রতি নিয়ত। সড়কে হাজার হাজার গাড়ি চলছে। অনেক ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করে অহেতুক প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। অকালে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। বর্তমানে দেশের সড়ক পরিণত হয়েছে মৃত্যু ফাঁদে। এ অবস্থা হতে পরিত্রাণের প্রধান উপায় হলো জনসচেতনতা এবং সড়ক আইন মেনে চলা। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। আবার জীবন সময়ের মধ্যে আবর্তিত হয়। অনেকে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে জীবনকে সময়ের গতিতে নিক্ষেপ করছে। সময় তারপর জীবনের সময়কে সংক্ষিপ্ত করে দিচ্ছে। অহেতুক তাড়াহুড়া করতে গিয়ে অনেক পথচারি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। চুলা জ¦ালিয়ে ভাত তরকারি রান্নার পর চুলার আগুন না নেভানোর কারণে অনেক অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটছে। আধুনিক যুগে বিদ্যুৎছাড়া জীবনযাত্রা অচল। কিন্তু বৈদ্যুতিক তার সবসময় ঠিকটাক আছে কি না তা পরীক্ষা করে না দেখার কারণেও বহু অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটছে। আমরা যে যেখানে আছি, যেভাবে যে পরিবেশে আছি সেখানে জীবন চলার পথে ধীরেসুস্থে সচেতন হয়ে পথ চললে কিংবা নিরাপদে অবস্থান করতে সচেতনতা অবলম্বন করলে অনেক অপমৃত্যু হতে রক্ষা পেতে পারি।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হবার মূলে মানুষের বিবেক, ধৈর্য্য, নৈতিকতা, মূল্যবোধই প্রধান। উল্লেখ্য মানবিক গুণের প্রতি আমরা সচেতন হলে দেশে সব ধরনের অপমৃত্যু নিয়ন্ত্রণ হবে। এমন ধারণা সকল বিবেকবান মানুষের।